ঋতু গননায় বাংলাদেশে এখন বর্ষাকাল। এই সময়ে মানুষের জ্বরের প্রকোপ টা যেন একটু বেশিই দেখা যায়। আশপাশে পরিচিত অপরিচিত অনেকেই জ্বরে ভুগছে। কারও সাধারণ জ্বর, কারও ডেঙ্গুজ্বর কারও আবার চিকুনগুনিয়া। জ্বর শরীরের যেকোনো সংক্রমণের বিপরীতে প্রথম প্রতিরোধব্যবস্থা।
জ্বরের কারণ অনেক। বর্তমানে করোনার কারনে জ্বর, ডেঙ্গুজ্বর সেইসাথে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপটাও বাড়ছে। তবে সাধারণ ভাইরাস জ্বরই বেশি হয়ে থাকে। বিশেষ করে ঋতু বা আবহাওয়া বা অবস্থান পরিবর্তনের ফলে এটা হয়ে থাকে। এছাড়াও আরো কিছু কারণে জ্বর হতে পারে। যেমন কিছু জটিল রোগে র্যাশসহ জ্বর হতে পারে, ক্যানসার , মস্তিষ্কের প্রদাহ, টাইফয়েড, বাত, হাম, রক্তের প্রদাহ, শরীরে কোন কাটাছেড়া ইত্যাদি। এছাড়াও অনেক সময় বিভিন্ন ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবেও জ্বর হতে পারে।
ভাইরাস জ্বর সাধারণত ৭-১৪ দিন স্থায়ী হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খেলে জ্বর থেকে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়।
জ্বর হলে শরীরের বিপাকক্রিয়া বেড়ে যায়। শরীরের তাপমাত্রা যত বেশি হয়, বিপাকক্রিয়াও তত বেশি হয়। তাই এসময়ে শরীরে বাড়তি ক্যালরির প্রয়োজন হয়। কিন্তু জ্বরের সময় বেশির ভাগ মানুষেরই রুচি কমে যায়। এসময়ে পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়াটা খুব গুরুত্বপুর্ন। তাই এ সময় খাদ্যতালিকায় এমন খাবার রাখতে হবে, যা ক্যালরির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। তাই এই সময় রোগীর খাবারের প্রতি একটু বেশি যত্নশীল হতে হবে। অনীহা থাকলেও পুষ্টি চাহিদা পূরণে রোগীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও সঠিক খাবার খেতে হবে।
১)তরলঃ
জ্বরের সময় তরলজাতীয় খাবার রোগীর জন্য খুব বেশি কার্যকরী । এই সময়ে তরল খাবারে কিছু বিশেষ উপকারী দিক হচ্ছে-
১) হজম প্রক্রিয়া সহজ হয়
২) দ্রুত শক্তির যোগান দেয়
৩) শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে
৪) খাবারে অরুচি থাকলেও দ্রুত খেয়ে নেওয়া যায়
৫) রোগী দ্রুত আরোগ্যলাভ করে
তবে তরলজাতীয় খাবারে একটা ছোট্ট সমস্যা আছে, আর সেটা হলো এখানে ক্যালরি কিছুটা কম থাকে। সেজন্য শুধু তরলের উপরে নির্ভর না করে পাশাপাশি অন্যান্য খাবারও খেতে হবে।
তরল জাতীয় খাবার হিসাবে চিকেন স্যুপ, ভেজিটেবল স্যুপ, ফলের রস, লেবুর শরবত, মালটা ও অরেঞ্জ জুস, ডাবের পানি, মিল্ক সেক, দুধ-দই , বিভিন্ন ফল দিয়ে তৈরি স্মুদি ইত্যাদি রাখা যায়।
ফলের রসঃ
ভিটামিন সি যুক্ত যেকোন ফলের রস এসময়ে বেশি বেশি পান করতে হবে। ঘরে তৈরি ভিটামিন সি–যুক্ত তাজা ফলের রস যেমন লেবু, কমলা, মাল্টা, জাম্বুরা, আনারসের রস(চিনি ছাড়া) দ্রুত জ্বরের সংক্রমণ কমাতে খুব কার্যকরী।
চিকেন স্যুপঃ
ক্যালরি সরবরাহ করার ক্ষেত্রে চিকেন স্যুপের বিকল্প কিছু নেই। জ্বরের সাথে যদি বমি বা ডায়ারিয়া থাকে, তাহলে স্যুপ আপনার শরীরের ইলেকট্রোলাইটস ব্যালান্স করতে সাহায্য করে। স্যুপের মধ্যে একটু সবজি যোগ করে দিলে তা থেকে ভিটামিন, মিনারেলস ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট পাওয়া যাবে। যা আপনাকে দ্রুত আরোগ্যলাভে সাহায্য করবে এবং জ্বর পরবর্তী দুর্বলতা কমাতেও সাহায্য করে।
মসলাযুক্ত চাঃ
এ সময় মসলাযুক্ত চা খুবই উপকারী। মসলাযুক্ত চায়ের অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুনাগুন আছে। চায়ের সাথে লেবু, তুলসীপাতা, পুদিনাপাতা ও লং মিশিয়ে খেলে তা বেশি উপকারী।
মিল্কশেকঃ
অন্যান্য যেকোন তরল খাবারের চেয়ে মিল্কশেক একটি বেশি ক্যালরিবহুল খাবার। এরসাথে কিছু ওটস, কিশমিশ , আম, খেজুর, বাদাম , কলা ইত্যাদি যোগ করে দিলে এরপুষ্টিগুন কয়েকগুন বেড়ে যায়। ডায়রিয়ার সমস্যা থাকলে মিল্কশেক খাওয়া থেকে বিরত থাকলে হবে।
ডাবের পানিঃ
পানিশূন্যতা কমাতে, তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষয় এবং ইলেকট্রোলাইটসের যে ঘাটতি পূরণে ডাবের পানির খুবই কার্যকরী।
২) নরম খাবার
যেহেতু তরল খাবারে ক্যালরি কিছুটা কম, তাই তরলের পাশাপাশি নরম খাবারও দিতে হবে। নরম খাবার রোগীকে বেশি চিবাতে হয় না, সহজে গিলতে পারে এবং সহজে হজম হয়। নরম পাতলা খিচুড়ি, পাতলা সুজি, জাউভাত, পুডিং, পায়েস ইত্যাদি নরম খাবার হিসাবে দেওয়া যাবে।
পাতলা খিচুড়িঃ
চাল, ডাল, সবজি ও মুরগি দিয়ে রান্না করা পাতলা খিচুড়ি জ্বরের রোগীর জন্য একটি আদর্শ সুষম খাবার। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন এবং মিনারেলের চাহিদা পূরণ করে শারীরিক দুর্বলতা দূর করে।
দুধ-সাগু/সুজিঃ
দুধ দিয়ে তৈরী পাতলা সাগু বা সুজি বেশ পুষ্টিগুন সম্পন্ন খাবার। এটি সহজে হজম হওয়ায় দ্রুত শক্তি যোগায়। দিনে অন্তত একবার দুধ-সাগু/সুজি দিলে রোগী যথেষ্ট শক্তি পাবে।
জাউ ভাতঃ
জাউ ভাত জ্বরের সময় বেশ উপকারী একটি খাবার। এটিও খুব সহজপাচ্য খাবার হওয়ায় শরীরে দ্রুত শক্তিত যোগান দেই। জাউভাতের সাথে কম মসলাযুক্ত পাতলা ঝোল করে রান্না পেঁপে, লাউ, মুরগির মাংস খুব উপকারী।
ডিমঃ
খুব সহজেই প্রোটিনের চাহিদা পুরণে সিদ্ধ ডিম খেতে হবে। ডিমের তৈরী পুডিংও প্রোটিনের চাহিদা পুরণে সক্ষম।
টক দইঃ
টকদই প্রোবায়োটিকসের ভালো উৎস , যা সবধরনের খাবারের হজমক্রিয়াকে আরো সহজ করে। টক দই দিয়ে তৈরী মাঠা, লাচ্ছি ক্যালরী প্রদানের পাশাপাশি মুখের রুচি ফেরাতেও সাহায্য করে।
খাওয়া নিষেধঃ
ফাস্টফুড, ভাজাপোড়া খাবার, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত শক্ত খাবার, আধাসিদ্ধ খাবার খাবেন না। দুধ চা ও কফি, কোল্ড ড্রিংকস টাইপের খাবারগুলো আপনার আরোগ্যলাভকে আরো দীর্ঘায়িত করবে। তাই এসব খাবার খাবার এড়িয়ে গেলেই ভালো
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/Nutritionist.Iqbal
লেখক
পুষ্টিবিদ মোঃ ইকবাল হোসেন
বিএসসি (সম্মান), এমএসসি (প্রথম শ্রেণী) (ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি)
পুষ্টি কর্মকর্তা
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল
জাকির হোসেন রোড, খুলশি।
চট্টগ্রাম।
চেম্বারঃ
সার্জিস্কোপ হাসপাতাল, ইউনিট-২, কাতালগঞ্জ, চট্টগ্রাম।
প্রতিদিন সন্ধ্যা ৫ঃ৩০-৮ঃ০০ টা
চেম্বারঃ
হাটহাজারী ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
প্রতি বুধবার বিকাল ৩ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত।
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/Nutritionist.Iqbal