ধাতু রোগ (ইংরেজি: Dhat syndrome) হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশের ভৌগোলিক অবস্থার কারণে এমন একটি অবস্থা যেখানে পুরুষ রোগীগণ মনে করেন, তারা অকাল বীর্যপাত ও ধ্বজভঙ্গের সমস্যায় ভুগছেন, এবং একই সাথে বিশ্বাস করেন যে তাদের প্রসাবের সাথে বীর্য বের হচ্ছে। অর্থাৎ ধাতু রোগে পুরুষাঙ্গ দৃঢ় না হওয়া সত্যেও অনিচ্ছাকৃত ভাবে বীর্যপাত হয় (কোনও যৌন কার্যকলাপ ব্যতীতই)। এই অবস্থার জন্য এখন অবধি কোনো জৈবিক শারীরবৃত্তিক কারণকে দায়ী করা যায় নি, ধারণা করা হয় ।সম্ভবত এ অবস্থাটি একটি মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা। Dhat Syndrome বা ধাতু সিন্ড্রোম বা ধাতু রোগ, এই সেই রোগ যেটা বাঙ্গালি পুরুষদের কমন রোগ । এটা এমনই এক সিন্ড্রোম যার সঙ্গাই এমন, শুধুমাত্র ভারতীয়কোন শারীরিক অসুস্থতা না থাকা স্বত্তেও এই সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হয় এবং তারা এবং দূর্বলতা(শারীরিক+যৌন) এই দুটি প্রধান উপসর্গ বহন করে।
আনুষঙ্গিক কিছু সমস্যা
যেমন বুকধড় ফড়, দুশ্চিন্তা, মেধা কমে যাওয়া, কম ঘুম ইত্যাদি থাকে।
এই ধাতু রোগ কিভাবে দেখা দেয়?
আপনি জানেন কি কামরস বা ধাতু বা বীর্য বের হওয়া কখন রোগ আর কখনই বা স্বাভাবিক? কেন এটা বের হয়?
চলুন একটু জেনে আসি।
পুরুষের প্রসাব নালির একটা অংশ আছে যার নাম মেমব্রেনাস ইউরেথ্রা ঠিক তার দুপাশে চিনা বাদামের মতো দেখতে গ্লান্ড বা গ্রন্থি থাকে (বাল্বোইউরেথ্রাল গ্লান্ড অব কাউপার)মূলত সেখান থেকে সর্দির মতো একটু পদার্থ বের হয়ে আসে যেটাকে মিউকাস বলে, এটা পাতলা পিচ্ছিল জাতীয় পর্দাথ যা যৌন উত্তেজনায় বেরিয়ে আসে যেটা মিলনকে সহজ করে এবং প্রসাব নালিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে সহায়তা করে।যখন শরীরে বা মস্তিষ্কে যৌন উত্তেজনা তৈরি হয় তখন লিঙ্গের কাউপার গ্লান্ডের চারপাশের পেশিগুলো সংকোচন প্রসারণের মাধ্যমে একধরনের চাপ সৃষ্টি করে ফলে এটা নিসৃত হয় আর এটা অনিচ্ছাকৃত হয়ে থাকে।এই নিঃসরণ যাদের অতিরিক্ত হয় তারা অনেকেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে যেটা সাইকোসেক্সুয়াল ডিসঅর্ডারে নিয়ে যায় পরবর্তীতে ধাতু রোগ / Dhat syndrome এ রুপান্তরিত করে।মনে রাখতে হবে সামান্য পরিমানে বের হওয়া,চরম উত্তেজনায় বেশি পরিমাণে বের হওয়াও কোন রোগ নয়।
কোথায় এর প্রাদুর্ভাব বেশি?
উপমহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশ ভারত,পাকিস্তান,নেপাল,শ্রীলংকায় এই রোগ সবচেয়ে বেশি।
লক্ষন
- প্রস্রাবের সাথে পানির মত ধাতু ক্ষয়
- প্রচন্ড দূর্বল লাগা
- বুক ধড়ফড় করা
- অলসতা ও ঘুমঘুম ভাব
- শরীর অবসাদ
- মনোযোগ না থাকা
- স্মরণ শক্তি কমে যাওয়া
- মেজাজ খিটখিটে হওয়া
- কাজ কর্মে ইতস্তত হওয়া
- উপস্থিত বুদ্ধি কমে যাওয়া
- অতিরিক্ত ঘুম
- সামান্য বিষয়ে বেশি মনখারাপ হওয়া
- দুশ্চিন্তা
- ডিপ্রেশন ইত্যাদি
কারন
1.ধাতু রোগ সাধারণত অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের কারনে শুরু হয় তবে সবার বেলায় নাও হতে পারে
2.প্রসাবের রাস্তায় ইনফেকশন
3.মাত্রারিতিক্ত অশ্লীল চিন্তা বা ছবি দেখা
4.সব সময় যৌন চিন্তা
5.অল্প বয়সেই যৌন অভিজ্ঞতা
6.সিফিলিস, গনোরিয়া
7.মাত্রারিক্ত স্বপ্ন দোষ
8.নার্ভের অতিসংবেদবশীলতা
9.কনস্টিপেশন
10.প্রোটিন খাবারের অভাবে
11.আঁটসাঁট আন্ডার ওয়ার পরা
12.সব সময় যৌন চিন্তা।
13.সেক্স হরমোন লেবেলের হেরফের
14.মস্তিষ্কের সেরোটোনিন লেবেল কম হওয়া ইত্যাদি।
পরীক্ষা নিরীক্ষা
সিবিসি,ব্লাড সুগার ও সেক্স হরমোন লেবেল দেখা
ধাতু রোগ এর প্রতিরোধে করণীয় কি?
ধাতু রোগ প্রতিরোধের কোন সঠিক উপায় নেই। কিন্তু আপনি যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনার শুক্রাণুর কার্যকারিতা এবং মান উন্নত করতে পারেন এবং বীর্যপাতের উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করতে পারেন। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের দ্বারা প্রস্তাবিত ভেষজ ওষুধ এবং গৃহ চিকিৎসা ধাতু রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। এর মধ্যে কয়েকটি নিচের অংশে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিকিৎসা
- অশ্লীল জিনিস থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা
- ব্যায়াম বা খেলাধুলা করা
- মেডিটেশন বা ধ্যান করা
- শাক সবজি, দুই এক রকমের টাটকা ফল খাওয়া
- তাড়াতাড়ি ঘুমানো
কাঠ বাদাম, পেস্তা বাদাম, কাজু বাদাম নিয়মিত খেতে হবে কারন এতে মস্তিষ্কে সেরোটোনিন লেবেল বৃদ্ধি পাবে। আর সঠিক সময়ে বিয়ে করতে হবে, স্ত্রীর সাথে নিয়মিত সহবাস করতে হবে। ব্যস্ত আনন্দময় সময় কাটাতে হবে,অলসতা পরিহার করতে হবে।রাতে তাল মাখনা পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খাওয়া যেতে পারে। তারপর ও ঠিক না হলে ট্রাংকুলাইজার জাতীয় মেডিসিন ডাক্তারের পরামর্শে দীর্ঘ সময় নিয়ে খেতে হবে।
কগনিটিভ বিহ্যাভিওরাল থেরাপি , অন্যান্য ক্ষেত্রে কাউনসেলিং, এন্টি-এনজাইটি এবং এন্টিডিপ্রেসেন্ট জাতীয় ওষুধের প্রয়োগ করতেও দেখা গিয়েছে। রাত্রিকালীন ধাতু রোগের চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। ২০ বছর বয়সের পরে এই রোগ নিজে থেকেই নিরাময় হয়ে যায়। যৌন সঙ্গম বা হস্তমৈথুন কম করলে রাত্রিকালীন বীর্যপাত ঘন ঘন হয়।
ধাতু রোগের কারণের উপর নির্ভর করে ধ্যান করবার পরামর্শ দেওয়া হয়। ভেষজ ওষুধও ধাতু রোগে সাহায্য করে।
ধাতু রোগ নিয়ন্ত্রণে কিছু খাদ্য সাহায্য করে, যেমন আনারস, বড়ই এবং মাটির নিচে হওয়া সবজি যেমন আদা এবং পিঁয়াজ।
ধাতু রোগের জন্য ভেষজ ওষুধ:
a)সারা রাত ভিজিয়ে রাখা এলমণ্ড বাদামের সাথে এক গ্লাস দুধ।
b)দুই তিনটি জাফরান’এর সাথে এক গ্লাস গরম দুধ।
c)তিন থেকে চারটি রসুনের কোয়া রোজ চিবিয়ে খেতে হবে।
d)ভেষজ অনুমোদিত বিধি: অশ্বগন্ধা, বালা এবং বিদার এবং ছাগলের গরম দুধ (ছাগলের দুধ গরুর দুধের চেয়ে বেশি প্রভাবশালী, কিন্তু ছাগলের দুধ না পাওয়া গেলে গরুর দুধ চলবে)।
e)প্রত্যেক দিন এক কাপ গরম পানিতে অর্ধেক টেবিল চামচ পূর্ণ এস্পারাগাস।
f)প্রত্যেক দিন সকালে দুধের সাথে এক টেবিল চামচ পূর্ণ লাজবন্তী গুড়ো।
ধাতু রোগে জীবনধারার পরিবর্তনঃ
নিজের যত্নের টিপসগুলির একটি তালিকা নিচে দেওয়া আছে যা আপনাকে ধাতু রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করতে পারে।
হালকা সান্ধ্যভোজন করুন।
রাত্রে শক্ত গদিতে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
ঘুমানোর সময়ে আঁট অন্তর্বাস বা বস্ত্র পড়বেন না।
পুষ্টিকর এবং সুষম খাদ্য ভোজন করুন যাতে থাকবে প্রচুর কাঁচা এবং তাজা সবজি এবং ফল।
মদ্যপান কমিয়ে দিন।
ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে সকালে তাড়াতাড়ি বিছানা ছাডুন, কারণ ধাতু রোগ সাধারণত শেষ রাতে হয়।
যৌনাঙ্গের জায়গা পরিষ্কার রাখুন।
কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নিন।
কেগেল ব্যায়াম করলে পেলভিকের মেঝের পেশী শক্তিশালী হয় এবং এতে ধাতু রোগ নিয়ন্ত্রিত হয়। আপনার পেলভিকের মেঝের পেশী (যে পেশী আপনার মূত্রাশয়, অন্ত্র, এবং প্রস্রাবের নালীকে ধরে রাখে)
পাঁচ সেকেন্ডের জন্য সংকোচন করুন তারপর পাঁচ সেকেন্ডের জন্য শিথিল করুন। নিঃশ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। এই ব্যায়াম ১০ বার করুন। ব্যায়াম করার সময় যদি অসুবিধা বোধ করেন, তাহলে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিয়ে আবার চেষ্টা করুন।
মশলাদার খাবার পরিত্যাগ করুন।
ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করুন।
ঘুমানোর আগে প্রস্রাব করে নিন।
রাতে ঘুমানোর আগে পানি খাবেন না।
বই পড়ার এবং ভাল গান শোনার অভ্যাস করুন তাহলে আপনার মনের পরিবর্তন হবে এবং আপনার মন ব্যস্ত থাকবে।