এ সময়ে সবাই আতংকিত হন, যদি কেউ অনুভব করেন স্তনে চাকা হয়েছে! আচ্ছা, বিষয়টি কি আসলেই এতটা আতংকের? যদি বলি, না। অবাক হচ্ছেন? তাহলে আসুন জেনে নেই স্তনের সব চাকাই ক্যান্সার কিনা।
একঃ
সাধারণত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মহিলারা অনুভব করেন স্তনে ব্যাথা-বেদনা, জ্বালাপোড়া ভাব, মাসিকের একটি সুনির্দিষ্ট সময়ে স্তনের ভারিভাব আর আকারে বৃদ্ধি। এই সমস্যা গুলো দেখা যায় নির্দিষ্ট সময়ের পর থাকে না অথবা একটা সময়ে আপনার এই অস্বস্তি কমে যাবে। আর চাকা ভাব পুরো পুরি চলে যাবে বা কম অনুভব হবে। এগুলো খুব স্বাভাবিক। মাসিকের নির্দিষ্ট সময়ে মেয়েলি কিছু হরমোন উঠানামা করার কারনে এই চাকা বা চাকা ভাব থাকে। এটি কিন্তু ক্যান্সার এর থেকে অনেক বেশি ক্ষেত্রে মহিলাদের থাকে। আজকাল ক্যান্সার আতংকের কারনে এই বিষয় নিয়ে মহিলারা প্রচন্ড উদ্বিগ্ন থাকেন। এটিকে ফাইব্রোসিস্টিক পরিবর্তন বলে। বিভিন্ন সময়ে মেয়েদের মাসিক, সন্তানধারণ এবং বাচ্চাকে স্তন্যদানের কারনে স্তনে কিছুটা পরিবর্তন হয়। যার কারনে কিছু যায়গায় ছোট ছোট সিস্ট যা পানিপূর্ন থলের মত হয়। এটা কিন্তু অনেকেই অনুভব করতে পারেন।যার ফলে যেটি আসলে ক্যান্সার নয়, ক্যান্সার এর পূর্ব লক্ষনও নয়, তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে যান।
দুইঃ
অনেক সময়ে স্তন্যদানকারী মায়েদের স্তনে চাকা ভাব থাকে। এটি ক্রমাগত বাড়তে থাকে। যদিও এটিও একটি সিস্ট, পানির বদলে স্তনের দুধ জমা হয়ে তৈরি হয়। আমরা ডাক্তারী ভাষায় একে বলি গ্যালাক্টোসিল। অনেকসময় বাচ্চাকে স্তন্য দান করতে করতেই এটি ভালো হয়ে যায়। কিন্তু কিছু সময় এগুলোকে ছোট্ট অপারেশন এর মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা দরকার হয়।
তিনঃ
কমবয়সী বিশেষ করে কিশোরী বা তরুণী মেয়েদের স্তনে এক ধরনের চাকা নিয়ে আসেন। এগুলো কিছুটা শক্ত হতে পারে। যদিও ক্যান্সার এ যেমন পাথরের মত শক্ত চাকা অনুভব হয় তেমন নয়। এটিকে আমরা বলি ব্রেস্ট মাউস। ব্রেস্টের ইঁদুর। ইঁদুরের মতই এটি এক জায়গায় না থেকে এক যায়গা থেকে আরেক যায়গায় দৌড়ে চলে যায়। ডাক্তারী ভাষায় এটিকে বলে ফাইব্রোএডেনোমা। এটিকেও কিন্ত স্বাভাবিক স্তন পরিবর্তন এর অংশ হিসেবে ধরা হয়। যেখানে স্তনের গ্ল্যান্ড অথবা ফাইব্রাস অংশ বেশি করে তৈরি হয়। যেহেতু এটিকে স্বাভাবিক স্তনের টিস্যু হিসেবে ভাবা হয় এজন্য ছোট থাকলে এটি অপারেশন করতে বলা হয় না। আর ক্যান্সার হবার প্রবনতা হিসেবে এটা গন্য করা হয়না।
যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো তা আপনিও অনুভব করতে পারেন এবং ক্যান্সার ভেবে আতংকিত না হয়ে বরং দুশ্চিন্তা দূর করতে পারেন ।
কিভাবে?
নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করে এবং পরিবর্তন সাথে সাথেই নির্নয় করার মাধ্যম।
আসুন এবার 'নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা ' এ বিষয় নিয়ে একটু আলোচনা করি।
- নিজে নিজের স্তন পরীক্ষা
আপনারা সবাই জানেন নিশ্চয়ই নিজে নিজের স্তন পরীক্ষা এই ক্যান্সার সবার প্রাথমিক নির্নয় এর জন্যে গুরুত্বপূর্ণ।
- কোন বয়সে থেকে করবেন ?
সাধারণত ২০ বছর বয়স থেকে।
- কতদিন পরে?
প্রতি মাসে একবার। এটি অভ্যাসে পরিনত করুন।
- কখন করবেন?
সাধারণত মাসিক শুরু হবার পর, প্রথম ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে।
- যদি মাসিক না হয় তখন?
ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ দিয়ে রাখবেন, যেদিন স্তন পরীক্ষা করবেন সেদিন ( সাধারণত ব্যাথা যেদিন কম থাকে সেদিন চেক করবেন)। পরের মাসগুলোয় এই দিনে স্তন পরীক্ষা করুন।
- গর্ভবতী বা স্তন্যপানের সময়ও কি স্তন পরীক্ষা করবেন?
অবশ্যই, এবং নিশ্চিত ভাবেই করুন। একই পদ্ধতিতে। কারন এই সময়ের ক্যান্সার সাধারণত মিস হয় বেশি, যার কারনে বেশিরভাগ খারাপ অবস্থা হয়ে যায়। তাই।
- কত বয়স পর্যন্ত করবেন?
আজীবন। খেয়াল করবেন অস্বাভাবিক নতুন কিছু হয়েছে কিনা। মনে রাখবেন আমরা যত বেশী দিন বেঁচে থাকি ততই আমাদের ক্যান্সারের প্রবনতা বেড়ে যায়। তাই যত বয়স পর্যন্ত বেচে থাকবেন সচেতন থাকবেন। নিজের খেয়াল রাখবেন।
লেখক
ডাঃ লায়লা শিরিন
সহযোগী অধ্যাপক, ক্যান্সার সার্জারী, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল।
www.facebook.com/DrLailaShirinOncoSurgeon