বেশ কয়েকদিন ধরে চারপাশের অনেকের প্রশ্ন-
'আমি প্রেগন্যান্ট, আমি কি কোভিড টীকা নিতে পারব? কখন নিব?
কোভিড টীকা ১টা নেয়ার পর প্রেগন্যান্ট, এখন ২য় ডোজ নিব?
আমার বাচ্চা বুকের দুধ খায়,আমি কি টীকা নিব?
আমার মাত্র ডেলিভারি / এবরশন হয়েছে, টীকা নেয়া যাবে? ' --ইত্যাদি..ইত্যাদি।
সব প্রশ্নের জবাবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্ব স্বীকৃত দুই সোসাইটি RCOG(১৬.৪.২১) এবং ACOG(২৪.৪.২১) এর সর্বশেষ আপডেট কি বলে তা দেখে নিই।
এদের তথ্য মতে---
- অন্য সব বয়সী লোকের মত গর্ভবতীদেরও টীকা দেয়া যাবে, তবে অবশ্যই তাদের বয়স ও ঝুঁকি বিবেচনা করে এবং টীকার সুবিধা-অসুবিধা গ্রহিতার সাথে আলোচনা সাপেক্ষে। গর্ভবতী মহিলা ডাক্তারের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সব পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিবে টীকা নিবে কিনা।
- যেসব মায়েরা বাচ্চাকে বুকের দুধ দিচ্ছে তারাও নিতে পারবে টীকা।টীকা দেয়ার কারনে শিশুকে দুধ খাওয়ানো বন্ধ করার দরকার নেই।
- যারা বাচ্চা নেয়ার চেষ্টা করছে তারাও টীকা নিতে পারবে।টীকা নেয়ার কারনে সন্তান ধারনের চেষ্টা থেকে বিরত থাকার দরকার নেই।
- টীকা নেয়ার আগে প্রেগনেন্সি টেস্ট করার দরকার নেই।
- একটা টীকা নেয়ার পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ আসলে ২য় ডোজ নির্ধারিত সময়ে অথবা প্রথম তিন মাস(১২ সপ্তাহ গর্ভাবস্থা) পার করে দিতে পারবে।
- সিডিসির মতে কোভিডের জন্য স্বীকৃত সব টীকা প্রেগন্যান্সি ও ব্রেস্টফীডিং মাকে দেয়া যাবে।
- স্বাস্থ্যকর্মী,সোশ্যাল ওয়ার্কার,বয়স-ওজন-অন্যান্য রোগ বিবেচনায় যারা হাইরিস্ক কিন্তু প্রেগনেন্ট তাদের টীকা নিতে উপদেশ দেয়া হয়েছে । যেমন- যেসব প্রেগন্যান্ট মহিলার ডায়াবেটিস আছে এবং বয়স ৪৫ এর উপর তাকে টীকা নিতে হবে।
টীকা নেয়া কতটুকু নিরাপদ?
- mRNA টীকা(Pfizer-BioNTech ,Moderna) গর্ভাবস্থায় এ টীকা নিরাপদ কিনা তার উপর বড় ধরনের কোন গবেষণা নেই। তবে যারা নিয়েছে তাদের কারো কোন সমস্যা হয়নি। এটা গর্ভবতীদের উপর কাজ করবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করার কোন কারন নেই। আমেরিকায় ৯০,০০০ গর্ভবতীকে mRNA টীকা দেয়ার পর(Pfizer-BioNTech, Moderna) কোন নিরাপত্তা ইস্যু দেখা দেয়নি। তাই আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যে গর্ভবতীদের এ টীকা নিতে বলা হচ্ছে। তাদের মতে, কোভিড টীকায় এমন কোন উপাদান নাই যা প্রেগন্যান্সিতে ক্ষতিকারক। JVCI ও সমর্থন জানিয়েছে mRNA টীকা দেয়ার ব্যাপারে। প্রেগন্যান্ট গিনিপিগের উপর গবেষনায় মা ও গর্ভস্থ শিশুর কোন সমস্যা পাওয়া যায়নি।আগে দেয়া অন্যান্য টীকার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে দেখা গেছে non-live টীকা প্রেগন্যান্সিতে নিরাপদ, যেমন- ফ্লু টীকা।তাই,ধারনা করা হচ্ছে কোভিড টীকাও নিরাপদ না হবার কোন কারন নাই।
Viral Vector Vaccine( AstraZeneca-Non-Replicating Viral Vector):
এডেনোভাইরাস ভেক্টর টীকাও গর্ভাবস্থায় নিরাপদ বলে সবাই মত প্রকাশ করেছে।কারন এটার ভেক্টর শরীরে বেশীক্ষণ থাকেনা।কেউ যদি প্রেগন্যান্ট হওয়ার আগে AstraZeneca টীকার ১ম ডোজ পায়, তাহলে প্রেগন্যান্সির ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর ২য় ডোজ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ টীকার ২য় ডোজ সর্বোচ্ছ ১২ সপ্তাহ পরে দিলেও কার্যকর থাকবে।তবে, কেউ যদি মনে করে বাচ্চা হবার পর ২য় ডোজ নিবে সে সিদ্ধান্তও সে নিতে পারে।তবে মনে রাখতে হবে..১ম ডোজ নেয়ার পর খুব অল্প সময়ের জন্য হয়তো সেটা তাকে সুরক্ষা দিবে।এখনো জানা যায়নি কতদিন এটি প্রোটেকশন দেয়।কিন্তু, মনে রাখতে হবে- টীকা দেয়ার উপকারিতা না দেয়ার চাইতে অনেক বেশি। তাই সময়মতো ২য় ডোজ নিয়ে নেয়া উচিত। কেউ যদি প্রেগনিন্সির আগে ১ম ডোজ নেয় এবং বাচ্চা হবার পর ২য় ডোজ নেয়,তাহলে সেই ২য় ডোজ বোস্টার হিসেবে কাজ করবে এবং তার ১ম ডোজ আবার নতুন করে নেয়ার দরকার নেই।
- কানাডার গাইনী সোসাইটি কিন্তু এসট্রাজেনেকা সহ সব কেভিড টীকা গর্ভাবস্থায় দেয়ার জন্য উম্মুক্ত রেখেছে ও অনুমোদন করেছে। গর্ভাবস্থার পুরো নয় মাসেই যে কোন সময় টীকা দিতে পারবে বলে পরামর্শ দিয়েছে।তারা বলছে.. টীকা দেয়ার বেলায় প্রেগন্যান্ট কিংবা প্রেগন্যান্ট নয়-এটা বিবেচনায় আনারই দরকার নেই।
- কেউ যদি প্রেগন্যান্সিতে অন্য টীকা (যেমন- টিটি,হেপাটাইটিস, ফ্লু,হুপিং কফ) নেয়,তবে কোভিড টীকা তার অন্তত ১৪ দিন পর নিবে।
- টীকা নেয়ার পর-জ্বর হলে প্রেগন্যান্সিতে প্যারাসিটামল খাওয়া নিরাপদ।
প্রেগনেন্সীতে টীকা দেয়ার সুবিধাঃ
আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, এটা একটা মহামারী।এর সাথে যুদ্ধ করার প্রধান দুই হাতিয়ার হলো টীকা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।-তীব্র কোভিড এর গর্ভবতী মা ও শিশুর উপর তীব্র প্রভাবের কথা মাথায় রাখতে হবে। তাই ২য় তিনমাসের মধ্যে টীকা নিয়ে নেয়া উচিত।কারন, তৃতীয় তিন মাসে কোভিড হলে মারাত্মক হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। গর্ভাবস্থায় তীব্র কোভিড এবং এর জটিলতা-যেমন আইসিইউ ভর্তি,ভেন্টিলেশন,মৃত্যুর ঝুঁকি সব বাড়ে। টীকা দিলে এসব জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক খানি কমে যায়। টীকা নিলে কোভিডের কারনে প্রসব জনিত জটিলতা.. যেমন- সময়ের আগেই প্রসব হয়ে অপরিনত শিশুর জন্ম..এসব ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।
- টীকা নিলে গর্ভবতীদের নিজেদের ঝুঁকি তো কমছেই.. সাথে অনাগত শিশুটাও নিরাপদে ঠিক সময়ে পৃথিবীতে আসার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।মা ও শিশু দুজনেই নিরাপদ থাকলে একটা পরিবার নিরাপদ থাকে। আর তাই তো প্রেগন্যান্সিতে কি দেয়া যাবে বা যাবেনা তা নিয়ে এত মাতামাতি।
লেখক
ডাঃ হাসনা হোসেন আখী
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এমএস (অবস এন্ড গাইনী)
ট্রেইন্ড ইন ল্যাপারস্কপি এন্ড ইনফার্টিলিটি স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিদ্যা বিশেষজ্ঞ এবং ল্যাপারস্কপিক সার্জন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
নিয়মিত রোগী দেখছেন: মার্কস কনসালটেশন সেন্টার।
প্রতিদিন : বিকেল ৫ টা হতে রাত ৮ টা পর্যন্ত।
সিরিয়াল : 01729-269437.
সিরাজ মার্কেট (২য় তলা), কচুক্ষেত, ঢাকা-১২০৬। (ফুট ওভার ব্রিজের পাশে)
www.facebook.com/dr.hasnahossain