১০ই অক্টোবর 'বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস'। এই বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো 'অসম বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য '।শরীর এবং মন এ দুই নিয়ে হচ্ছে মানুষ।সুস্থ-সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে গেলে সুস্থ শরীর এবং সুস্থ মন সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
'অসম বিশ্ব'বলতে বোঝানো হয়েছে বর্তমান সমাজের বিভিন্ন খাতে অসমতাকে।অর্থনৈতিক, সামাজিক,স্বাস্থ্য,উন্নত ও অনুন্নত দেশের অসমতা,ধনী ও গরীবের অসমতা, একই শহরে জীবন যাপনে অসমতা,বর্তমানে কোভিড পরিস্থিতিতে সর্বক্ষেত্রে অসমতা বিশেষত মানসিক স্বাস্থ্যখাতে।কোভিড পরিস্থিতিতে প্রচুর মানুষের চাকরি গিয়েছে। যার ফলে হতাশা বেশি করে গ্রাস করে সবাইকে।
মানসিক রোগ সম্পর্কে এখনো বাংলাদেশের মানুষ নানা কুসংস্কারে বিশ্বাস করে ।তাদের সবাই চিকিৎসা পায়না।যারা চিকিৎসা করে তারা বিভিন্ন কারনে মাঝপথে ছেড়ে দেয়।এতে করে তাদের সামাজিক, পারিবারিক, আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।অনেক সময় তাদেরকে একঘরে করে রাখা হয়।বেশিরভাগ মানুষ জ্বিন ভূতের আছর বলে ধরে নিয়ে কবিরাজী চিকিৎসা করে।কখনো বা মানসিক বিশেষজ্ঞ না দেখিয়ে অন্য বিষয়ের ডাক্তার দেখান।ফলে অনেক সময় রোগের জটিলতা বাড়তে থাকে।
বর্তমানে কোভিড পরিস্থিতির কারনে অসমতা আরও বেড়েছে।মানুষের মাঝে হতাশা, অনিশ্চয়তা, টাকা পয়সার অভাব, চাকরি হারানো, অশান্তি, অস্থিরতা, আতংক, বিষন্নতা, পারিবারিক কলহ, মৌলিক চাহিদা পূরণ না হওয়া, জীবনযাত্রার মান কমে যাওয়া এসব কিছুই মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনেছে।ধনী গরীবের পার্থক্য আরও প্রবল হয়েছে।চিকিৎসা খাতে ব্যয় বেড়েছে কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়েনি।মানসিক সমস্যা বেড়ে গেলেও মানুষের মাঝে মানসিক সমস্যার চিকিৎসা নিয়ে একধরনের অনাগ্রহ কাজ করে।তারা মনে করে মানসিক রোগ মানেই পাগল হয়ে যাওয়া।আর ডাক্তারের কাছে গেলে সমাজের মানুষের কাছে ছোট হতে হবে এই ভেবে তারা আরও আসতে চায়না।এই কোভিড পরিস্থিতিতে আত্মহত্যার প্রবনতা বেড়েছে মানুষের মাঝে চাপ সামলাতে না পেরে।শিশু-কিশোরের মধ্যেই দেখা দিয়েছে ইন্টারনেট আসক্তি, পারিবারিক দূরত্ব বেড়েছে বাবা মায়ের সাথে ছেলেমেয়েদের।মাদকাসক্তিসহ আরও নানাবিধ আসক্তিজনিত সমস্যা বেড়ে গেছে।
আমাদের করণীয়ঃ
১. মানসিক রোগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা সবার থাকতে হবে।কখন আপনি মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ দেখাবেন সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে।কুসংস্কারাচ্ছন্ন না হয়ে বিভিন্ন অপচিকিৎসা না করিয়ে মানসিক রোগীকে প্রথমেই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে।যথাযথ চিকিৎসা নিলে মানসিক রোগীদের একটা বিরাট অংশ অন্য সবার মতো সুস্থ জীবনযাপন করতে পারে।
২. কেউ যদি আগে থেকেই মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে যেকোনো চাপের কারণে তাদের রোগ বেড়ে যেতে পারে।তাই তাদের চিকিৎসার ব্যাপারটি নিশিত করতে হবে।প্রয়োজনে নিয়মিত ফলোআপ করতে হবে।ঠিকমতো ওষুধ খাচ্ছে কিনা, উন্নতি বা অবনতি বিষয়ে৷রোগীর এবং তার পরিবারের লোকদের এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
৩. সুনিয়ন্ত্রিত জীবন ব্যবস্থায় আনতে হবে জীবনকে।এদের মধ্যে সুষম খাদ্যাভ্যাস,পরিমিত ঘুম , নিয়মিত শরীর চর্চা এগুলো জরুরি।
৪.সবরকম পরিস্থিতি নিজেকে মানিয়ে নেওয়া শিখতে হবে।এখন যে অবস্থায় আছি সেই অবস্থাকে মেনে নিয়ে তাকে আরও কিভাবে ভাল করে সামনে এগিয়ে নেয়া যায় সেই চিন্তা করতে হবে।অন্য মানুষের সাথে নিজের অবস্থার তুলনা করা বন্ধ করতে হবে।
৫. পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে হবে।পরিবারকে গুনগত সময় দিতে হবে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা সময় পরিবারের সব সদস্যদের নিয়ে সময় কাটাতে হবে। বয়স্ক ও সন্তানদের কথার গুরুত্ব দিতে হবে।তাদের মাঝে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে হবে।
৬. মানসিক স্বাস্থ্য সেবা সবার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে হবে।মানসিক রোগ ও চিকিৎসা নিয়ে প্রচার বাড়াতে হবে।দেরী না করে রোগ দেখা দিলে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের নিকট পাঠাতে হবে রোগীকে।এক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞগনকে ও এগিয়ে আসতে হবে যাতে রেফারেল সিস্টেম আরও উন্নত হয়।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/Dr-Fatema-Zohra-Psychiatrist-Specialist-in-Family-Medicine-293734764582169
লেখক
ডা. ফাতেমা জোহরা
MBBS(DU), MD Psychiatry (BSMMU), FMD(USTC), DHMS(BD)
মনোরোগ, যৌনরোগ ও মাদকাসক্তি নিরাময় বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক
মানসিক রোগ বিভাগ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/Dr-Fatema-Zohra-Psychiatrist-Specialist-in-Family-Medicine-293734764582169