পুরুষাঙ্গের সামনের বা মাথার দিকে যে অতিরিক্ত স্কিন পুরুষাঙ্গের সংবেদনশীল মাথাকে ঢেকে রাখে, তা কর্তন করাকে খতনা বা মুসলমানি করা বোঝায়।প্রাচীন মিশরে ঈসা (আঃ) এর জন্মের ২,৩০০ বছর আগে থেকে এটা প্রচলিত ছিল। আবার Grafton Elliot Smith এর মতে ১৫,০০০ বছরের বেশি সময় আগে এটা চালু হয়েছিল। মুসলিমদের আগে ইহুদিদের মধ্যেও এটা প্রচলিত ছিল।
১। খতনা বা মুসলমানি করার প্রয়োজনীয়তাঃ
(ক) ধর্মীয় কারণে মুসলমান ও খ্রিষ্টানেরা খতনা করান।
(খ) ফাইমোসিস বা প্যারাফাইমোসিস রোগ হলে খতনা বা মুসলমানি করাতে হয়।
ফাইমোসিসঃ পুরুষাঙ্গের মাথার দিকের চামড়া যদি এমন ভাবে মূত্রনালীকে ঢেকে রাখে যে শিশু বা রোগীর প্রস্রাব ঠিক মতো বের হতে পারে না। এর ফলে প্রস্রাবের সময় কান্নাকাটি করে এবং প্রস্রাবের সময় মাথাটা ফুলে ওঠে।এভাবে বেশি দিন চলতে থাকলে প্রস্রাবে ইনফেকশন ও কিডনি ফেইলিউর হতে পারে।
প্যারাফাইমোসিসঃ পুরুষাঙ্গের মাথার দিকের চামড়া উল্টে টাইট হয়ে যায়। এর ফলে চামড়াকে আর সামনে ও পেছনের দিকে নাড়া চাড়া করা যায় না। এ ক্ষেত্রে মাথার দিকে ফুলে যায় এবং রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। এই উভয় ক্ষেত্রেই জরুরি ভিত্তিতে খতনা করা প্রয়োজন। আরো নানাবিধ কারণে খতনা দরকার হয়, যেমন: পুরুষাঙ্গের চামড়া অনেক সময় প্যান্টের চেইনের সাথে আটকে গেলে। রোগী চাইলেও যে কোনো ধর্মাবলম্বী লোকের খতনা করা হয়।
২। খতনা বা মুসলমানি করালে কী উপকারিতা :
- পুরুষাঙ্গের মধ্যের ঐ অংশে ব্যকটেরিয়ার সংক্রমণ কমে যায়;
- বিভিন্ন যৌনরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে যেমনঃ স্বামীর পেনাইল ক্যান্সার, স্ত্রীর সার্ভিকাল ক্যান্সার প্রভৃতি; ক্যান্সার মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে নেই বললেই চলে। তার প্রধান কারণ খতনা। পুরুষাঙ্গের মাথার বাড়তি চামড়ার নিচে সাদা এক ধরনের পদার্থ (smegma) জমে এবং এই স্মেগমাই পুরুষাঙ্গের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
৩। কখন খতনা করা যাবে নাঃ
হাইপোসপেডিয়াস রোগ। হাইপোসপেডিয়াস এটি পুরুষাঙ্গের জন্মগত ত্রুটি। এখানে মনে হবে শিশু জন্মগত ভাবে খতনা হয়ে এসেছে। এ ক্ষেতে পুরুষাঙ্গের বাড়তি চামড়া এই জন্মগত ত্রুটি মেরামতের সময় প্রয়োজন হয়। তাই খতনা করানো নিষেধ।
৪। খতনা করার আগে রক্ত পরীক্ষা করার প্রয়োজন আছে কি?
অবশ্যই আছে। খতনার পর কিছু রোগীর ব্লিডিং বন্ধ হয় না তাই খতনার আগে শিশুর অবশ্যই রক্ত ক্ষরণ জনিত সমস্যা (জন্মগত)আছে কি না, তা দেখে নিতে হবে।
৫। খতনা করার পর কী কী জটিলতা দেখা দিতে পারেঃ
- রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়া।
- হাজাম বা অনভিজ্ঞতার কারণে অতিরিক্ত বা কম চামড়া কেটে ফেলা।
- পুরুষাঙ্গের সংবেদনশীল মাথা কেটে ফেলা।
- হাজামরা খতনা করে ব্লাইন্ডলি অর্থাৎ মাথার অগ্রভাগে চামড়া মাথা থেকে সঠিক মতো না ছাড়িয়ে না দেখে কেটে ফেলতে গিয়ে এ ধরনের মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকে।ইংল্যান্ড সহ পৃথিবীর সব দেশে এই খতনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা হয় এবং খতনা ইউরোলজিস্ট / পেডিয়াট্রিক সার্জন ছাড়া করা হয় না। কারণ খতনা করতে গিয়ে যে কোনো দুর্ঘটনা শিশুর ভবিষ্যৎ জীবন জটিল করে তুলতে পারে। আমাদের দেশে যেকোন এমবিবিএস ডাক্তার খতনা করতে পারেন।
৬। এনেসথেসিয়া বা অবশ করা হয় কি?
লোকাল এনেসথেসিয়া অথবা জেনারেল এনেসথেসিয়া দিয়ে এই অপারেশন করা হয়। তবে জেনারেল এনেসথেসিয়া বা পুরুপুরি অজ্ঞানই নিরাপদ।
৭। বাংলাদেশে খরচ কতো হয়?
খরচ অন্যান্য অপারেশনের মতো হাসপাতালভেদে বা ডাক্তারভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। সাধারন মানের হাসপাতালে পাঁচ হাজার টাকা থেকে পনেরো হাজার টাকা এবং বিশেষায়িত হাসপাতালে দশ হাজার থেকে ত্রিশহাজার টাকা হতে পারে। লেজার অপারেশনে আর একটু বেশি খরচ হতে পারে।সরকারী হাসপাতালসমূহে বিনা পয়সায় এই অপারেশন হয়।
লেখক
ডাঃ মোহাম্মদ ইব্রাহিম আলী
এম.বি.এস,বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এমএস (ইউরোলজি)
ফেলোশীপ ইন ইউরোলজি (ইউএএ,মালয়েশিয়া)
আবাসিক সার্জন (ইউরোলজি)
ইউরোলজি বিভাগ
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
রোগী দেখার সময়
প্রতিদিন বিকাল
৩.০০ থেকে ৮.০০ টা পর্যন্ত
শুক্রবার বন্ধ
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/Dr-Ibrahim-Urologist-Bangladesh-770739179933378