প্রস্টেট কি?
প্রস্টেস্ট হলো পুরুষের মূত্রনালী ঘিরে থাকা একটি যৌন গ্রন্থি । এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত বীর্যরস যৌনকাজে সহায়তা করে এবং যৌননালীতে শুক্রানুর বেঁচে থাকতে সহায়তা করে।
প্রস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধি জনিত সমস্য (BEP)-
৬০ বয়ষোর্ধ পুরুষদের শতকরা ৭০ ভাগ এই সমস্যায় ভুগে। বয়স বৃদ্ধির কারনে প্রস্টেট গ্রন্থির কোষের সংখ্যা বেড়ে গেলে বিইপি বা Benign enlargement of prostate হয়ে থাকে। বিভিন্ন হরমোন এই বৃদ্ধি ঘটার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
১। কম পানি খাওয়ার অভ্যাস অথবা গ্রীষ্মপ্রধান দেশে বাস করা
কেন এই রোগ হয়?
প্রস্টেট গ্রন্থি বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাওয়ার প্রকৃত কারণ সম্বন্ধে এখনও অনেক কিছু জানা যায়নি। ধারণা করা হয়,বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হরমোনের যে পরিবর্তন হয়, সেজন্য প্রস্টেট বৃদ্ধি হতে পারে। অন্ডকোষ থেকে পুরুষের যে Testosterone হরমোন নিঃসৃত হয় তা ভেঙ্গে DHT এবং Estradiol তৈরি হয়। DHT এর মাত্রা বেড়ে যাওয়ার জন্য প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি হয়। কিভাবে এবং কেন DHT এর মাত্রা শরীরে বয়স বৃদ্ধির সাথে বাড়ে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। দুটো পদ্ধতিতে প্রস্টেট গন্থি বৃদ্ধিজনিত সমস্যা দেখা দেয়। প্রসাবের নালীর চারদিকে প্রস্টেট এর কোষ সংখ্যা বেড়ে প্রস্টেটের অভ্যন্তরস্থ মূত্রনালীকে চেপে ধরে, দ্বিতীয়ত- প্রস্টেট গ্রন্থির মধ্য অংশটা (Middle lobe) বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে মূত্রথলির বাহির পথকে আটকে দেয়। ফলে প্রস্রাব বের হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি হয়।
২। প্রসাবে জ্বালাপোড়া বা ঘনঘন সংক্রমন
রোগের লক্ষণসমূহঃ
দিনে ও রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
প্রস্রাবের বেগ আটকিয়ে রাখতে অসুবিধা হওয়া
প্রস্রাবের দুর্বল গতি এবং মাঝপথে বন্ধ হওয়া
প্রস্তাব করার পরও প্রস্তাবের থলি খালি না হওয়া ।
প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া
একবারে প্রস্রাব আটকে যাওয়া বা আটকানোর মত অবস্থা।
এমনকি দীর্ঘদিন এই সমস্যগুলোর কারনে কিডনী বিকল হওয়ার লক্ষন নিয়ে রোগীরা ডাক্তারের কাছে আসে।
উপসর্গবিহীনভাবেও প্রসটেট বড় হওয়ার সমস্যা নিয়ে আসতে পারে যা অন্য রোগের জন্য ultrasonogram করতে গিয়ে ধরা পরে।
রোগ নির্ধারণঃ
রোগের ইতিহাস,শারীরিক পরীক্ষা এবং রোগীর লক্ষন পর্যালোচনা করে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। শারীরিক পরীক্ষা যেমন, পায়ু পথে আগুল দিয়ে পরীক্ষা । AUA symptom score দিয়ে রোগীকে বিভিন্ন ধাপে ভাগ করা হয়।
চিকিৎসাঃ
১৷ উপসর্গবিহীন বা অল্প মাত্রার উপসর্গঃ দৈনন্দিন জীবনযাত্রার কিছুটা পরিবর্তন, খাদ্যাভাস পরিবর্তন ই যতেষ্ট। কোন অষুধের প্রয়োজন হয়না সাধারনত।
২। মধ্যম মাত্রার উপসর্গঃ খাদ্যাভাস পরিবর্তন এর পাশাপাশি কিছু ওষুধ খেতে হয়।
চিকিৎসার জন্য লক্ষন অনুযায়ী রোগীদেরকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
৩।অতিমাত্রার উপসর্গ: ওষুধে কাজ না হলে, পূন: পূন: প্রসাব বন্ধ হলে অপারেশনের প্রয়োজন হয়।
অপারেশন পদ্ধতি:
১। পেট কেটে: তলপেট কেটে প্রস্টেট অপারেশন করা হয়। অনেক রক্তপাত হয় বিধায় বর্তমানে এই পদ্ধতিতে অপারেশন করা হয়না।
২। পেট না কেটে: প্রসাবের রাস্তা দিয়ে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে (TURP) এই অপারেশন করা হয়। এই অপারেশনে ডায়াথার্মি বা লেজার ব্যবহার করা হয়।
সর্বোপরি প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি একটি পুরুষের বয়স সম্পর্কিত সাধারন সমস্যা। এজন্য সবার চিকিতসা প্রয়োজন হয়না।যেকোন বয়সে প্রসাবের সমস্যায় ইউরোলজিস্ট ডাক্তার দেখানো উচিত।
লেখক
ডাঃ মোহাম্মদ ইব্রাহিম আলী
এম.বি.এস,বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এমএস (ইউরোলজি)
ফেলোশীপ ইন ইউরোলজি (ইউএএ,মালয়েশিয়া)
আবাসিক সার্জন (ইউরোলজি)
ইউরোলজি বিভাগ
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
রোগী দেখার সময়
প্রতিদিন বিকাল ৩.০০ থেকে ৮.০০ টা পর্যন্ত
শুক্রবার বন্ধ
www.facebook.com/Dr-Ibrahim-Urologist-Bangladesh-770739179933378