'ফিস্টুলাকে' বাংলায় 'ভগন্দর' বলা হলেও এর সহজ বাংলা হল নালি। মলদ্বারের ভেতরের সঙ্গে বাইরের 'নালি' তৈরি হওয়াকে বলা হয় ফিস্টুলা।
কেন ফিস্টুলা হয় ??
মলদ্বারের ভেতরে অনেকগুলো গ্রন্থি রয়েছে। এগুলোর সংক্রমণের কারণে ফোঁড়া হয়। এক সময় এই ফোঁড়া পেঁকে যায় এবং ফেটে গিয়ে মলদ্বারের চতুর্দিকের কোনো এক স্থানের একটি ছিদ্র দিয়ে পুঁজ নির্গত হতে থাকে। মলদ্বারের আশেপাশের কোনো স্থানে এক বা একাধিক মুখ দিয়ে মাঝে মাঝে পুঁজ বের হয়ে আসাকে ফিস্টুলা বা ভগন্দর বলা হয়। সহজভাবে বললে,, 'ফিস্টুলা ' হলো, মলদ্বারের বিষফোঁড়া বা ফোড়া ফেটে গিয়ে যে নালি তৈরি হয় তাই। অনেক সময় ফিস্টুলা এবং বিষফোঁড়া একই সঙ্গে প্রকাশ পায়।
মলদ্বারের ক্যান্সার এবং বৃহদান্ত্রের প্রদাহজনিত রোগেও ফিস্টুলা হয়ে থাকে। মলদ্বারের যক্ষ্মার কারণেও ফিস্টুলা হতে পারে।
ফিস্টুলার প্রকারভেদঃ
ফিস্টুলা সাধারণতঃ দুটি পর্যায়ের হয়ে থাকে।
সাধারণ ফিস্টুলাঃ
এটি মলদ্বারের মাংসপেশির খুব একটা গভীরে প্রবেশ করে না। ফলে এর চিকিৎসা তুলনামূলকভাবে সহজসাধ্য।
জটিল ফিস্টুলাঃ
এর বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। এটা নির্ভর করে এর শেকড় মলদ্বারের মাংসের কতটা গভীরে প্রবেশ করেছে।
রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষাঃ
সাধারনভাবে চিকিৎসকরা রোগীর ইতিহাস শুনে ফিস্টুলার প্রকারভেদ সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর সমস্যা শুনে এবং 'মলদ্বার দেখে বা মলদ্বারে আঙুল দিয়ে পরীক্ষা করে এবং প্রক্টোস্কপি করে ফিস্টুলা রোগটি সনাক্ত করা যায় '
এছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শ মত আরও কিছু পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন-
- এম আর আই (MRI fistulogram) জটিল ফিস্টুলার ক্ষেত্রে
- এন্ডোরেকটাল আলট্রাসাউন্ড করে ফিস্টুলার প্রকারভেদ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
- মলদ্বারের যক্ষা, বৃহদন্ত্রের প্রদাহ কিংবা মলদ্বারের ক্যান্সার থেকে ফিস্টুলা হয়েছে এমন সন্দেহ হলে চিকিৎসকরা কোলনোস্কপি করে থাকেন।
চিকিৎসাঃ
এ রোগের একমাত্র চিকিৎসা 'অপারেশন ' আমি আবার বলছি,,, একমাত্র অপারেশন হল ফিস্টুলার স্থায়ী সমাধান । কিন্তু কেন ??? কারন - অপারেশনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক সংযোগটি(নালি) সম্পূর্ণভাবে কেটে ফেলতে হয়। যদি কোনো অংশ থেকে যায় তবে তা থেকে আবার এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকি আরও বেশি জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
আমরা কোথায় ভুল করি ??
অনেক ক্ষেত্রে রোগী ব্যথা, মলদ্বারের পাশে ফোলা এবং নিজে থেকে ফেটে গিয়ে পুঁজ বা পানি ঝরা কিংবা বিষফোঁড়ার জন্যে চিকিৎসকের কাছে আসেন। পরবর্তীতে পুঁজ বা পানি পড়লে ব্যথা কমে যায়, রোগী কিছুটা আরাম বোধ করেন এবং কিছুদিনের জন্যে রোগী মোটামুটি ভালো হয়ে যান। এ সময় রোগী ভাবেন যে তিনি ভালো হয়ে গিয়েছেন, ফলে চিকিৎসকের কাছে আসেন না। আবার অনেক রোগী ব্যথার সময় ফার্মেসী থেকে অ্যান্টিবায়োটিক এবং ব্যথার ওষুধ কিনে খান এবং ব্যথা ভালো হলে এ সমস্যার কথা আর মনে থাকে না। এভাবে বছরের পর বছর চলতে থাকলে ব্যপারটি জটিল আকার ধারন করে এবং রোগী জটিলতা নিয়ে আবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ফিস্টুলা রোগ কি হোমিওপ্যাথি বা কবিরাজি চিকিৎসায় ভালো হয়?
কখনই ভালো হয়নি, এর কোন প্রমান নেই, হয়তো অস্থায়ীভাবে পুজ বা পানি পরা বন্ধ থাকে কিন্তু আবার কিছুদিন পর আগের অবস্থা ফিরে আসে। হোমিওপ্যাথি বা কবিরাজি এগুলো ফিস্টূলা চিকিৎসায় নিরাময় হয় না। এক কথায় যে নালি হয়েছে সেটা ফেলে দিতে হবে বা বন্ধ করে দিতে হবে ।
ফিস্টুলা রোগ তাহলে কি চিকিৎসা বা অপারেশনে ভালো হয় ?
উত্তর : অবশ্যই ।
বর্তমানে এ রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রচলিত যে অপারেশন পদ্ধতিগুলো 'আমি ' করি
1. ফিস্টুলোটোমি,
2. ফিস্টুলেকটোমি,
3. মলদ্বারের মাংসপেশির মাঝখানের নালি বন্ধ করে দেয়া(LIFT procedure).
4. সেটন(জটিল ফিস্টুলার ক্ষেত্রে)
মনে রাখবেনঃ
ফিস্টুলা রোগ চিকিৎসা করলে ১০০% ভালো হয়ে যায় সুতরাং এ রোগ হলে অনেকে লোকলজ্জার ভয়ে দীর্ঘদিন লুকিয়ে রেখে, আরো জটিলতর হয়, এতে ধীরে ধীরে তার কম্পলিকেশন যেমন বাড়তে থাকে, তেমনি জীবনও বিষাদময় হয়ে উঠে।
অপারেশন খরচ খুবই কম এবং মাত্র ১ দিনেই অপারেশন করে ছুটি ।
ডাঃ মোঃ মাজেদুল ইসলাম
এমবিবিএস, এফসিপিএস (সার্জারি)
জেনারেল, কোলোরেক্টাল এবং ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন।
সহকারী অধ্যাপক ,মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মানিকগঞ্জ।
চেম্বার:
ডেলটা কেয়ার হাসপাতাল লি.
মিরপুর কেন্দ্রীয় মসজিদ কমপ্লেক্স, মিরপুর ১১
সিরিয়ালের জন্য : 02-58055111-15, 01407-075714,০১৭১২১২৭৫৭৩
(মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ ঘটিকা থেকে ১০ ঘটিকা )
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/emonsurgeon