পাইলস কি?
মলদ্বারের অনেক রোগ আছে। তবে সাধারন মানুষ মলদ্বারের যেকোনো সমস্যাকেই পাইলস মনে করে। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারনা। পাইলস ছাড়াও অনেক রোগ আছে (যেমন মলদ্বারের কান্সার) যাতে একই ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। আমাদের মলদ্বারে সাধারনত ৩ টি এনাল কুশন থাকে যা মলদ্বারের মুখ বন্দ রাখে,যাতে বাতাস বা নরম পায়খানা যখন তখন বের হতে না পারে।যখন এই এনাল কুশন (রক্তনালীর মাংসপিন্তগুলো) স্বাভাবিকের তুলনায় বড় হয়ে বিভিন্ন উপসর্গ (যেমন- মলদ্বার দিয়ে রক্ত যাওয়া বা মলদ্বার দিয়ে মাংস পিন্ড বের হয়ে আসা) তৈরি করে তখনই আমরা একে পাইলস বা হেমোরয়েড বলি। তবে গ্রাম বাংলায় এটা অর্শ নামে বহুল পরিচিত।
কোন বয়সে হয়?
যে কোন বয়সে হতে পারে। তবে সাধারনত যুবক ও বয়স্ক মানুষের বেশি হয়। বাচ্চাদের হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
পাইলসের প্রকারভেদ:
• External hemorrhoids- মলদ্বারের বাইরে থাকে।
• Internal hernorrhoids- মলদ্বারের ভেতরে থাকে।
• Interoexternal haemorrhoids- মলদ্বারের ভিতর থেকে বাহিরে থাকে।
অভ্যন্তরীন পাইলস আবার ৪ প্রকার-
• গ্রেড-১: শুধু রক্তপাত হয়, ব্যাথামুক্ত, কোন মাংসপিণ্ড বের হয় না।
• গ্রেড-২: রক্তপাত হয়, ব্যাথামুক্ত, মাংসপিণ্ড বের হয় কিন্তু হাতে লাগে না।
• গ্রেড-৩: রক্তপাত হয়, ব্যাথামুক্ত, মাংসপিণ্ড বের হয়, হাতে লাগে। তা আঙ্গুল দিয়ে ভেতরে ঢুকাতে হয়।
• গ্রেড-৪: মাংসপিণ্ড মলদ্বার দিয়ে বের হলে তা আর ঢুকানো সম্ভব হয় না।
পাইলস কেন হয় (কারণসমূহ):
• দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাতলা পায়খানা।
• শাক সবজি ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার এবং পানি কম খাওয়া।
• মাংশ জাতীয় খাবার, ফাস্ট ফুড, বেশি মসলাযুক্ত, ঝাল ও চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া।
• শরীরের অতিরিক্ত ওজন।
• গর্ভাবস্থা।
• লিভার সিরোসিস।
• মল ত্যাগে বেশী চাপ দেয়া।
• ঘনঘন পায়খানা নরমকারক ওষুধ ব্যবহার করা।
• টয়লেটে প্রয়োজনের অধিক সময় ব্যয় করা।
• বৃদ্ধ বয়স।
• বংশগত পাইলস থাকা।
• ভারী exercise করা, বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা।
• নিয়মিত টয়লেট / মলত্যাগ না করা।
পাইলস কিভাবে বুঝব ?
• পায়খানার সময় ব্যথাহীন রক্তপাত হওয়া।
• মলদ্বারের ফোলা বাইরে বের হয়ে আসতে পারে।
• মলদ্বারে জ্বালাপোড়া, যন্ত্রণা বা চুলকানি হওয়া।
• জতিলতা হলে কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যথা হতে পারে।
পাইলস নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা:
• সাধারনত পাইলস নির্ণয়ে তেমন কোনো পরীক্ষা- নিরীক্ষার প্রয়োজন হয় না।
• মলদ্বার দেখে, আঙুল দিয়ে পরীক্ষা করে এবং প্রক্টোস্কোপী করে নির্ণয় করা হয়।
• তবে অন্য কোনো রোগ আছে কিনা যেক্ষেত্রে একই ধরনের লক্ষণ দেখা যায় (যেমন- পলিপ, ক্যান্সার, IBD) সেই সন্দেহ দূর করার জন্য full or short colonoscopy করা হয়।
পাইলস রোধে কি করব ?
• শাক সবজি বেশি খাবেন,মাংশ কম খাবেন।
• ফাস্ট ফুড, বেশি মসলাযুক্ত, ঝাল ও চর্বি জাতীয় খাবার খাবেন না।
• পানি বেশি খাবেন,সফট ড্রিংকস খাবেন না।
• বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন না।
• নিয়মিত ব্যায়াম করবেন।
• দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাতলা পায়খানা এড়িয়ে চলবেন।
• নিয়মিত টয়লেট / মলত্যাগ করুন।
• শরীরের ওজন কমান ।
• অধিক সময় টয়লেটে বসে থাকবেন না।
• মলদ্বার শুষ্ক ও পরিষ্কার রাখুন ।
• প্রয়োজনে রাতে ও সকালে ২ মুঠ ঈশপ গুলের ভুষি পানিতে / লেবুর শরবত / দুধ / ফলের রসের সাথে ভিজিয়ে খেতে পারেন।
পাইলস কি পুরোপুরি ভালো হয়?
এটা খুবই common একটা প্রশ্ন। হ্যাঁ, পাইলস অবশ্যই ভালো হয় । তবে depend করে কোন grade এ আছে তার উপর। চারটা grade আছে। চিকিৎসা ও নির্ভর করে কোন grade এ আছে তার উপর। আর ভালো হওয়া নির্ভর করে proper treatment হচ্ছে কিনা, এবং সঠিক diagnosis হয়েছে কিনা তার উপর।
আপনাকে অবশ্যই একজন ভালো colorectal surgeon এর সাথে কথা বলতে হবে । Early stage এ medicine এই ঠিক হয়ে যায় । কিন্তু advanced stage এ operation লাগে ।অনেক গুলো সার্জারির options আছে । প্রায় ১৫ থেকে ২০ ধরনের সার্জারি করার সুযোগ আছে। অধিকাংশ operation ই ব্যথামুক্ত ও রক্তপাতহীন । স্বাভাবিক জীবন যাপন এ কোন সমস্যা হয় না।
এটা কি পুনরায় হতে পারে?
এটাও একটা খুবই common একটা প্রশ্ন। হ্যাঁ, হতে পারে। তবে তা নির্ভর করে সঠিক রোগ নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসা হইছে কিনা তার উপর। পাশাপাশি আপনার লাইফ স্টাইল ও আপনি নিয়ম কানুন মানছেন কিনা তার উপর। সাধারনত সঠিক চিকিৎসা হলে এবং নিয়ম মেনে চললে পুনরায় হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।
অপচিকিৎসা?
দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ‘অপচিকিৎসা’ পাইলসের হয়। ‘অপচিকিৎসা’ রোগের জটিলতাকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। ‘অপচিকিৎসা’ হলে পুনরায় রোগীকে সুস্থ করতে চিকিৎসকেরও অনেক বেগ পেতে হয়। তথাকথিত চিকিৎসক নামধারী কিছু ব্যক্তি, চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোন জ্ঞান ছাড়াই এইসব রোগের অপচিকিৎসা করছেন, আর হাজার হাজার ভুক্তভোগী রোগী প্রতিদিন প্রতারণার শিকার হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিষাক্ত কেমিক্যাল ইনজেকশন ও কালো রঙের পাউডার জাতীয় এক ধরনের এসিড মলদ্বারে ব্যবহার করেন। ফলে মলদ্বারের মাংসপেশিতে পচন ধরে এবং তীব্র ব্যথা-যন্ত্রণা ও দুর্গন্ধ হয়।রোগীদের প্রলুব্ধ করা হয় বিনা অপারেশনে চিকিৎসা এবং ১০০% গ্যারান্টি, বিফলে মূল্য ফেরত এই জাতীয় কথা বলে।এরপর যখন বিষাক্ত কেমিক্যাল প্রয়োগ করা হয় তখন তীব্র ব্যথা ও যন্ত্রণা শুরু হয়, তখন উপশমের জন্য অতিরিক্ত মাত্রার বিভিন্ন ধরনের ব্যথানাশক ইনজেকশন বা ঔষধ ব্যাবহার করে।অনেকের পায়খানার রাস্তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায় এবং পেটে ব্যাগ লাগানো লাগে। পায়খানার রাস্তা নতুন করে বানাতে হয়। ফলে অনেক জটিল সার্জারির প্রয়োজন হয়। অনেকের পায়খানা ধরে রাখতে সমস্যা হয়। সবসময় অনবরত চুইয়ে চুইয়ে পায়খানা বের হয়। কাপড় চোপর নষ্ট হয়ে যায়। প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে মলদ্বার আবার তৈরি করতে হয় যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং জটিল একটি সার্জারি। অনেক সময় অপচিকিৎসার কারণে অনেক রোগী প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যান। অনেকের শরীরের বিভিন্ন অংশ অবশ হয়ে যায়। বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করার কারনে nerve এ সমস্যা হয় যার ফলে স্নায়ু দৌর্বল্য দেখা দেয়।অনেকের ক্ষেত্রে স্থায়ী ভাবে শরীর অবশ হয়ে যায়। আবার অনেকের আংশিক অবশ হয়ে যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।তাই এ ধরনের চিকিৎসা এখন আর করা হয় না। কারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনেক বেশি। অনেক সময় মলদ্বার চাপা হয়ে আসে। পায়খানা করতে সমস্যা হয়। এনাল ফিসার ও মলদ্বার সংকোচনের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাছাড়া এখন অনেক ভালো চিকিৎসা হাতের কাছেই আছে। তবে পাইলসের চিকিৎসা depend করে কোন grade এ আছে, আর proper treatment হচ্ছে কিনা।আর এ জন্য আপনাকে অবশ্যই একজন ভালো colorectal surgeon এর সাথে কথা বলতে হবে। তাই সময় থাকতে আসুন আমরা নিজেরা সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি, আর অপচিকিৎসাকে না বলি। সবাই সুস্থ থাকি, ভালো থাকি। কেননা সুস্থতা আল্লাহর সবচেয়ে বড় নিয়ামত।
ধন্যবাদ
ডাঃ মোঃ আশেক মাহমুদ ফেরদৌস
FCPS(surgery) FISCP(India) Ms(Colorectal Surgery) Bangabandhu Sheikh Mujib Medical Univarsity
Chamber: নেক্সাস হাসপাতাল-ঢাকা রোড - ময়মনসিংহ
Contact:01796586561
www.facebook.com/Colorectal-Care-Dr-Md-Ashek-Mahmud-Ferdaus-911427482298482/