১৪ই জুন বিশ্ব রক্তদান দিবস। কখনও ভেবে দেখেছেন কি, আপনার দান করা একব্যাগ অর্থাৎ মাত্র ৩৩০-৪৫০ মিলি রক্ত একজন মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে! বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৪ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয় এবং এই রক্তের একটা বড় অংশই আসে পেশাদার রক্ত বিক্রেতার কাছ থেকে। উল্লেখ যে পেশাদার বিক্রেতাদের রক্তকে দূষিত রক্ত হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। কেননা এদের পেশাদার বিক্রেতাদের মাঝে একটা বড় অংশ আছে যারা কিনা বিভিন্ন রকম নেশায় কিংবা রগে আক্রান্ত। অনেক সময়েই নিরুপায় হয়ে এই দূষিত রক্ত গ্রহণ করে জটিল রোগে আক্রান্ত হন অনেক মানুষ, এমনকি মৃত্যুবরণও করে থাকেন।
সুতরাং কেনা রক্ত কোনও ভাবেই নিরাপদ নয়। তাই আপনি যদি সুস্থ হয়ে থাকেন, তাহলে অতি অবশ্যই আপন বা পরিচিত জনদের প্রয়োজনের সময় রক্তদানে এগিয়ে আসুন।একজন সুস্থ মানুষ প্রতি ৪ মাস অন্তর অন্তর রক্ত দান করতে পারেন। এতে শরীরের কোনও ক্ষতি তো হয়ই না, বরং আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী এই রক্তদান।
- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী সব মানুষই স্বেচ্ছায় রক্তদান করতে পারবেন।যদি আপনি--
- আপনি সুস্থ ও সবল হন
- আপনার ওজন ৫০-১৬০ কেজি হয়
- আপনার বয়স ১৮ থেকে ৬৬ বছর হয়
- অন্তঃসত্ত্বা বা সন্তানকে স্তন্যদান না করেন
- এইচআইভি সংক্রমণ না থাকে
- গত ১২ মাসে আপনি কোন 'ঝুঁকিপূর্ণ কাজ' না করে থাকেন
তাহলে স্বেচ্ছায় রক্তদানকারীর তালিকায় আপনার নামও উঠতে পারে।রক্তদান করলে কেউ মারা যায় না।
দেহের ওজনের বিবেচনায় একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে গড়পড়তা পাঁচ লিটার রক্ত থাকে। প্রতিবার রক্তদানের সেশনে ৫০০ মিলিলিটার করে রক্ত নেয়া হয়।আপনি যদি অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে থাকেন তবে কোর্স শেষ হওয়ার সাত দিন পর আপনি রক্ত দিতে পারবেন।
অসুস্থ, অন্তঃসত্ত্বা, শিশু কিংবা বয়োবৃদ্ধ হলে রক্ত দিতে পারবেন না।রক্তদানের জন্য নূন্যতম বয়স হচ্ছে ১৬ বছর। বেশিরভাগ দেশে এই বয়সী তরুণদের রক্তদানেরক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতি লাগে। রক্ত দেয়ার সময় এই বয়সী তরুণদের জ্ঞান হারানোর ঝুঁকিও বেশি থাকে।নিয়মিত রক্তদানকারীদের কোন সর্বোচ্চ বয়স সীমা নেই। কোন কোন দেশে এটা ৬০-৭০ বছর।ঠান্ডা, সর্দিজ্বর, খুশখুশে কাশি, পেট খারাপ থাকলেও রক্তদান করতে পারবেন না।যে কোন অসুখ থেকে সম্পূর্ণভাবে সেরে ওঠার ১৪ দিন পর আপনাকে রক্তদান করতে দেয়া হবে।
রক্তদানের উকরিতাঃ-
১ রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কেননা রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। রক্তদানের ২ সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্তকণিকা জন্ম হয়ে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। আর বছরে ৩ বার রক্তদান আপনার শরীরে লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা বাড়িয়ে তোলে ও নতুন কণিকা তৈরির হার বাড়িয়ে দেয়।
২.নিয়মিত রক্তদানকারীর হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কম অনেকটাই
৩.নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে বিনা খরচে জানা যায় নিজের শরীরে বড় কোনো রোগ আছে কিনা। যেমন : হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, এইচআইভি (এইডস) ইত্যাদি।
৪.সম্প্রতি ইংল্যান্ডের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী জটিল বা দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকেন অনেকাংশে। যেমন, নিয়মিত রক্তদান ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।
৫. রক্তে কোলেসটোরলের উপস্থিতি কমাতে সাহায্য করে নিয়মিত রক্তদান।
৬.রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকে অত্যন্ত পুণ্যের বা সওয়াবের কাজ। একজন মানুষের জীবন বাঁচানো সমগ্র মানব জাতির জীবন বাঁচানোর মতো মহান কাজ। আমাদের সকলের ধর্মই আমাদের এই শিক্ষা দিয়ে থাকে।
৭.রক্তদানে আপনার নিজের অর্থ সাশ্রয়-ও হয়। রক্তদান কেন্দ্রের মাধ্যমে রক্ত দিলে পাঁচটি পরীক্ষা সম্পূর্ণ বিনা খরচে করে দেয়া হয় যা বাইরে করলে খরচ লাগবে প্রায় তিন হাজার টাকার মতো। সেগুলো হলো-এইচআইভি/এইডস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, ম্যালেরিয়া ও সিফিলিস। তাছাড়া রক্তের গ্রুপও নির্ণয় করা হয়।
৮. নিয়মিত রক্তদান Hemochromatosis প্রতিরোধ করে। শরীরে অতিরিক্ত আয়রনের উপস্থিতিকে Hemochromatosis বলে।
৯.স্থূল দেহী মানুষদের ক্ষেত্রেও রক্তদান অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে ওজন কমাতে।
১০.মুমূর্ষু মানুষকে রক্তদান করে আপনি পাচ্ছেন মানসিক তৃপ্তি। কারণ, এত বড় দান যা আর কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/Dr-Fatema-Zohra-Psychiatrist-Specialist-in-Family-Medicine-293734764582169
লেখক
ডা. ফাতেমা জোহরা
MBBS(DU), MD Psychiatry (BSMMU), FMD(USTC), DHMS(BD)
মনোরোগ, যৌনরোগ ও মাদকাসক্তি নিরাময় বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক
মানসিক রোগ বিভাগ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/Dr-Fatema-Zohra-Psychiatrist-Specialist-in-Family-Medicine-293734764582169