পিরিয়ড প্রতিটি নারী জীবনের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ।মাসের এই ৩-৫ বা ৭ দিন অনেকটা রক্ত বের হয়ে যায় শরীর থেকে,যার ফলে আয়রন সহ নানা পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দিতে পারে আমাদের শরীরে। এছাড়া পিরিয়ডে অনেকের মাথা ব্যাথা,তলপেটে/কোমড়ে ব্যাথা, বমি ভাব,এসিডিটি,পাতলা পায়খানা সহ নানা সমস্যা দেখা যায়। আর তাই এ সময়, শরীরের চাই বিশেষ পুষ্টিকর খাবার। তা না হলে দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব দেখা যাবে সাথে যোগ হবে নানান শারীরিক সমস্যা।আর তাই আমার আজকের আলোচনার বিষয় পিরিয়ডে ডায়েট :
- মাসিকের সময় অনেক মেয়েদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা যায়,তাই এসময় ডায়েটে এমন খাবার রাখতে হবে যেগুলো শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে।সবুজ শাক-পাতা পিরিয়ডের সময় সবচাইতে বেশি প্রয়োজন।এতে থাকে প্রচুর আয়রন যা শরীরের ক্ষয়পূরণে সহায়তা করে। তাই অবশ্যই প্রতিবেলার খাবারে রাখতে হবে সবুজ পাতা,বিভিন্ন শাক-সবজি ও সালাদ। এগুলোর মাঝে কচু শাক, পুঁই শাক, ডাঁটা শাক, ফুলকপির পাতা,কলমি শাক,লাল শাক অন্যতম।
- দেহের চাহিদা অনুযায়ী প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে ডিম,মাছ অথবা মাংস এবং সম্ভব হলে সপ্তাহে ১-২ বার সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কেননা সামুদ্রিক মাছে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি।তাই পিরিয়ডের সময় মাছ বাদ দেওয়া যাবে না। আবার লাল মাংস ও খেতে পারেন পরিমাণ মত,তবে অবশ্যই মাংস চর্বি ছাড়া হতে হবে এবং পরিমানে কম খেতে হবে,আয়রনের ঘাটতি পূরণে লাল মাংস সহায়তা করে।
- শরীরে আয়রনের ঠিকমত শোষণ ও কার্যকারিতার জন্য ভিটামিন সি অতি আবশ্যক। তাই খাদ্য তালিকায় - পেয়ারা, আমড়া, তরমুজ,কালো জাম, পাকা তেতুল,আমলকি, লেবু, জলপাই, জাম্বুরা, পাকা টমেটো, কামরাঙা, পাকা পেঁপে, আনারস রাখতে পারেন। পিরিয়ডের সময় ফল ও সবজি যতটা সম্ভব খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত।এছাড়া পিরিয়ডের সময় নিয়ম করে কলা খাওয়া উচিত। কলায় পটাশিয়াম ও ভিটামিন থাকে যা পিরিয়ডের সময় অতি দরকারি। এছাড়াও কিছু সংখ্যক মেয়ে পিরিয়ডের সময় ডায়রিয়াতে ভুগেন, যদিও কতিপয় মেয়ের সাথে এমন হয়,তাদের জন্য কলা অনেক উপকারি। এছাড়া ভালো ঘুম হওয়া এবং বিষন্নতা দূর করতেও কলা খেতে পারেন।
- পিরিয়ডের সময় ব্লিডিংয়ের জন্য শরীর তরল বের হয়ে যায়, তাই এ সময় প্রচুর পানি ও পানি জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। তবে এর মানে এই না বাইরের ড্রিংক্স বা অন্য কিছু খাওয়া যাবে।সাধারণ পানি, ফলের জুস,লিকুইড খাবার,সুপ এগুলো খেতে হবে। কারো যদি পেটে পেইন থাকে সেক্ষেত্রে হালকা কুসুম গরম পানি পান করতে পারেন,পেইন রিলিফে ভূমিকা পালন করবে।
- আমরা জানি বাদামে রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন পুষ্টিচাহিদা পূরণ করে,পিরিয়ডের সময় বাদাম শরীরকে সুস্থ আর এনার্জেটিক রাখতে সহায়তা করে।এছাড়াও সাথে খেতে পারেন কুমড়া,শিমের বীজসহ নানা ধরনের বীচিজাতীয় খাবার। তবে অবশ্যই রোস্টেড বা সল্টেড বাদাম খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।চীনা বাদাম, কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম, পেস্তাবাদাম পিরিয়ডে শরীরের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে।তাই নিয়ম করে এ সময় আপনার ডায়েটে বাদাম রাখতে পারেন।
- সব কিছুর সাথে এড করতে পারেন ২-৩ পিস ডার্ক চকলেট। ডার্ক চকলেটে স্যুগারের পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে,আর এতে থাকে ম্যাগনেসিয়াম যা আপনাকে পিরিয়ডে কিছুটা হলেও পুষ্টি যোগাবে আর সেইসাথে দূর করবে আপনার বিষন্নতা।
- আদা,হলুদ,টক দই এই জাতীয় খাবার রাখা জরুরী। হলুদে কারকিউমিন থাকে, যা এন্টি ইনফ্লামেটরী মসলা হিসেবে কাজ করে,হলুদ দুধ এ সময় বিশেষ উপকারী ভূমিকা পালন করে। আদা বমি ভাব দূর করে। আদা চা হতে পারে আপনার জন্য এ সময় ভালো ড্রিংক্স,তবে অবশ্যই পরিমাণের দিক খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া যাদের ইউরিন ইনফেকশন আছে, তাদের জন্য প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ টকদই পিরিয়ডে উপকারি ভূমিকা রাখে।
কি কি খাওয়া উচিত না :
- খেয়াল রাখতে হবে, পিরিয়ডের সময় আচার বা বাইরে বানানো কোন টক খাবার খাবেন না। সল্টেড বিস্কিট থেকে শুরু করে চিপস, এক্সট্রা লবণ দেয়া যে কোন খাবার এবং অতিরিক্ত ঝাল ও তেল-মশলা দেয়া খাবার পুরোপুরি বাদ দিতে হবে।যে কোন প্রকার সফট ড্রিংক্স পরিহার করুন। মিষ্টি জাতীয় খাবার যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো।
- পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে ব্যথা, হরমোনাল ইমব্যলেন্স ইত্যাদির কারণে অনেকের ঘুম হয়না ঠিক মত, মাথাব্যথা করে, শারীরিক নানা সমস্যা, ক্লান্তিভাব দেখা যায়,তাই অনেকে খুব বেশি চা-কফি খেয়ে থাকেন। মনে রাখতে হনে কফির ক্যাফেন শরীরকে ডিহাইড্রেট করে, আররন শোষণে বাধা দেয়, শরীরের অনেক ক্ষতি করে। তাই কয়েক দিনের জন্য চা-কফি বন্ধ রাখা ভালো।
- এছাড়া ক্যান্ডি বা চিনি জাতীয় ড্রিংক্স, সল্টেড খাবার,প্রসেসড বা প্যাকেটজাত খাবার,চিপস এগুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।
আশাকরি আমরা সবাই পিরিয়িড নিয়ে সচেতন থাকবেন। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখবেন, ডায়েট মেনে চলবেন।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/nutritionist.smreety
লেখক
সাদিয়া ইসরাত স্মৃতি
নিউট্রিশনিস্ট
সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হসপিটাল, নিউ সার্কুলার রোড, মালিবাগ,মৌচাক।
চেম্বার ডেট :
প্রতি সোমবার : বিকাল ৫.৩০ থেকে ৮.৩০, রোম নং - ৫০৮
এপয়েন্টমেন্ট নম্বর :
01558998823
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/nutritionist.smreety