'ইরেক্টাইল ডিসফাংশন'বা পুরুষত্বহীনতা বা হল এক প্রকারের যৌন রোগ যখন যৌন মিলনের সময় পুরুষের যৌনাঙ্গ বা লিঙ্গের পূর্ণাঙ্গ উত্থান হয়না বা উত্থান হলেও সেটি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সহজ কথায়,লিঙ্গ ঠিক মতো শক্ত না হলে তাকে আমরা ইরেক্টাল ডিসফাংশন বলি । যাতে লিঙ্গ উত্থান হয় না বা লিঙ্গ উত্থিত অবস্থা ধরে রাখতে পারে না বা । যেটা গ্রাম অঞ্চলে ধ্বজভঙ্গ বা যৌন অক্ষমতা বলে থাকে!পুরুষের জীবনে কোন না কোন সময় কম বেশি এই সমস্যা হয়ে থাকে।বয়স ভেদে এটা ভিন্নরুপে দেখা দিতে পারে! যে পুরুষের লিঙ্গ ঠিকমতো শক্ত হয়না সেই পুরুষ ই তার কষ্ট বুঝে।নিজেকে তখন পুরুষবলে মনে হয় না।স্ত্রীর কাছে লজ্জিত হতে হয় আর এই লজ্জায় দিন দিন রোগটিকে বাড়িয়ে দেয়।মনের শান্তি চলে যায় যদিও তার অন্য কোন সমস্যা নাই। এটাকে দুইভাগে ভাগ করা হয়
১) প্রাইমারি( জন্মগতভাবেই)
২) সেকেন্ডারি ( পরবর্তীতে কোন কারন বশত হয়েছে)
ইডি বা লিঙ্গ শৈথিল্যের লক্ষণ:
১) যৌনতার প্রতি আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়াও ইডির প্রধান লক্ষণ
২)দীর্ঘদিন ধরে একটানা লিঙ্গের শীতলতা বজায় থাকা
৩) যৌন পারফরমেন্স একদম কমে যাওয়া
৪) আপনা আপনি সহজে লিঙ্গ শক্ত হয়না
৫) সঠিক সময়ে স্ত্রীর সহযোগিতা সত্বেও ঠিকমত শক্ত না হওয়া।
ইডি বা লিঙ্গ শৈথিল্যের মানসিক কারণ:
১) ডিপ্রেশন ,মানসিক অবসাদগ্রস্ততা
২) অত্যাধিক হস্তমৈথুন করা
৩) অত্যাধিক পর্ণ আসক্তি (প্রায় প্রতিদিন)
৪) অত্যাধিক হতাশা, আত্মবিশ্বাসের অভাব।
ইডি বা লিঙ্গ শৈথিল্যের শারীরবৃত্তীয় কারণ:
১.অতিরিক্ত অনিয়ন্ত্রিত ওজন
২.অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ
১. অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
২.ধুমপান
৩.দীর্ঘদিনের হজমের সমস্যা ও আইবিএস
৪. দীঘস্থায়ী ঘুমের সমস্যা
ইডি বা লিঙ্গের শৈথিল্য থেকে মুক্তির উপায়:
লাইফস্টাইল মডিফিকেশন এবং অনুশীলনের মাধ্যমে:
১) নিয়মিত শরীরচর্চা হতে পারে যৌন অক্ষমতার একটি কার্যকর চিকিৎসা। শারিরীক অনুশীলন শরীরে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। লিঙ্গের শক্তিশালী উত্থানের জন্য দরকার প্রচুর রক্ত সরবরাহ আর তার জন্য প্রয়োজন সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম হৃদপিণ্ড। নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস আপনার হার্টকে সুস্থ ও একটিভ রাখতে সাহায্য করবে। প্রতিদিনের শরীরচর্চার ফলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। নিদ্রাহীনতা এবং স্ট্রেস হ্রাস করে। এই তিনটি নিয়ামককে পুরুষের উত্থান জনিত সমস্যার অন্যতম কারিগর মনে করা হয়। তাছাড়া এই অভ্যাস আপনার দেহে টেস্টোস্টেরনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেবে। এই টেস্টোস্টেরনকে বলা হয় সেক্স হরমোন যা আপনার সেক্স ক্ষুধা বাড়িয়ে তোলে। রক্তে টেস্টোস্টেরন কমে গেলে উত্থান জনিত সমস্যা দেখা দেয়। আবার, রক্তে শর্করা বেড়ে গেলেও লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা দেখা দেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা যৌন দুর্বলতায় ভুগে থাকেন। নিয়মিত শরীরচর্চা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।
২) কেগেল এক্সারসাইজ একটি বিশেষ এক্সারসাইজ যা লিঙ্গকে শক্তিশালী করে তোলে। কেগেল এক্সারসাইজ নিয়মিত অনুশীলন করা যেতে পারে। কিভাবে কেগেল এক্সারসাইজ দেখে নিন এই লিংক থেকে
৩) পর্যাপ্ত ঘুম পুরুষের যৌন দুর্বলতা দূর করার একটি প্রাকৃতিক উপায়: নিয়মিত নিদ্রাহীনতায় লিঙ্গের উত্থানজনিত জটিলতা তৈরি করে। কারণ ঘুমের অভাবে যৌন হরমোন বা টেস্টোস্টেরন হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়। মনে রাখবেন আমাদের ঘুম চক্রের সময় টেস্টোস্টেরন বিকাশ করে। সুতরাং, রাতে কমপক্ষে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুম সেক্স হরমোন বা লিবিডো বাড়িয়ে তোলে এবং এটি স্বাস্থ্যকর যৌনজীবনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৪) অতিরিক্ত ওজন থাকলে তা কমিয়ে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসা। অতিরিক্ত ওজন এর কারণে টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণ কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত ওজন টাইপ-2 ডায়বেটিস তৈরি করে যা যৌনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি । তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ জরুরী।
৫) ধূমপান ত্যাগ করাও ইরেকটাইল ডিসফাংশনের একটি নিরাময়:নিকোটিন আপনার উত্থান জনিত যৌন দুর্বলতা আরও খারাপ করে দিতে পারে, বিশেষত যদি আপনি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বা হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তামাক ধমনী এবং রক্তনালীগুলি সঙ্কুচিত করে। আমরা জানি, শক্তিশালী উত্থানের জন্য রক্ত প্রবাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই রক্তনালী সঙ্কুচিত হয়ে গেলে পুরুষের উত্থান জনিত সমস্যা দেখা দেয়। সুতরাং, আপনার যদি ধূমপানের অভ্যাস থেকে থাকে তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিন। কিভাবে ধূমপান ত্যাগ করবেন দেখে নিন এই লিংক থেকে।
৬)চিনি গ্রহণ কমান যৌন ক্ষমতা বাড়ান:লিঙ্গ উত্থানের একটি বড় শত্রু হলো চিনি। চিনি আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা ইনসুলিনের নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে। ফলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং উচ্চ মাত্রার ইনসুলিন রক্তে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা হ্রাস করে। ফলে যৌন আকাঙ্ক্ষা হ্রাস পায় বা লিঙ্গ পুরোপুরি শক্ত হতে পারে না। গবেষণায় দেখা গেছে যে, চিনি দেহের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা ২৫ শতাংশেরও বেশি হ্রাস করতে সক্ষম। সুতরাং, পরের বার চিনিযুক্ত পানীয়, কোল্ড ড্রিংস, চা, কফি বা যে কোনও কিছু পান করার আগে দুবার ভাবুন।
৭) ইরেকটাইল ডিসফাংশন নিরাময়ে ভেষজ উপাদান:প্রকৃতিতে এমন কিছু গাছ গাছড়া আছে যা উত্তেজক বা আফ্রোডাইজিয়াক হিসেবে কাজ করে। লিঙ্গ উত্থান জনিত সমস্যার চিকিৎসায় প্রাকৃতিক এসব ঔষধি খুবই কার্যকর। কিছু ভেষজ টেস্টোস্টেরন হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয় এবং স্ট্রেস হরমোন হ্রাস করে। লিঙ্গের উত্থান জনিত দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য রসুন, প্যানাক্স জিনসেং, অশ্বগন্ধা এবং তরমুজ আপনার ট্রাম্প কার্ড হতে পারে। এসব আফ্রোডাইজিয়াক বা উত্তেজক ভেষজ আপনার যৌন আকাঙ্ক্ষা বাড়াতে এবং ইরেক্টাইল ডিসফাংশন নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির মাধ্যমে:
১) ডিপ্রেশন বা অবসাদগ্রস্ততায় ভুগে থাকলে অবশ্যই ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে সুস্থধারার বিনোদন, লঘু সঙ্গীত,সৃজনশীল নাটক বা সিনেমা দেখতে পারেন। নিজে নিজে ডিপ্রেশন থেকে বের হয়ে না আসতে পারলে সাইকোথেরাপিস্টের সাহায্য নিতে পারেন। ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে এই লিংক থেকে পড়ে নিতে পারেন।
২) পর্নসিনেমায় অত্যাধিক আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মনে রাখবেন নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কোনকিছুই উপভোগ করতে পারবেন না।
৩) অত্যাধিক হস্তমৈথুন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
৪) মাঝে ভালো কোথাও গিয়ে ঘুরে আসুন, হতে পারে পাহাড়ি এলাকা বা সমুদ্র ইত্যাদি মনের আনন্দ খোঁজার জন্য সুস্থ ধারার অপশনগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিতে পারেন।
৫) যৌন দুর্বলতা দুর করবে মেডিটেশন ও ব্রিদিং এক্সারসাইজ বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম: মানসিক চাপ, হতাশা এবং উদ্বেগ যৌন স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ানক ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। দীর্ঘ কালীন মানসিক চাপ, হতাশা এবং উদ্বেগ যৌন ক্ষমতা হ্রাস করে। এর ফলে পুরুষের ইরেক্টাইল ডিসফাংশান দেখা দিতে পারে। আপনার স্ট্রেস হরমোন, উদ্বেগ বা হতাশাকে হ্রাস করতে এবং নেতিবাচক চিন্তাভাবনাগুলি পরিবর্তন করতে নিয়মিত মেডিটেশন এবং ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন। এটি হৃৎস্পন্দন কমায় এবং রক্ত প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে।
ডায়েট এর মাধ্যমে লিঙ্গ শৈথিল্য দূর করার উপায়:
স্বল্প মেয়াদে কার্যকর খাবার মিল্কশেক:
১. খেজুর , বাদাম ও দুধের মিল্কশেক । এটি খুবই কার্যকরি । সহবাসের একঘন্টা আগে সেবন করা যেতে পারে।
২. পাকা কলা,দুধ ও খেজুরের মিল্কশেক। এটিও কার্যকরি। সহবাসের একঘন্টা আগে সেবন করা যেতে পারে।
৩. গোল্ডেন মিল্ক: ডিম,দুধ,বাদামের মিল্কশেক ; এটিও কার্যকরী তবে হজমের সমস্যা আছে কিনা দেখে নিতে হবে।
দীর্ঘ মেয়াদে যৌনস্বাস্থ্য ভাল রাখতে সেক্স হরমোন বাড়ায় এমন খাবার হলো:
১. কালোজিরা
২. মধু
৩. গরুর মাংস
বাদামসমুহ:
১.কাজুবাদাম
২.কাঠবাদাম
৩.পেস্তাবাদাম
৪.চিনাবাদাম
যেসব ফল সরাসরি ইরেক্টাইল ডিসফাংশন দূর করতে কাজ করে
১.খেজুর
২. ডালিম
৩. কলা
৪. কমলালেবু
যৌন জীবনে সুখের মূল হাতিয়ার হলো আত্মবিশ্বাস এবং স্বামী স্ত্রীর সহযোগিতা এবং দাম্পত্য জীবনে ভালো সম্পর্ক! পারিপার্শ্বিক চাপ কমিয়ে জিরোতে আনতে পারলে আপনি হিরো হবেন। এতো চাপ নিয়ে জীবনে তেমন কিছু করতে পারবেন না! কেউ ই পারে না!ঘুম ঠিক রাখবেন । নেগেটিভ চিন্তা করবেন না! মনে রাখবেন নেগেটিভ চিন্তা শুধু আপনার নিজেকেই কুড়ে কুড়ে খাবে। প্রয়োজনে সাইকোথেরাপি নিবেন , পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবেন।হতাশা থেকে দূরে থাকুন... প্রিয়জনের সহচর্যে থাকুন, কর্মক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলুন। সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপন করার চেষ্টা করুন।জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করুন। ফাস্ট ফুড,জাংক ফুড এড়িয়ে চলুন! স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করুন! গুড লাক