আলসার কথার অর্থ হল ক্ষত। পরিপাকতন্ত্রে বেশি মাত্রায় অ্যাসিড তৈরি হলেই এই সমস্যা হয়। তবে অনেক সময় অ্যাসিডের মাত্রা ঠিক থাকলেও আলসার হতে পারে।
মানুষের পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড নামক খুব শক্তিশালী এসিড তৈরি হয়ে থাকে।এই এসিড পাকস্থলীর ভেতরের দেয়ালে ক্ষত তৈরি করে। তবে এই এসিডকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য রয়েছে আমাদের শরীরের বেশ শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা যা পাকস্থলি দেয়াল হতে নি:সৃত প্রতিরোধি রস, পিত্তথলী হতে আসা পিত্তরস ও খাদ্যনালীর দেয়ালের শক্ত মিউকাস মেমব্রেন আলসার হতে বাধা দেয়। এই প্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণে আমাদের আলসার হয়না।
কিন্তু যখন এই ব্যবস্থার মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় তখন দেখা দেয় বিপত্তি। এসিডের পরিমান বেশি হলে বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা দূর্বল হয়ে পরলে পাকস্থলীর গায়ে, ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশে এবং অন্ননালির শেষাংশে ক্ষত আলসার হয়। পেটের এই অসুখের নামই পেপটিক আলসার।
পেপটিক আলসার যে শুধু পাকস্থলীতেই হয়ে থাকে তা কিন্তু নয়, বরং এটি পৌষ্টিকতন্ত্রের যেকোনো অংশেই হতে পারে। সাধারণত পৌষ্টিকতন্ত্রের যে যে অংশে পেপটিক আলসার দেখা যায়, সেগুলো হচ্ছে –
অন্ননালীর নিচের প্রান্ত
পাকস্থলী
ডিওডেনামের বা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশ এবং
পৌষ্টিকতন্ত্রের অপারেশনের পর যে অংশে জোড়া লাগানো হয় সে অংশে।
আলসার হওয়ার সম্ভাবনা কখন বেশি?
১০ জনের মধ্যে একজনের আলসার বিকাশ ঘটে। আলসার ঝুঁকিপূর্ণ তখন যখন –
ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (এনএসএআইডি) এর ঘন ঘন ব্যবহার ঘটে
সাধারণ ব্যথা উপশমের ঔষধ যা আইবুপ্রোফেন (অ্যাডিলি বা মোটরিন) অন্তর্ভুক্ত ঔষধ
পারিবারিক ইতিহাস থেকে থাকলে
লিভার, কিডনি বা ফুসফুসের রোগের মতো অসুস্থতা থেকে থাকলে
নিয়মিত অ্যালকোহল পান করলে
ধূমপান করলে
পেটের আলসার হওয়ার কারণ
পেটের আলসার সাধারণত হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি (এইচ পাইলোরি) ব্যাকটিরিয়া বা নন স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (এনএসএআইডি) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ঔষধ এর কারণে হয়ে থাকে।
এরা খাদ্য হজমে ঝামেলা করে থাকে। যার ফলে পেটের আস্তরণের ক্ষতি হয় এবং সেখানে আলসার তৈরি হয়। যেকোনো বয়সের লোকেরা এ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রামিত হতে পারে।
নন স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (এনএসএআইডি) হল ব্যথা, উচ্চ তাপমাত্রা (জ্বর) এবং প্রদাহ (ফোলা) চিকিৎসার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ঔষধ।
এনএসএআইডি গ্রুপের মধ্যে রয়েছে –
আইবুপ্রোফেন,অ্যাসপিরিন,নেপ্রোক্সেন,ডিক্লোফেনাক।অনেক লোক কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই এনএসএআইডি গ্রহণ করে। তাই কেউ যদি দীর্ঘ সময় ধরে বা উচ্চ মাত্রায় গ্রহণ করে তবে আলসার হতে পারে।
আরো যে বিষয়গুলো রয়েছে তা হল-
অনিয়ন্ত্রিত লাইফস্টাইল
ঝাল খাবার গ্রহন
মানসিক চাপ
লক্ষণ কেমন হতে পারে
আলসারের সর্বাধিক কমন লক্ষণসমূহের একটি হচ্ছে, বদহজম। আলসার থাকলে প্রায়ক্ষেত্রে খাবার পরিপাক বেদনাদায়ক হয়, অনেক রোগী বলেন যে তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার বা জাঙ্কফুড খাওয়া কমিয়ে ফেললে বমি ভাব কমে যায়। কখনো কখনো বমি ভাব এত তীব্র হয় যে বমি হয়ে যেতে পারে। কখনও পাকস্থলী বা বুকে ব্যথা হয়। যা কিছুই খান না কেন, আপনার বারবার বুকজ্বালা হবে। তীব্র বুকব্যথা অনুভব হতে পারে। খাওয়ার পরে স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক ঢেকুর বা হিক্কার আসতে পারে । পেট স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ফাঁপা হতে পারে । অনেক আলসার রোগীদের খাবারের প্রতি আগ্রহ হ্রাস পায় বা ক্ষুধা কমে যায়। স্বাভাবিক পরিমাণে খাবার গ্রহণ সত্ত্বেও ওজন হ্রাস হতে পারে । নাভি ও বুকের মধ্যবর্তী স্থানে ব্যথা, খাবার খেলে ব্যথা চলে যায়, এটিও আলসারের লক্ষণ। পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্তে আলসার হলে কিন্তু আলসারের ব্যথা পিঠেও ছড়িয়ে পড়ে। পায়খানা হওয়ার সময় রক্তপাত হতে পারে ।
লেখক
পুষ্টিবিদ সিরাজাম মুনিরা
কনসালটেন্ট ডায়েটিশিয়ান
ইবনেসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল