-
আমি সবসময় বলি রোগ হওয়ার আগে সাবধান থাকতে।এখন সময় ভালো না,ঠান্ডা জ্বর কাশি মানেই করোনার কথা মাথায় আসে।তবে ঘাবড়াবেন না।ভয় ও স্ট্রেস মানুষকে দূর্বল করে দেয়।তাই মনকে আগে শক্ত রাখা জরুরী।
আমি আজ সর্দি কাশি ঠান্ডার উপশম নিয়ে আলোচনা করবো ও একই সাথে পূর্ব প্রস্তুতি কী নেয়া যেতে পারে তা ব্যাখ্যা করবো।
চলুন জেনে নেয়া যাক কী খেতে হবে ও কী করতে হবে?
-
এক
মধু
ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের কারণে গলা ব্যথা হতে পারে।মধু অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সমৃদ্ধ যা এই ধরণের সংক্রমণ পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।বাচ্চাদের কাশি চিকিৎসায় মধু কার্যকর।যদিও ১২ মাসের কম বয়সী শিশুদের দেওয়া উচিত নয়।
গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে মধু ডিফিনহাইড্রামাইন এবং সালবুটামলের চেয়ে বেশি কার্যকর যা প্রায়শই কাশির ওষুধে ব্যবহৃত ড্রাগ হিসেবে।তাই সর্দি কাশি ঠান্ডাতে মধু কিন্তু দারুণ উপকারী।
-
দুই
আদা
একজন ব্যক্তি যদি এক কাপ গরম পানিতে ১-২ চা চামচ তাজা আদা দিয়ে সাথে অল্প মধু দিয়ে খেতে পারেন তবে ঠান্ডা অনেকাংশে কমে যাওয়া সম্ভব।কারন আদাতে থাকা জিঞ্জারেল এবং শাওগেল নামক উপাদান রাইনোভাইরাস ধ্বংস করতে সহায়তা করে। এর ফলে ঠান্ডা লাগার ঝুঁকি কমে যায়। তাই সুস্থ্য থাকতে খাদ্য তালিকায় আদা যোগ করা ভালো।
-
তিন
ডাবের পানি
ডাবের পানিতে সোডিয়াম এবং পটাসিয়ামের মতো খনিজ অনেক বেশি।এগুলি ডায়রিয়া বা বমি বমিভাবের পরে শরীরকে দ্রুত পুনরায় হাইড্রেট করতে সহায়তা করতে পারে।একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ডাবের পানি একটি স্পোর্টস ড্রিঙ্কের মতো একই স্তরের হাইড্রেশন সরবরাহ করতে পারে।এটি আরও স্বাস্থ্যকর, এতে কোনও চিনি যুক্ত নেই।তাই ঠান্ডার সাথে পেট খারাপ হলে ডাবের পানি খেতেই পারেন।
-
চার
চিকেন স্যুপ
মুরগির স্যুপকে কয়েকশ বছর ধরে সাধারণ ঠাণ্ডার প্রতিকার হিসাবে সুপারিশ করা হয়।এটি ভিটামিন, খনিজ, ক্যালোরি এবং প্রোটিনের খাওয়ার একটি সহজ উৎস যা আপনি অসুস্থ থাকাকালীন আপনার দেহের প্রচুর পরিমাণে পুষ্টির যোগান দেয়।মুরগির স্যুপ তরল এবং ইলেক্ট্রোলাইটের একটি দুর্দান্ত উৎস,ঠান্ডায় পেট খারাপ হলে শরীরের পানিশুন্যতা রোধে সাহায্য করে।একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মুরগির স্যুপ কফ সাফ করার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর। কারন এতে প্রাকৃতিক ডিকনজেস্ট্যান বিদ্যমান।এছাড়াও মুরগীর স্যুপে থাকা নিউট্রোফিল কাশি থেকে মুক্তি দেয়।অতএব মুরগীর স্যুপ হচ্ছে সুপার ফুড ঠান্ডাজনিত রোগে।
-
পাঁচ
ভেষজ চা
ঠান্ডা এবং ফ্লু উপসর্গগুলি অনুভব করার সময়, হাইড্রেটেড থাকা জরুরী।ভেষজ চা সতেজ হয় এবং তাদের বাষ্পে শ্বাস-প্রশ্বাস সাইনাস থেকে কফ পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।
এক কাপ গরম পানিতে একটু হলুদ যোগ করা গলা ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।গবেষণা থেকে জানা যায় যে হলুদে প্রদাহবিরোধী এবং এন্টিসেপটিক উভয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে।এছাড়াও আদা চা,সজনে পাতার চা অথবা লবঙ্গ দিয়ে লাল চা ও বেশ উপকারী ঠান্ডার জন্য।তবে দুধ চা ক্ষতিকর।
-
ছয়
রসুন
রসুন সব ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করতে পারে। এটি বহু শতাব্দী ধরে ঠান্ডার ঔষধি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এটি অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টি-ফাংগাল সম্পন্ন যা ইমিউন সিস্টেমকে জাগ্রত করে।গবেষণায় দেখা গেছে রসুন গ্রহণকারী ব্যক্তিরা কেবল কম সময়েই অসুস্থ হয়ে পড়ে না।তাই রসুন গ্রহণ করতেই পারেন। একটি চমৎকার খাবার হতে পারে মুরগির স্যুপ বা ঝোলগুলিতে রসুন যুক্ত করা যা ঠান্ডা বা ফ্লুর লক্ষণগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও কার্যকর করবে।
-
সাত
সবুজ শাকসবজি
সবুজ শাকসবজি ঠান্ডার অনেক বড় ঔষধ।উদাহরণ হিসেবে পালংশাক ও ব্রকলির গুনাগুন টা দেয়া হলো
-
ক
পালং শাক
পালং শাক শরীরের সংক্রমণ বিরোধী শক্তি বাড়ায় এবং এর ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ফলাফল হিসেবে শরীর সুস্থ্য থাকে সবসময়।
-
খ
ব্রকলি
এই খাদ্যটিও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ব্রকলি উচ্চ আঁশ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং এটা শীতকালের পুষ্টিকর খাবার হিসেবেও খাদ্যতালিকায় নিয়মিত রাখা যায়।
তবে সবুজ শাকসবজির পুষ্টিগুণ ঠিক রাখতে কম তাপে রান্না করতে হবে।
-
আট
সিদ্ধ গাজর
গাজরকে বলা হয় সুপার ফুড। গাজরের ভিটামিন ও মিনারেলস দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।তবে ঠান্ডা লাগলে কাঁচা গাজর না খেয়ে সেদ্ধ করেই খাওয়া উচিত।
-
নয়
ভিটামিন সি
সকল সমস্যারই একটি সমাধান আছে, আর তার যথার্থ প্রমাণ পাওয়া যায় প্রকৃতির কাছেই। ঠান্ডা কাশির সমস্যা ও তার সমাধান ও পাওয়া যায় এই সাইট্রাস জাতীয় ফল থেকে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রক্তে শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ বাড়ায় এবং ঠান্ডা নিরাময়ে অবদান রাখে। এধরনের ফলের মধ্যে কমলা,লেবু ,আমলকি,পেয়ারা ইত্যাদি উল্ল্যেখযোগ্য।
-
দশ
হলুদ
এতে বিদ্যমান কারকিউমিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি যৌগ। এছি অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়া বাড়িয়ে তোলে।তবে হলুদের কার্যকারিতা বাড়াতে হলুদের সাথে কালো মরিচ একত্রিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করুন,তারা ২জন মিলে আপনার ঠান্ডাকে ভাগাবে।
-
এগার
প্রচুর ভিটামিন ডি
গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ভিটামিন ডির অভাব হয়, তাদের সর্দি-কাশিতে কাবু করে বেশি।শরীরে ভিটামিন ডি থাকলে তা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।ডি জাতীয় খাবার-ডিমের কুসুম,কলিজা,দুধ ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।তবে শুধু খাবার থেকে যথেষ্ট ভিটামিন ডি পাওয়া যায় না।সূর্যের আলোতে থাকতে হবে।সকাল ১১টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে সপ্তাহে দুই দিন কেউ যদি অন্তত ২০- ৩০ মিনিট সূর্যালোক গায়ে মাখে, তবে তা যথেষ্ট।এরপরো ডি সাপ্লিমেন্টস প্রয়োজন হয়,সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
-
বার
দই
প্রতি কাপে ১৫০ ক্যালোরি এবং ৮গ্রাম প্রোটিন রয়েছে।এছাড়াও দই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এবং অন্যান্য ভিটামিন এবং খনিজ পূর্ণ।
কিছু দইয়ে উপকারী প্রোবায়োটিকও থাকে।
প্রমানগুলি দেখায় যে প্রোবায়োটিকগুলি শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়কেই ঠান্ডাজনিত অসুস্থতা হলে দ্রুত নিরাময় করতে পারে এবং তাতে করে কম অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা হয়।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রবায়োটিক গ্রহণকারী শিশুরা গড়ে দুই দিনের দ্রুততর ভাল অনুভব করেন।তাই দই গ্রহণ করুন,তবে একদম ফ্রিজে থাকাটা নয়।নরমাল করে খেতে হবে।ঠান্ডা খাওয়া যাবেনা।
-
তের
বাদাম
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাবার।এছাড়াও বাদামে বেশ কয়েকটি পুষ্টি রয়েছে যা ভিটামিন ই এবং বি৬,জিংক এবং ফোলেট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।মানসিক চাপ কমাতে গবেষণায় বাদামকে দেখানো হয়েছে।আমরা অনেকেই জানিনা যে স্ট্রেস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়।তাই বাদাম খেতে কিন্তু ভুলবেন না!তবে ঠান্ডা লাগার আগে খেতে হবে।ঠান্ডা যদি লেগে যায় সেক্ষেত্রে বাদামকে পরিহার করতে হবে।
সবশেষে গরম পানির গার্গল করবেন,যদি ঠান্ডা লাগে।ঠান্ডা না লাগলে গরম পানি খাওয়ার কোনো দরকার নেই।
এবার নিশ্চয়ই বুঝেছেন এই ঠান্ডা পরবর্তী ও ঠান্ডা পূর্ববর্তী নির্দেশনা কী মানতে হবে।আশা করি আপনাদের এই গাইডলাইন কাজে দিবে।
লেখক পুষ্টিবিদ সিরাজাম মুনিরা
কনসালটেন্ট ডায়েটিশিয়ান
ইবনেসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
Dietitian Shirajam Munira |
সিজনাল ঠান্ডা নিয়ন্ত্রণের উপায় কি ? |
পুষ্টি |
- royalbangla.com এ আপনার লেখা বা মতামত বা পরামর্শ পাঠাতে পারেন এই এ্যড্রেসে [email protected]
পরবর্তী পোস্ট |
ইউরিন ইনফেকশন: কারণ ও প্রতিরোধের উপায় |