১। আমি আমার বাচ্চা কে খাবার দেয়া শুরু করেছি এখন কি পুরো ডিম টা দেয়া যাবে ?
= শিশুর বয়স ৬ মাস হলে অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি প্রথম ডিমের কুসুম দেয়া যাবে । ভালো ভাবে সেদ্ধ করে চটকে দেয়া যাবে। ডিমের সাদা অংশ এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে এবং হজমে সমস্যা হয় তাই ৮/৯ মাসের পর সাদা অংশ দেয়া যাবে। আর ডিমের কুসুম অপেক্ষাকৃত সহজে হজম হয় তাই শুরু টা শুধু কুসুম দিয়ে হবে।
২। ডিমের সাদা না হলুদ কোন অংশ বেশি পুষ্টিকর?
= ডিমের দুটি অংশ ই পুষ্টিকর এবং দুটাতেই অনেক পুষ্টি উপাদান থাকে। ডিমের কুসুমে রয়েছে ফ্যাট , ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফোলেট , ভিটামিন এ ই ডি কে, DHA এর মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু পুষ্টি উপাদান । আবার অন্যদিকে সাদা অংশ থেকে পাওয়া যাবে ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, সোডিয়াম , প্রোটিন এর মতো পুষ্টি উপাদান গুলো। তাই উভয় অংশ ই প্রয়োজনীয় ও পুষ্টিকর !
৩। ১ টা ডিম থেকে শিশু কতটুকু পুষ্টি পাবে? আমি কি ২-৩ টা ডিম দিতে পারবো শিশু কে?
= একটা শিশুর দৈনিক প্রোটিন এর চাহিদা নির্ভর করে তার দৈহিক ওজনের উপর । ধরেন আপনার শিশুর ওজন ২০ কেজি অর্থাৎ তার প্রোটিনের চাহিদা ২০ গ্রাম থেকে ৩০ গ্রাম । ( ১কেজি ওজনের জন্য প্রোটিনের চাহিদা ১ থেকে ১.৫ গ্রাম হয় শিশুদের জন্য ) এখন আপনি যদি একটা ১০০ গ্রাম ওজনের খাদ্য উপযোগী মুরগির ডিম আপনার শিশুকে দেন তাহলে সেখান থেকে ১৩.৩ গ্রাম প্রোটিন পেয়ে যাবে। আর বাকি থাকলো ধরেন প্রায় ১৭ গ্রাম যা সারাদিনে অন্যান্য খাবার যেমন মাছ/ মাংস/ দুধ থেকেই পেয়ে যাবে। তাহলে দৈনিক আপনার শিশুর জন্য ১ টা ডিম ই যথেষ্ট হয়!
এখন কেউ যদি ২/৩ টি ডিম প্রতিদিন দেন তাহলে কি হবে--- একটা ৫০ গ্রাম ওজনের ডিম থেকে শিশু ৭০ ক্যালরি পাবে। এখন যদি তাকে ৩ টা ডিম দেন তাহলে ২১০ ক্যালরি হলো। এখন এই একটা ডিম থেকেই যদি এতো ক্যালরি পায় তাহলে এর সাথে কোলেস্টেরল ও প্রোটিন ও কিন্তু চাহিদার অতিরিক্ত পাবে। এই বিষয় টা খেয়াল রাখতে হবে আপনার শিশুর জন্য আসলে কয়টা ডিম প্রয়োজন!
৪। ডিম শিশুর জন্য এতো গুরুত্বপূর্ণ কেন???
= ডিম একটা পরিপূর্ণ খাবার। মায়ের দুধে সর্বোচ্চ মানের প্রোটিন ল্যাক্টালবুমিন পাওয়া যায় । আর ডিম হলো ২ য় সবোর্চ্চ মানের প্রোটিন এর উৎস। ডিমের বিকল্প ডিম। ডিমে আছে ফোলেট যা নতুন কোষের পূর্ণজন্ম হতে সহায়তা করে। ডিমে খনিজ উপাদান থাকে যা শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করে। ডিম আয়রনের ভালো উৎস ।
৫। ডিমের কুসুমে থাকা কোলেস্টেরল নাকি ক্ষতিকর কথাটা কি সত্য?
= গবেষণা অনুযায়ী একটা প্রমাণ সাইজের ডিমে (৫৮ গ্রাম) ফ্যাট থাকে ৪.৬ গ্রাম । অর্থাৎ ১ চা চামচের সমান । এর আবার এক চতুর্থাংশ হলো স্যাচুরেটেড ফ্যাট যেটা শরীরে জমাট বাঁধতে শুরু করে। এই ফ্যাট এর অংশ শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এখন এই ডিম আপনি কিভাবে রান্না করবেন তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে যে আপনি যেই উদ্দেশ্য নিয়ে ডিম খাচ্ছেন তা পূরণ হলো কিনা। ডিমে যেটুকু কোলেস্টেরল থাকে তা সুস্থ স্বাভাবিক একজন মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়।
৬। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দিনে কয়টা ডিম খেতে পারবে?
= ব্রিটিশ ডায়েটিক এসোসিয়েশন এর ড: ফ্রাঙ্কলিন ফিলিপস বলেছেন 'দিনে একটা ডিম, এমনকি দুটো ডিম দেয়া যেতে পারে '
তবে এখানে উনি একটা সতর্ক বাণী দিয়েছেন --- 'এক ধরনের খাবার বেশি খেতে গিয়ে অন্য খাবারে যেসকল প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেগুলো বাদ দেয়া ভুল হবে। অতিরিক্ত ডিম খেলে অতিরিক্ত প্রোটিন বাড়বে আর অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। '
একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যাক্তির দৈনিক প্রোটিন এর চাহিদা তার প্রতি কেজি ওজনের ০.৮ গ্রাম । তাই বুঝে শুনে ডিম খেতে হবে । ২০০৭ সালে British Heart Foundation নামে একটা সংস্থা গবেষণা সাপেক্ষে বলেছিলো 'সপ্তাহে ৩ টা ডিমের বেশি নয় ' পরে বিভিন্ন গবেষণায় এটা ভুল প্রমাণিত হলে তারা এই তথ্য টি তুলে নেন।
৭। কোন ডিম বেশি পুষ্টিকর দেশী মুরগীর ডিম নাকি বয়লার মুরগির ডিম?
= অনেকেই ভাবে দেশী মুরগীর ডিম প্রাকৃতিক ভাবে পালিত হয় তাই অরগানিক সব খাবার পায় তাই বয়লার মুরগির ডিমের তুলনায় বেশি পুষ্টিকর ।এই ধারনাটা ভুল। একটা ফার্মের মুরগির কে তার ফিডের পাশাপাশি ভিটামিন এ দেয়া হয় এতে ঐ মুরগির ডিম টা বেশি পুষ্টিকর হয় । অন্য দিকে দেশি মুরগির যা পায় ঘুরে ফিরে খায় সেখান থেকে সরাসরি ভিটামিন এ আসে না ,আসে ক্যারোটিন যা ভিটামিন এ এর প্রাক অবস্থা। তাই বলা যায় বয়লার মুরগির ডিম ও দেশি মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ প্রায় সম মান ।
৮। হাঁসের ডিম কি মুরগির ডিমের তুলনায় বেশি পুষ্টিকর?
= পুষ্টিমূল্য বিবেচনা করলে হাঁস ও মুরগীর ডিম এক ই বলা যায় । ১০০ গ্রাম খাদ্য উপযোগী হাঁসের ডিমে ১৮১ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি থাকে । অন্যদিকে মুরগির ডিমে থাকে ১৭৩ কিলোক্যালরি। খুব কম পার্থক্য। আবার প্রোটিন এর কথা বললে ১৩.৫ গ্রাম থাকে হাঁসের ডিমে ।মুরগীতে থাকে ১৩.৩ গ্রাম প্রোটিন। আবার ক্যালসিয়াম থাকে ৭০ মিগ্রা হাঁসের ডিমে আর মুরগির ডিমে থাকে ৬০ মিগ্রা।
হাঁসের ডিম আকারে একটু বড় থাকে বিধায় একটু পুষ্টি মূল্য বেশি থাকে তার মানে এই নয় আপনি মুরগির ডিম থেকে বেশি পুষ্টি পাবেন না। কারো যদি বিশেষ কোন পুষ্টি উপাদান এর ঘাটতি থাকে সেক্ষেত্রে তার খাদ্য তালিকায় হাসের ডিম অপেক্ষাকৃত ভালো হবে ।
৯। কোয়েলের ডিমে নাকি অন্য ডিমের তুলনায় পুষ্টি বেশি কথাটা কতটুকু সত্য?
= ভুল । ১ টা মুরগির ডিম প্রায় কমপক্ষে ৫০ গ্রাম ওজনের হয় । অন্যদিকে কোয়েলের ডিম ওজন ৯ গ্রাম অর্থাৎ ৫ টা কোয়েলের ডিম= ১ টা মুরগির ডিম। আবার পুষ্টি গুনাগুণ যদি বাছাই করি তাহলে প্রায় কাছাকাছি। তবে একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো কোয়েলের ডিমে হাঁসের ডিম ও মুরগির ডিমের চেয়ে ফ্যাট কম থাকে মাত্র সম মান তুলনায় ১ গ্রাম ফ্যাট। তাই যারা ফ্যাট কে এভয়েড করতে চান তাদের জন্য এটা ভালো।
১০. সাদা ডিম না লাল ডিম খাবো?
= মুরগির জাতের জন্য তার ডিমের রং সাদা বা লাল হয় । পুষ্টি উপাদান একদম দুইটার ই একি। এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নাই । পার্থক্য একটাই সাদা টার খোলস পাতলা আর লাল টার খোলস একটু ভারী । আর কিছু না।
এতোক্ষণ যে বিষয়গুলো বিস্তারিত বললাম তা একজন সুস্থ স্বাভাবিক শিশু/নারী /পুরুষ এর জন্য প্রযোজ্য । কিন্তু কারো যদি ডায়াবেটিস/ এলার্জি/ উচ্চ রক্তচাপ/ উচ্চ কোলেস্টরল/ অধিক ওজন/ স্বল্প ওজন এই ধরনের কোন শারীরিক জটিলতা থাকে তাদের জন্য অবশ্যই ডায়াটেশিয়ান এর পরামর্শে ডিম খেতে হবে। তখন ডিম কয়বার , কতটুকু , কি পরিমাণ এ খাবেন সব বিস্তারিত জেনে বুঝে খাবেন।
লেখক
নিউট্রিশনিস্ট সুমাইয়া সিরাজী
Bsc (Hon's) Msc (food & Nutrition)
CND (BIRDEM), CCND (BADN)
Trained on Special Child Nutrition
Consultant Dietitian (Ex)
Samorita Hospital
Mobile:
01750-765578,017678-377442
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/নিউট্রিশনিস্ট-সুমাইয়া-সিরাজী-102934114426153