চিকিৎসা নিতে গেলে প্রায়ই চিকিৎসকেরা আমাদের নানা শারীরিক পরীক্ষা (টেস্ট) করতে দেন। আমরা বুঝি না কেন এসব পরীক্ষা করা হচ্ছে? রোগের চিকিৎসায় এটি কতটা কাজে লাগবে? গুরুত্ব না বুঝে অনেক রোগী হয়তো ঠিকভাবে সব পরীক্ষা করেন না। কিন্তু সঠিক চিকিৎসার জন্য এসব শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আগের দিনে কেবল রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ দেখেই চিকিৎসকদের রোগনির্ণয় করতে হতো। এখন উন্নত প্রযুক্তি ও নানা পরীক্ষার সুযোগ থাকায় অনেক সহজে ও নিখুঁতভাবে রোগনির্ণয় করা যায়।
প্রাথমিকভাবে সংক্রমিত রোগে রক্তকণিকাগুলোর পরিবর্তন, ইএসআর, প্রস্রাবের রুটিন মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষা বা সাধারণ এক্স-রে চিকিৎসককে অনেক কিছু বুঝতে সাহায্য করে। বারবার পরীক্ষা করতে গিয়ে অনেক সময় রোগীর মনে হতে পারে কেন একবারেই সব পরীক্ষার কথা তাঁকে বলা হয়নি। কিন্তু ব্যাপারটি আসলে চিকিৎসকের কাছে অনেকটা তদন্ত করার মতো। একেকটি ক্লু পরের পদক্ষেপ নিতে চিকিৎসককে সাহায্য করে।
ধরা যাক, ঠান্ডাজনিত কোনো সংক্রমণ নিয়ে একজন রোগী চিকিৎসকের কাছে গেলেন। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক প্রথমেই রক্তকণিকার পরীক্ষা ও বুকের এক্স-রে দিতে পারেন। রিপোর্টে সন্দেহজনক কিছু থাকলে কফ পরীক্ষা দেওয়া যায়। জ্বরের কত দিন পর বা কততম দিনে পরীক্ষা করতে হবে, দিনের কোন সময় রক্ত বা কফের মতো নমুনা দিতে হবে, কতখানি দিতে হবে—এসবের ওপর নির্ভর করে রিপোর্টটি কতটা সঠিক হবে। পরীক্ষার আগেই অ্যান্টিবায়োটিক–জাতীয় ওষুধ খেয়ে ফেললে জীবাণু নাও পাওয়া যেতে পারে। তাই অ্যান্টিবায়োটিক আগে খেয়ে থাকলে চিকিৎসককে জানানো জরুরি।
কিছু পরীক্ষা আছে, যা রোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না। কিন্তু অনেক সময় যে চিকিৎসা দেওয়া হবে, সে জন্য এমন পরীক্ষা করাটা জরুরি। যেমন ডায়বেটিস থাকলে অনেক ওষুধ কাজ করে না । তাই ডায়বেটিসের পরীক্ষা দিতে হয়। দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়ার আগে কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে হয়। অনেক সময় কোনো ওষুধ খেলে নির্দিষ্ট সময় পর কিডনির পরীক্ষা করতে হয়। হিমোগ্লোবিন বা রক্তকণিকাও পরীক্ষা করা হয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখতে।
ইদানীং রুটিন কিছু পরীক্ষাও দরকার হয়। বেশির ভাগই অসংক্রামক রোগনির্ণয় করতে। ৪০–এর ওপর যাদের বয়স, তাঁদের জন্য নিয়মিত (যেমন বছরে বা দুই বছরে একবার) রক্তে শর্করা, চর্বি ইত্যাদি পরীক্ষা করা দরকার। নারীদের ম্যামোগ্রাফি, জরায়ু রস পরীক্ষা নিয়মিত পরীক্ষার অংশ হিসেবে আনা হয়েছে। বিদেশে কলোনোস্কপি ধরনের পরীক্ষাও নিয়মিতভাবে করা হয়। ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, ক্যানসার ইত্যাদি নির্ণয় করতে এসব পরীক্ষার বিরাট ভূমিকা আছে।
কোনো পরীক্ষা করার আগে কিছু বিষয় ভালোভাবে জেনে নেওয়া ভালো। যেমন: কখন পরীক্ষাটি করতে হবে? সকালে খালি পেটে, না খাওয়ার কতক্ষণ পর? কোনো ওষুধ খেয়ে যেতে হবে কি না।
শারীরিক পরীক্ষার কোনো প্রস্তুতি আছে কি না, সেটা জেনে নেওয়াটাও জরুরি। যেম: কলোনোস্কপি, আল্ট্রাসনোগ্রামের মতো পরীক্ষার প্রস্তুতি আগের দিন থেকেই নিতে হয়। শরীরে কোনো ধাতব পদার্থ থাকলে চিকিৎসককে জানানো জরুরি। এমআরআই–জাতীয় পরীক্ষার আগে দেহে কোনো স্ক্রু, পেসমেকার থাকলে জানাতে হবে।
বিভিন্ন হরমোন পরীক্ষারও নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। নারীদের মাসিকের দিনের সঙ্গে হিসাব করে এসব পরীক্ষা করতে হতে পারে। বায়োপসি বা হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষা একাধিক ল্যাবরেটরিতে করা ভালো। এতে পরীক্ষার ফল নিয়ে সন্দেহ থাকে না।
লেখাটি সংগ্রহ করা, তবে তার লেখাটির জন্য চিকিৎসক, রোগী এবং রোগীর স্বজনরা সবাই লাভবান হবে।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/drafjalhossain
লেখক
Dr.Afjal Hossain
Telemedicine Service
Assistant Registrar
United Hospital, Gulshan 2,Dhaka.
Former Panel Physician USA Embassy
Internship Mitford Hospital, Dhaka.,Dhaka.
Studied Sir Salimullah Medical College, Dhaka.
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/drafjalhossain