যখন আমরা মহিলাদের স্তন এর সমস্যার জন্য ব্রেস্ট এর আল্ট্রাসাউন্ড করতে বলি, প্রায়ই দেখা যায় রিপোর্টে লিখা থাকে ব্রেস্ট সিস্ট। সাধারণত খুবই ছোট ছোট, মিলিমিটার দিয়ে উল্লেখ করা থাকে। সমস্যা হলো এতে কিন্তু মহিলার স্তন এর আকার কতটা বড়, হাতে পাওয়া যায় কিনা, এতে ক্যান্সারের ঝুঁকি আছে কিনা এগুলো না বুঝেই আতংকিত হন।
প্রথমেই জানা জরুরি যে এগুলো কিভাবে তৈরি হয় আর এর সমস্যা কি? সাধারণত এগুলো স্তনে স্বাভাবিক স্তনেই তৈরী হয়। মেয়েদের স্তন বিভিন্ন সময়ে যে পরিবর্তন এর মধ্যে দিয়ে যায়, যেমন ধরুন মাসিকের দ্বিতীয় পর্যায়ে একটি হরমোনের কারনে ব্রেস্টে ফোলা, ব্যাথা ভাব এগুলো হয়। এরপর মাসিক হলে আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। এরপর আছে গর্ভধারণ। তখনও হরমোনের প্রভাবে স্তন অনেক বেশি পরিবর্তন হয়। এরপর বাচ্চাকে স্তন্য দান। তখন আরও বেশি হরমোনের প্রভাবে স্তন অনেক বেশি পরিবর্তন হয়। এভাবে বয়সের সাথে সাথে সমস্ত জীবনে বিভিন্নভাবে স্তনের আকার আকৃতি পরিবর্তন হয়। আর এর ফলে ব্রেস্টে সিস্ট অর্থাৎ বিভিন্ন স্থানে পানির মত তরল ভর্তি গোলাকার সিস্ট হয়ে যায়। এটি এক পাশে বা উভয় পাশের স্তনেই হতে পারে।অনেক ক্ষেত্রেই এটি সংখ্যায় একের অধিক হয়ে থাকে।অনেক ক্ষেত্রেই সিস্ট এর সাথে ব্রেস্টে অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব হতে পারে। সাধারণত মাসিকের আগে সিস্টগুলো বেশি অনুভব হয়। আবার মাসিক শেষ হলে কমে যায়। এটি স্বাভাবিক। কারন হরমোনের কারনে মাসিকের আগে স্তনের আকার বৃদ্ধি পায়।
কোন বয়সে সিস্ট বেশি পাওয়া যায়?
সাধারণত ৩০-৩৫ বছরের আশেপাশের মহিলাদের। মাসিক বন্ধের পর হরমোনের প্রভাব কমে যাবার কারনে এটি কম দেখা যায়। তবে যদি কেউ হরমোন থেরাপি নিতে থাকেন তবে তাদেরও হতে পারে। আর এ ছাড়া যে কোন বয়সেই সিস্ট হতে পারে।
ব্রেস্ট সিস্ট কি বিপজ্জনক?
সাধারণত এগুলো বিপজ্জনক নয়।
ব্রেস্ট সিস্ট কিভাবে বুঝতে পারবেন?
১।সিস্ট সাধারণত ছোট হয়। হাতে নাও বোঝা যেতে পারে।
২।শুধু আল্ট্রাসাউন্ড করে রিপোর্টে সিস্ট আসতে পারে।
৩।কখনো কখনো স্তনে চাকা হিসেবে হাতে অনুভব হতে পারে।
৪।এটি সাধারণত ক্যান্সারের মত খুব শক্ত, বা ফাইব্রোএডেনোমার( যাকে আমরা ব্রেস্ট মাউস বলি) মত খুব বেশি নড়ে না। যদিও এটি হাতে অনুভব হলে কখনো কখনো ফাইব্রোএডেনোমার সাথে মিলে যেতে পারে।
স্তনে সিস্ট এর উপসর্গ কি?
স্তনে সিস্ট থাকলে তা কোনো উপসর্গ তৈরি নাও করতে পারে। আবার অনেক সময় আকারে বড় হয়ে ফুলে যেতে পারে। ব্রেস্টে ব্যথা অনুভব বা ব্যাথা বেড়ে যেতে পারে।
স্তনে সিস্ট এর ক্ষেত্রে কি পরীক্ষা-নিরীক্ষার করা যায়?
সাধারণত আলট্রাসনোগ্রাম বা ম্যামোগ্রাম করলে ধরা পরতে পারে। তবে আলট্রাসনোগ্রামে স্তনের সিস্ট ভালো বোঝা যায়। যদি সিস্ট বড় হয় বা সন্দেহ জনক হয় তখন এফএনএসি বা সিরিঞ্জের মাধ্যমে পানিটাকে টেনে বের করা হয় এবং তাতে নিশ্চিত করা যায় যে এটি ক্লিয়ার পানি জাতীয় তরলপূর্ণ ব্রেস্ট সিস্ট।
সব সিস্টই কি বেনাইন (benign) বা ক্ষতিকর নয়?
সমস্যা এখানেই। সবসময়ই কিছু না কিছু ব্যাতিক্রম থাকে। জ্বি। এটা ঠিক যে সিস্ট থেকে ক্যান্সারের কোন আশংকা নেই। কিন্তু কোন কোনো সময় ক্যান্সার এর সাথে সিস্টও হতে পারে। এটি স্তনের নালী বন্ধ হবার কারনে হয়। খুবই দূর্লভ। যদি স্তন পরীক্ষা করে সিস্টের কোন অংশ শক্ত অনুভব হয়। আলট্রাসনোগ্রামে কোন অংশে সিস্ট এর সাথে সলিড অংশ পাওয়া যায় অর্থাৎ কমপ্লেক্স সিস্ট হয়। আর সিস্টএর তরল পদার্থ সুচের পরীক্ষা নিরিক্ষার সময় রক্তের মতো বা বেশি লালচে হয়। সেক্ষেত্রে সুচের পরীক্ষার রিপোর্টে সাধারণত ক্যান্সারের কোষ বা সন্দেহ জনক কোষ পাওয়া যেতে পারে।তবে এগুলো খুবই রেয়ার এবং কম পাওয়া যায় ।তাই ব্রেস্টে সিস্ট নিয়ে অযথা আতংকিত না হয়ে যথাযথ পরীক্ষা নিরিক্ষার প্রয়োজন।
সিস্টের জন্য কি চিকিৎসা করবেন?
১।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্রেস্ট সিস্টের জন্য কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। এগুলো সময়ের সঙ্গে স্তনে মিলিয়ে যেতে পারে বা অপরিবর্তিত থাকতে পারে, অর্থাৎ খুব বেশি মাত্রার পরিবর্তন হবে না ।
২।যদি কোন সিস্ট সময়ের সাথে আকারে বড় হতে থাকে বা রোগী ক্যান্সার আতংকে ভুগতে থাকেন তখন রোগীর আতংক দূর করার জন্য কখনো কখনো অপারেশন করা লাগতে পারে।
৩।যদি সিরিঞ্জের মাধ্যমে বের করে আনা তরলের লালচে বা রক্ত মিশ্রিত হয় তবে তা অবশ্যই এটি ফলোআপ এ রাখা জরুরি। প্রয়োজন হলে যথাযথ পরীক্ষা নিরিক্ষার পর অপারেশন করে মাংস হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষার জন্য পাঠানো যেতে পারে। (যেহেতু খুব রেয়ার ক্ষেত্রে ক্যানাসারে নালী বন্ধের কারনে কমপ্লেক্স সিস্ট নিয়ে আসতে পারে)।
৪।তরল টেনে বের করার পর সাধারণত সিস্ট মিলিয়ে যায়। যদি না মিলিয়ে যায় এবং তরল বের করার পরও বারংবার এটি বাড়তে তখনও অপারেশন এর সাহায্য নিয়া যেতে পারে।
শেষ কথা
আলট্রাসনোগ্রাম সিস্ট লিখলে আতংকিত হবেন না। নিজে নিজের স্তন পরীক্ষা করে পরিবর্তন হয় কিনা দেখুন। আলট্রাসনোগ্রামে সিস্টের সাইজ দেখুন। সাধারণত খুব ছোট আর মিলিমিটার এ সাইজ দেয়া থাকে। এটা খুব স্বাভাবিক। তবে যদি বিশেষ কোন পরিবর্তন পান তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের শরনাপন্ন হবেন।
লেখক
ডাঃ লায়লা শিরিন
সহযোগী অধ্যাপক, ক্যান্সার সার্জারী, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল।
www.facebook.com/DrLailaShirinOncoSurgeon