মলদ্বারের ব্যথা খুবই common একটা সমস্যা। জীবনের কোন এক সময় এই সমস্যার সম্মুখীন হন নাই এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। আর এনাল ফিশার হচ্ছে মলদ্বার ব্যাথার একটা প্রধান কারণ। আর ফিসার মানে মলদ্বারে ঘা অথবা ফেটে যাওয়া ।
ফিসার কয় ধরনের?
এটি দুই ধরনের হয়। তীব্র (একিউট) ফিশার হলে রোগীর মলদ্বারে অসম্ভব ব্যথা হয়। দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) ফিশারে ব্যথার মাত্রা কম থাকে তবে অস্বস্তি বেশি থাকে।
কাদের হয় ?
বাচ্চা থেকে বয়স্ক যে কারো হতে পারে।
ফিসার কেন হয় (কারণসমূহ):
• দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাতলা পায়খানা।
• শাক সবজি ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার এবং পানি কম খাওয়া ।
• মাংশ জাতীয় খাবার, ফাস্ট ফুড, বেশি মসলাযুক্ত, ঝাল ও চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া।
• শরীরের অতিরিক্ত ওজন।
• গর্ভাবস্থা।
• মল ত্যাগে বেশী চাপ দেয়া বা কোত দেয়া।
• ঘনঘন পায়খানা নরমকারক ওষুধ ব্যবহার করা।
• টয়লেটে প্রয়োজনের অধিক সময় ব্যয় করা।
• আঙ্গুল দিয়ে পায়খানা বের করা।
• বংশগত কারন।
• নিয়মিত টয়লেট / মলত্যাগ না করা।
উপসর্গ :
মলদ্বারে ফিশারের প্রধান লক্ষণ ব্যথা ও রক্তক্ষরণ। এ ধরনের ব্যথা সাধারণত মলত্যাগের অব্যবহিত পরে হয় এবং কয়েক মিনিট থেকে বহু ঘণ্টা ধরে ব্যথা চলতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) এনাল ফিশারের রোগী একটু ভিন্ন ধরনের উপসর্গের কথা বলে। তাদের ক্ষেত্রে কখনও কখনও মলদ্বারে অতিরিক্ত মাংসপিণ্ড, পুঁজ পড়া, চুলকানি অথবা এসব একত্রে দেখা দিতে পারে।
তীব্র ব্যথা সম্পন্ন ঘা (একিউট এনাল ফিশার) :
• তীব্র ব্যথা হয়।
• পায়খানা করতে ভয় কাজ করে।
• মনে হয় একটা ব্লেড উপর থেকে কাটতে কাটতে নিচে নামছে।
• রক্তপাত সাধারনত কম হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পায়খানার গাঁয়ে লাগানো থাকে।
• এ সময় মলদ্বার পরীক্ষা করলে দেখা যায় সেটা খুবই সঙ্কুচিত অবস্থায় আছে।
দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা সম্পন্ন ঘা (ক্রনিক এনাল ফিশার) :
• এ ক্ষেত্রে একটি মাংসপিণ্ড বা 'গেজ ' দেখা যায়।
• রক্তক্ষরণ থাকতে পারে অথবা নাও থাকতে পারে।
• ব্যথা সাধারণত তীব্র হয় না অথবা অনেক সময় ব্যথা থাকেই না।
• মহিলারা কখনও কখনও শারীরিক মিলনে ব্যথা অনুভব করেন।
• এ ক্ষেত্রে পায়ুপথের ভেতর যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা উচিত।
• এ ফিশার সংক্রমিত হয়ে কখনও কখনও ফোঁড়া দেখা দিতে পারে এবং তা থেকে ফিস্টুলা (ভগন্দর) হয়ে পুঁজ পড়তে পারে।
ফিসার রোধে কি করব ?
• শাক সবজি বেশি খাবেন ,মাংশ কম খাবেন।
• ফাস্ট ফুড, বেশি মসলাযুক্ত, ঝাল ও চর্বি জাতীয় খাবার খাবেন না।
• পানি বেশি খাবেন, সফট ড্রিংকস খাবেন না।
• দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাতলা পায়খানা এড়িয়ে চলবেন।
• নিয়মিত টয়লেট / মলত্যাগ করুন।
• শরীরের ওজন কমান ।
• অধিক সময় টয়লেটে বসে থাকবেন না।
• প্রয়োজনে রাতে ও সকালে ২ মুঠ ঈশপ গুলের ভুষি পানিতে / লেবুর শরবত / দুধ / ফলের রসের সাথে ভিজিয়ে খেতে পারেন।
চিকিৎসা :
• একিউট এনাল ফিশার শুরুর অল্পদিনের মধ্যেই চিকিৎসা শুরু হলে বিনা অপারেশনে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
• ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
• হিপ বাথ- এক গামলা কুসুম গরম পানিতে ৬ চামচ Acriflavin Solution মিশিয়ে মলদ্বার ভিজিয়ে বসে এবং পরিষ্কার করতে পারেন প্রতিদিন ৩ বার করে ২১ দিন।
• স্থানিক অবশকারী মলম ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়।
• এতে যদি পুরোপুরি না সারে এবং বেশি দিন স্থায়ী হয় তাহলে অপারেশন ছাড়া ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কমতে থাকে।
সার্জিক্যাল চিকিৎসা :
• মলদ্বারের মাংসপেশির সম্প্রসারণ করা (Manual এনাল ডাইলেটেশন)- এ পদ্ধতিটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি। পুনরায় হওয়ার সম্ভাবনা ও অনেক বেশি।
• মলদ্বারের স্ফিংটারে অপারেশন(PLIS) : এই অপারেশনে মলদ্বারের অভ্যন্তরীণ স্ফিংটার মাংশপেশিতে একটি সূক্ষ্ম অপারেশন করতে হয়। পরদিন রোগী বাড়ি যেতে পারে ও স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেন।
লেখক
ডাঃ মোঃ আশেক মাহমুদ ফেরদৌস
FCPS(surgery) FISCP(India) Ms(Colorectal Surgery) Bangabandhu Sheikh Mujib Medical Univarsity
Chamber:
নেক্সাস হাসপাতাল-ঢাকা রোড - ময়মনসিংহ
Contact:01796586561
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/Colorectal-Care-Dr-Md-Ashek-Mahmud-Ferdaus-911427482298482