-
ওমা! এতো শুকনা কেনো তুমি? বাতাসে উড়ে যাবা তো! মোটা হও জলদি আরে সারাদিন কোক খাও, বিরিয়ানি খাও এমনেই মোটা হয়ে যাবা. বেশি করে কেক খাও।
এতো হাঁটো কেনো? এমনেই তো কতো শুকনা। জী আজকের টপিকস সুস্থভাবে মোটা হবো কীভাবে!? ধৈর্য্য ধরে একটু পড়ুন, অনেক ধোয়াশা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
প্রথমেই কেনো আন্ডারওয়েট অথবা অপুষ্টির শিকার হয় তা নিয়ে বলি
-
এক
থাইরয়েডের সমস্যা
যেই ব্যক্তির থাইরয়েড হরমোন খুবই বেশি যেমন (হাইপারথাইরয়েডিজম) তাদের মেটাবলিজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ফলে ওজন কমে। এছাড়াও থাইরয়েডের ঔষধ গ্রহণের ফলে ওজন হ্রাস পেতে পারে।
-
দুই
খাওয়ার ব্যাধি অথবা মানসিক রোগ
অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসার মতো গুরুতর মানসিক ব্যাধি চরম ওজন হ্রাস করতে পারে।
-
তিন
রোগ সংক্রমণ
ম্যালেরিয়াল বা পরজীবী সংক্রমণ, ডায়রিয়া, যক্ষ্মা ইত্যাদির ফলে ওজন হ্রাস ঘটে।
-
চার
ডায়াবেটিস
অনিয়ন্ত্রিত টাইপ ১ ডায়াবেটিস ওজন হ্রাসের কারণ।
-
পাঁচ
ক্যান্সার
ক্যান্সারের রোগীরা দুর্বল হয়ে পড়েন এবং আরও বেশি করে ওজন হ্রাস পায়।
-
ছয়
জিনতত্ত্ব
কখনও কখনও, এটি কেবল বংশগত যা কোনও ব্যক্তিকে কম ওজনের করে তোলে।
-
সাত
স্ট্রেস
আজকাল, অনেক ব্যক্তির স্ট্রেসের অভিজ্ঞতা হয়। যা কর্মজীবন বা ব্যক্তিগত জীবনের কারণে হতে পারে, নির্বিশেষে স্ট্রেস হলে ঘুম এবং ক্ষুধা হ্রাস পায় যা শেষ পর্যন্ত খাবার হজমকে ব্যহত করে, তখন একজন ব্যক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এর ফলে ওজন হ্রাস হয়।
এবার একটু ওজন বাড়ানোর সঠিক পদ্ধতি জানিয়ে দেই
-
ক
ওজন বাড়ানোর নিরাপদ হার
আপনার সঠিক ওজন বৃদ্ধি নিয়ে একমাত্র একজন ডায়েটিশিয়ানই পারে সুবুদ্ধি ও পরামর্শ দিতে।তারপরো গবেষণা ওজন বাড়ানোর একটি গ্রহণযোগ্য হার প্রকাশ করেছে। প্রতি সপ্তাহে (০.২-০.৯কেজি) স্বাভাবিক।তবে, গুরুতর অপুষ্টিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে, প্রতি সপ্তাহে প্রায় (২কেজি) ওজন বৃদ্ধি নিরাপদ বলা হয়ে থাকে। দ্রুত ওজন বৃদ্ধিতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে যেমন ফোলাভাব, পেটের ব্যথা এবং হরমোনজনিতো সমস্যা, ফ্যাটি লিভার, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, হৃদরোগের সমস্যা ইত্যাদি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এখন বলবো কোন খাবার খেলে আপনি সুস্থভাবে ওজন বৃদ্ধি করতে পারবেন
-
এক
দুধ
দুধে ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিনের মিশ্রণ রয়েছে। এটি ক্যালসিয়াম সহ ভিটামিন এবং খনিজের দুর্দান্ত উৎস। দুধের প্রোটিন পেশী তৈরি করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রশিক্ষণে মহিলাদের মধ্যে যারা ওয়ার্কআউটের পরে দুধ পান করেছেন তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত ওজন বাড়ার উন্নত ফলাফল। তাই ওজন বাড়াতে ডায়েটে দুধ যুক্ত করা যেতে পারে।
-
দুই
লাল মাংস
লাল মাংস খাওয়া পেশী গঠনে এবং ওজন বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে দেখানো হয়েছে। কারণ লাল মাংসের মধ্যে লিউসিন এবং ক্রিয়েটাইন উভয়ই থাকে যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৬০-৯০ বছর বয়সী ১০০ জন মহিলাদের ডায়েটে চর্বিযুক্ত লাল মাংস তাদের ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে। তবে অতিরিক্ত গ্রহণ করা যাবেনা। পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে।
-
তিন
আলু
যেসকল খাবারে ওজন বাড়ে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আলু। আলু সুষম ও পুষ্টিকর খাবার। আলুর মধ্যে রয়েছে আঁশ এবং ভিটামিন-সি ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার। এটি পেশী বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে ১/২টি আলু সেদ্ধ খান অথবা তরকারীর সাথে মিলিয়ে গ্রহণ করুন, এটি ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে।
-
চার
গিলা-কলিজা
ওজন বাড়ানোর জন্য পরোটার গিলা-কলিজা খাওয়া উত্তম। কারণ, কলিজাতে পর্যাপ্ত প্রোটিন ও ফ্যাট আছে। তাই নিয়ম করে কলিজা খাবেন।
-
পাঁচ
বাদাম
নিয়মিত বাদাম খাওয়া একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যকর ওজন বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে। কাঁচা বা বাদামের স্বাস্থ্যগত উপকার সবচেয়ে বেশি।
-
ছয়
শস্য অথবা গম
গমে জটিল শর্করা রয়েছে, যা ওজন বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। তাই পরামর্শ করে ওটস, গমের রুটি গ্রহণ করুন।
-
সাত
তেল
জলপাই এবং অ্যাভোকাডো থেকে প্রাপ্ত তেল হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েলে প্রায় ১২০ ক্যালোরি থাকে। তাই পরিমানমতো তেল দিয়ে গ্রহণ করুন আপনার খাবার।
-
আট
কলা
শরীরের ওজন বাড়াতে কলা আদর্শ খাবার। কলায় রয়েছে ক্যালোরি, আঁশ, উচ্চ পরিমাণ পটাশিয়াম এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন। এছাড়া রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি। তাই ওজন বাড়াতে চাইলে নিয়মিত কলা খাওয়া উচিৎ। তবে সেটা যেনো মিষ্টি কলা হয়।
-
নয়
ভাত
এক কাপ ভাতে প্রায় ২০০ ক্যালোরি থাকে এবং এটি কার্বোহাইড্রেটের একটি ভাল উৎস যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
-
দশ
শুকনো ফল
শুকনো ফল পুষ্টিকর এবং ক্যালোরি সমৃদ্ধ, এখন অনেকেই ড্রাই ফ্রুটস বলে বিক্রি করছেন অনলাইনে। অথবা ঘরেও তাজা ফল যেমন আপেলের টুকরো, খেজুর, চেরি, কিশমিশ ইত্যাদি শুকিয়ে নিয়ে বাদাম মিক্সড করে খেতে পারেন।
-
এগার
ডিম
ডিমের প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং অন্যান্য পুষ্টির একটি দূর্দান্ত উৎস। তবে বেশিরভাগ পুষ্টি উপাদানগুলি কুসুমে থাকে।তাই ওজন বাড়াতে কুসুমসহ ডিম খাবেন।
-
বার
পনির
পনির ফ্যাট, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং ক্যালোরির চমৎকার মিক্সচার। ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির পূর্ণ ফ্যাটযুক্ত চিজ নির্বাচন করা উচিত।
যে খাবার খেয়ে মোটা হওয়ার স্বপ্ন দেখা যাবেনা
-
ক
ভাজা খাবার
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পেঁয়াজের রিং, ডোনাট, মুরগির স্ট্রিপ, পনির ইত্যাদি
-
খ
ফাস্টফুড
বার্গার, পিজ্জা, হট ডগ ইত্যাদি
-
গ
সুস্বাদু খাবার এবং পানীয়
সোডা, ক্যান্ডি, স্পোর্টস ড্রিঙ্কস, মিষ্টি বেকড পণ্য, মিষ্টি চা, আইসক্রিম, মিষ্টি কফি পানীয় ইত্যাদি।
-
ঘ
কার্বস
কুকি, চিপস, শর্করাযুক্ত সিরিয়াল, প্যাস্ট্রি ইত্যাদি
ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু টিপস এখানে রইল
-
A
খাওয়ার আগে পানি খাবেন না। এটি আপনার পেট ভরাট রাখে ফলে খাওয়ায় অনীহা তৈরি হয়।
-
B
বেশি করে বার বার খাবেন।
-
C
দুধ খাবেন প্রতিদিন নিয়ম করে। কারণ দুধ থেকে উচ্চমানের প্রোটিন এবং ক্যালোরি পাওয়া সহজ।
-
D
বড় প্লেট ব্যবহার করুন। যদি বেশি ক্যালোরি পেতে চান অবশ্যই বড় আকারের প্লেটগুলি ব্যবহার করুন, কারণ ছোট প্লেটে মানুষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম খেতে বাধ্য হয়।
-
E
নিয়ম করে ঘুমান। ওজন বৃদ্ধির জন্য সঠিকভাবে ঘুমানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন জাতীয় খাবার প্রথমে এবং পরে সবজি। অর্থাৎ আপনার প্লেটে খাবারের মিশ্রণ থাকলে প্রথমে ক্যালোরি ঘন এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাবেন পরে সবজি খেয়ে শেষ করবেন।
-
F
ধূমপান করবেন না ধূমপান রুচি নষ্ট করে দেয়।
-
G
মানসিক চাপ কমাতে হবে।
আসলে আমরা মোটা চিকন বাইরে থেকে বিচার করি। যা কিনা একদমই ভুল। আপনার সঠিক BMI জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। সেজনই একজন বিশেষজ্ঞ দরকার। আর আমি তো আছি আপনাদের পাশে। যে কোনো সমস্যায় যে কোনো প্রয়োজনে। শেষ কথা ওজন বাড়ার পর কোনোভাবেই এক্সারসাইজ করা বন্ধ করবেন না।
লেখক
পুষ্টিবিদ সিরাজাম মুনিরা
কনসালটেন্ট ডায়েটিশিয়ান ইবনেসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
পুষ্টিবিদ সিরাজাম মুনিরা |
স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বাড়ানোর উপায় |
মোটা হউন |
- royalbangla.com এ আপনার লেখা বা মতামত বা পরামর্শ পাঠাতে পারেন এই এ্যড্রেসে [email protected]
পরবর্তী পোস্ট |
ইউরিন ইনফেকশন: কারণ ও প্রতিরোধের উপায় |