আমার রোগীর জন্য কোন চিকিৎসা পদ্ধতি সবচেয়ে ভালো হবে?
এখন এটি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি জানতে চাওয়া প্রশ্নের মধ্যে একটি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এটার কোনো সত্যি বা মিথ্যা উত্তর নেই। এটি আপেক্ষিক। যেমন ধরুন আমাদের বাস্তবতায় যদি মনে করেন স্তন ক্যান্সারের জন্য স্তন রাখবেন না ফেলে দিবেন? দুটিই সঠিক। বিবেচ্য হলো নিজেরা ভাবুন। কিছুটা সময় নিন। কিন্তু লম্বা সময় নয়। কারন দেরি করলে ক্যান্সার ছড়িয়ে যাবে।
ভাবুন
- অপনারা কি চান
- রোগের কোন পর্যায়ে রোগীর ক্যান্সার নির্নয় হয়েছে
এছাড়াও
- ক্যান্সার কোন অংগে হয়েছে
- এতে বেঁচে থাকার হার কেমন
- আপনাদের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন
- আপনারা যেখানে চিকিৎসা করছেন সেখানে সব ব্যাবস্থা আছে কিনা বা
- কি উপায় আপনারা পুরো চিকিৎসা সম্পন্ন করবেন।
আপনারা আপনাদের ইচ্ছা অনুযায়ী অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মতো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন। অবশ্য যদি আপনাদের ইচ্ছা logical আর ফলপ্রসূ বিবেচিত হয়। তবেই। যেমন ধরুন আরেকটি খুব সাধারণ উদাহরণ হলো পায়ুপথের ক্যান্সার। পায়ুপথ ফেলে করবেন, না নয়। আপনার রুগী এমন অবস্থায় রোগ ছড়িয়ে আসলেন যে এটি পায়ুপথ রেখে অপারেশন এর অযোগ্য বা এটি এমন নিচের দিকে যে পায়ুপথ রেখে চিকিৎসা অসম্ভব । (অবশ্য এক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নেয়া যেতে পারে) কিন্তু পায়ুপথ ফেলতে হবে দেখে অপারেশন এর অযোগ্য অবস্থায় নিয়ে আসলেন এমন যেনো না হয়। সিদ্ধান্ত অবশ্যই নিবেন। মনে রাখবেন জীবন খুবই মূল্যবান।
নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে সিদ্ধান্ত নিতে দিন। এমন কাউকে সিদ্ধান্ত নিতে দিবেন না যে বিষয়টি জানে না। যেমন ধরুন এই পায়ুপথ ফেলে দেবার বিষয়টি। আপনি দুতিন জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েছেন। মতামত একই। এখন রুগী এই পর্যায়ে কোন প্রভাবশালী একজন আত্মীয়ের পরামর্শ নিলেন এবং ডাক্তার কে অনুরোধ করতে বললেন। দেখুন এটি সবচেয়ে ভুল সিদ্ধান্ত। তিনি হয়তো সম্মানিত, অনেক ব্যাস্ত, রুগী আর রোগের ব্যাপারে ক্যান্সার হয়েছে শুধু এতটাই জানেন। কাজেই এই জাতীয় পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিতে তিনি নয়, আপনারা বা আপনার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার দায়িত্ব দিন।
বিশেষত যারা ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ে চিকিৎসার জন্য আসেন । তাদের ক্ষেত্রে, এমনটা হতে পারে আপনারা ক্যান্সার এর চিকিৎসা নিতে চান না। মনে রাখা জরুরি অনেকসময়ই রোগ অনেক বেশি ছড়িয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা করালেও সার্ভাইভাল মানে বেঁচে থাকার হার খুব বেশি পরিবর্তন হয় না। এক্ষেত্রে এমন হতে পারে যে আপনি রুগীর শুধু সমস্যাটুকু সমাধান করলেন। এটিকে পেলিয়েটিভ চিকিৎসা বলে। আসল রোগের চিকিৎসার জন্য যে কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন দেয়া প্রয়োজন তা হয়তো শারিরীক দুর্বলতা, অর্থনৈতিক অবস্থা বা বেঁচে থাকার হার বিবেচনায় এনে না নেবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। যদিও আমাদের দেশে এই ব্যাবস্থা অপ্রতুল। তদুপরি আমাদের দেশের মতো যায়গায় যদি আপনার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকে তবে এই শেষ পর্যায়ে যে চিকিৎসা পদ্ধতি আছে তাতে রুগী এবং তার আত্মীয় স্বজন সর্বসান্ত হয়ে যেতে পারেন। তবে যদি অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হয় তবে অবশ্যই চিকিৎসা নিন। এখন আধুনিক অনেক চিকিৎসা পদ্ধতি আছে যা ক্যান্সার ছড়িয়ে গেলেও নেয়া যেতে পারে। আর ফলাফলে বেঁচে থাকার হারও তুলনামূলক চিকিৎসা না নেবার থেকে অনেক বেশি। আর বিজ্ঞান প্রযুক্তি অনেক উন্নতি হয়েছে আরও হবে। একদিন নিশ্চয়ই এমনকি ক্যান্সার পুরো পুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব হবে। এই আশাবাদ রাখি।
এজন্যই শুরুতেই বলেছি, কোন চিকিৎসা পদ্ধতি আপনার জন্য ভালো এর কোন সত্যি বা মিথ্যা উত্তর নেই।
- কোন পদ্ধতি নিলে মানসিক শান্তি পাচ্ছেন,
- কোনটা গুরুত্বপূর্ণ focus বা বিষয় সেখানে মানসিক শক্তি প্রয়োগ করুন।
- আপনার সুস্থ বা স্বাভাবিক বোধ করাই একমাত্র উদ্দেশ্য।
পরিশেষে
- রোগ হবার আগেই প্রতিরোধ করুন।
- রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে নির্নয় এর চেষ্টা করুন
- প্রটোকল অনুসরণ কতে চিকিৎসা নিন এবং সম্পূর্ণ চিকিৎসা নিন।
- কখনোই ভুল সিদ্ধান্ত নিবেন না যাতে করে রোগ ছড়িয়ে সারানোর পর্যায়ের বাহিরে চলে যায়।
লেখক
ডাঃ লায়লা শিরিন
সহযোগী অধ্যাপক, ক্যান্সার সার্জারী, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল।
www.facebook.com/DrLailaShirinOncoSurgeon