-
মহিলাদের লিউকোরিয়া বা সাদা স্রাব কি ?
লিউকোরিয়ার বা সাদা স্রাব অর্থ হল যোনির স্বাভাবিক স্রাব। তাতে রক্ত থাকবেনা, সংক্রমন জনিত কারণে কোন কটু গন্ধ থাকবেনা, যোনিপথে বা প্রজনন অঙ্গেঁ কোনও চুলকানি বা অস্বস্তি থাকবেনা। এই স্রাবের জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে অন্তর্বাস ভিজে যায় এবং তা শুকালে দাগ লেগে থাকে। এই স্রাব স্বাভাবিক এবং কোন রোগজনিত কারণে নয়- তাই এর জন্য কোনও চিকিৎসারও প্রয়োজন পড়ে না।
-
সাদাস্রাব বা শ্বেতপ্রদর-
প্রথম কথা হলো শ্বেতস্রাব বা সাদাস্রাব কোন রোগ নয় এবং এটি শরীরের কোন ক্ষতিও করে না। সাধারণত ইহার মাত্রা বা উৎপাত অনেক বেড়ে গেলেই একে রোগের পর্যায়ে ফেলা হয়ে থাকে। প্রধানত মোটা, অলস স্বভাবের, অন্যকোন যৌনরোগ, শারীরিক ত্রুটি, নোংরা অপরিচ্ছন্ন স্বভাব, জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের রোগ এবং যাদের স্বামী দূর দেশে থাকেন, এসব মহিলাদের মধ্যে সাদাস্রাবের সমস্যা বেশী দেখা যায়। যদিও সাদাস্রাব বলা হয় কিন্তু ইহার রঙ সাদা, হলদে বা সবুজও হতে পারে। হতে পারে পাতলা অথবা আঠালো। কারো কারো স্রাব এতো ঝাঝালো হয় যে, যোনীমুখে ঘা হয়ে যায়। স্ত্রী বা নারীদের জরায়ুনাড়ি ডিম্বাশয় ওভারি ইত্যাদির রোগের ফলে স্বেতপ্রদর জটিল আকার ধারণ করে। যোনির এই অতিরিক্ত স্বাভাবিক স্রাবের ব্যাপারটা এক এক মহিলার কাছে এক এক রকম। কোনও মহিলা অল্প স্রাবেই মনে করেন এরকম কেন হচ্ছে, এটা তো স্বাভাবিক নয়। আবার কেউ কেউ অতিরিক্ত স্রাবেও নির্বিকার থাকেন। অনেকে মনে করেন লিউকোরিয়ার জন্যই তার স্বাস্থ্যখারাপ হয়ে যাচ্ছে। সাধারণত স্বাস্থ্য খারাপ হলে এই স্রাব বাড়তে পারে। কোন কোন মেয়ে ভাবে এটি কি ঠিক কোনও যৌন রোগ বা ক্যানসার? মনে আশঙ্কা নিয়ে তারা চিকিৎসকের কাছে আসে।
-
লিউকোরিয়ার_কারণঃ-
নারীর জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোন না কোন সময়ে অতিরিক্ত স্বাভাবিক স্রাব হতে পারে। বয়ঃসন্ধির পর বা নারীর চাইন্ড বেয়ারিং এজ এ অর্থাৎ বাচ্চা হতে পারে এমন বয়সে ১৫ থেকে ৪৪ যোনির দেওয়াল পুরু থাকে। এখানে কোষের স্তর তার শরীরে স্ত্রী হরমোনের মাত্রার ওপর নির্ভর করে। যোনিতে এক ধরনের ব্যাসিলাই বা জীবানু স্বাভাবিক ভাবে বসবাস করে। এরা যোনির দেওয়াল থেকে ঝরে পড়া কোষের মধ্যকার গ্লাইকোজনকে ল্যাকটিক অ্যাসিড যৌনীর পি.এইচ ঠিকটাক বজায় রাখে এবং এই কারণে মেয়েদের যোনির এক স্বাভাবিক সংরক্ষণ নিরোধক ক্ষমতা থাকে। কোন কোন কন্যাশিশুর জন্মের প্রথম দশদিনে লিউকোরিয়া দেখা দেয়। কারণ মায়ের শরীরে অতিরিক্ত স্ত্রী হরমোন থাকে, তার প্রভাবেই এমন হয়। বয়ঃসন্ধিতে প্রজনন অঙ্গেঁ অর্থাৎ ইউটেরাস, ওভারি ও ভ্যাজাইনায় অতিরিক্ত রক্ত চলাচলের জন্য লিউকোরিয়া হয়। পিরিয়ড শুরু হওয়ার দু’তিন দিন আগে লিউকোরিয়া হতে পারে। তাছাড়া ভিউলেশন বা ডিম্বানু বের হওয়ার সময় সাধারণত পিরিয়ডের ১৪ দিনের মাথায় সাদা স্রাব হওয়ার স্বাভাবিক। যৌন উত্তেজনা বা অতিরিক্ত আবেগেও সাদা স্রাব হতে পারে। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে ইস্ট্রোজেনের আধিক্যের জন্য লিউকেরিয়া হয়। ডেলিভারির পর দেড় মাস থেকে তিন মাস পর্যন্ত সাদা স্রাব স্বাভাবিক। বয়ঃসন্ধির আগে বা মেনোপজের পর যোনির সংক্রমন রোধের স্বাভাবিক ক্ষমতা কমে যায়। তখন সংক্রমণ হওয়া সহজ। যোনির এই ক্ষরণ-স্বাভাবিক বিবাহিত জীবনের অশান্তি ও মানসিক কারণে সাদাস্রাব বাড়তে পারে। কেচোকৃমিও এ স্রাব বাড়ানোর কারণ হতে পারে। এছাড়া স্বাভাবিক পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলে পোশাক ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করে শুকিয়ে ইস্ত্রি করে না নিলে। পারিপাশ্বিক পরিচ্ছন্নতা বজায় না থাকলে সংক্রমণ হয়ে বেশি স্রাব হওয়া আশ্চর্য নয়।হস্তমৈথুন বা ম্যাস্টারবেশনও এর আর একটি কারণ।
এছাড়াও যোনিতে-ছত্রাক বা পরজীবীর সংক্রমণ হতে পারে।সংক্রমণ হলে যৌনাঙ্গে চুলকানি থাকবে। ডায়াবেটিস রোগ থাকলে, দীর্ঘদিন অ্যান্টিবায়োটিক খেলেও এই সংক্রমনের সম্ভাবনা বাড়ে।
লিউকোরিয়া আরও কারণ হিসাবে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ, টিউবারফিউলোসিস ইত্যাদির জন্য প্রজনন অঙ্গেঁর ইনফেকশন, তলপেটের প্রদাহ, জন্মনিরোধক বড়ি খাওয়া ইত্যাদিকেও চিহ্নিত করা যেতে পারে।
০১। প্রধান কারন হল ইনফেকশন।
মহিলাদের জরায়ু “ওপেন অরগ্যান” উন্মুক্ত অংগ গুলোর মধ্যে একটি। যেহেতু জরায়ু উন্মুক্ত থাকে, তাই যে কোন ভাবে এইখানে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
২। মলদ্বার বা পায়ুদেশ থেকে জীবানু আসিয়া খুব সহজেই জরায়ুতে ইনফেকশন হতে পারে।
৩। পুরুষের মাধ্যমেও এই রোগ হতে পারে। ট্রাইকোমানো এবং মোনালিয়া এই দু’টি ইনফেকশন যৌন রোগের জীবানু বহনকারী পুরুষের মাধ্যমে স্ত্রীলোকদের মধ্যে সংক্রমিত হয়।
৪। মোনালিয়া জীবানু দ্বারা আক্রান্ত জরায়ুতে চুলকানি হয় এবং ব্যথা করে। ঘন হলুদের মত স্রাব হয়।
৫। ট্রাইকোমানো জীবানু দ্বরা আক্রান্ত জরায়ুতে জ্বালাভাব থাকে, চুলকানি হয়, জরায়ু একটু ফুলিয়া যায়, লালচে হয়ে যায়। ফেনাটে দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব হয়।
৬। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব ও উপযুক্ত পরিবেশের অভাবের কারনে এই রোগ হতে পারে।
৭। জম্ম নিরোধক বড়ি হতেও এই রোগ হতে পারে।
৮। ঋতুস্রাবের পরবর্তী প্রযায়ে গর্ভপাত করালে, ইত্যাদি কারনে হতে পারে।
৯। মেয়েদের বা মহিলাদের মাসিক বা ঋতুচক্র আরম্ভ হলে অনেকে ময়লা অপরিষ্কার নেকরা বা কাপড় কিংবা অপরিষ্কার পেন্টি ব্যবহার করেন। যার কারনে জরায়ুতে ইনফেকশান হয়ে এই রোগ হয়।
১০। মানসিক রোগ হতেও লিকোরিয়া বা সাদা স্রাব হতে পারে।
১১। শরীরের যক্ষ্মা, রক্তহীনতা, ভিটামিনের অভাবে এই রোগ হতে পারে
১২। বৃদ্ধ বয়সে শরীরের চামড়া শুকাইয়া যায়, কুচকাইয়া যায়। সে সময় জরায়ু শুকাইয়া গেলে এই রোগ হতে পারে।
-
লক্ষণঃ-
বেশি পরিমাণ নিঃসরণ যাতে পরনের কাপড়, পেটিকোট, পাজামা বা প্যান্টি বেশি ভিজে যায়। নিঃসরণের সাথে যোনিপথ ও আশেপাশের অংশ চুলকায়। নিঃসরণের সাথে দুর্গন্ধ বের হয়। নিঃসরণ স্বচ্ছ সাদা, তরল ও পিচ্ছিলের পরিবর্তে বাদামী, সবুজ, হলুদ বা ঘন সাদা থকথকে হয়। ফেনাযুক্তসাদা বা চাল ধোয়া পানির মতো তরল পদার্থ বের হয়।
-
জটিলতা:-
অতিরিক্ত সাদাস্রাব শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও আমিষ বের করে দেয়। এ সময়ে পুষ্টি, বিশ্রাম ও সচেতনতার অভাবে শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হয় এবং এক সময় ক্ষয় হতে শুরু করে। এ ধরনের উপসর্গ শুধু অস্বস্তি তৈরি করে না বরং বিভিন্ন রোগেরও উপসর্গ; বিশেষ করে জীবাণু সংক্রমণ। এই সংক্রমণের ক্ষেত্রে অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসাবে বিবেচ্য।
-
লিউকোরিয়ার চিকিৎসা ব্যবহৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধের লক্ষণ ভিত্তিক আলোচনাঃ
[Pulsatilla, Sepia, Borax, Calcaria Carb, Caulophyllum, Alumina, Kreosote, Asoka, Kali Mur, Calcarea Phos, Syphilinum, Merc Sol, Medo.]রোগীর লক্ষনের সাথে ঔষধের লক্ষন মিলিয়ে একটি ঔষধ সেবন করলে এ রোগ সম্পূর্ন আরোগ্য হয়। তবে ঔষধের মাত্রা ও শক্তি জেনে ব্যবহার করা উচিৎ।
-
একসাথে সব পোষ্ট দেখতে লিংকে ক্লিক করুন।
আপনার কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে জানতে এস এম এস করুন আমাদের পেইজে এবং নতুন নতুন পোস্ট পেতে লাইক দিয়ে পেইজে একটিভ থাকুন।
পোস্ট টি নিজের কাছে রাখতে ও অন্যদের জানাতে শেয়ার করুন।
সঠিক ডাক্তার খুঁজে নিন।
সঠিক সিদ্ধান্ত বুঝে নিন।
পরিবার, সন্তান আপনার, বিবেচনা-ফলাফল এর দায়'ও আপনার!
সবাই সুস্থ থাকুন।
বিঃদ্রঃ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। বিশেষ প্রয়োজনে আপনারা যোগাযোগ করতে পারেন "খান ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথি" তে।
ডাঃ আয়েশা রাইসুল (গভঃ রেজিঃ H-১৫৯৮)
বি.এইচ.এম.এস (ঢাঃ বিঃ), এক্স-হাউজ ফিজিসিয়ান
বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল।
চেম্বারঃ খান ক্লাসিকেল হোমিওপ্যাথি।
উওর কাজীপাড়া,মিরপুর, ঢাকা।
হেল্পলাইনঃ 01916-023571, 01976-023572 (রিসিপসন)।
ডাঃ আয়েশা রাইসুল (গভঃ রেজিঃ H-১৫৯৮) |
লিউকোরিয়া শ্বেতপ্রদর সাদাস্রাবের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা |
হোমিওপ্যাথিক |
- royalbangla.com এ আপনার লেখা বা মতামত বা পরামর্শ পাঠাতে পারেন এই এ্যড্রেসে [email protected]
পরবর্তী পোস্ট |
ইউরিন ইনফেকশন: কারণ ও প্রতিরোধের উপায় |