বাংলায় ওটসকে ওটস বলা হলেও হিন্দিতে এটিকে বলা হয় জই। এছাড়াও ভারতের নানা প্রদেশে এটির বেশ কিছু নাম আছে, তবে আজকাল এটি ওটস আর ওটমিল মানেই বেশি পরিচিত আমাদের কাছে ।ওটস আসলে একটি বীজ জাতীয় আনাজ, আর ওটমিল হলো এই ওটসের ডালিয়া । এটিকে অনেক জায়গায় জইচূর্ণও বলা হয়ে থাকে। সবাই তাদের পছন্দ মতো ওটসের দেশী অথবা বিদেশী ডিশ তৈরী করে থাকেন যা তাঁদের স্বাদের যোগানের সাথে সাথে স্বাস্থ্যেও পুষ্টি বজায় রাখে।আজকাল বাজারে অনেক ধরণের ওটস পাওয়া যায় তার মধ্যে প্যাকেট ওটস, রেডি টু ইট ওটস, ওটসের আটা ইত্যাদির চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
আমরা সবাই জানি যে, আমাদের সকলের কাছেই সকালের নাস্তা খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমরা রাতের পর আবার সকালেই প্রথম খাবার খেয়ে থাকি এর মধ্যে অনেকটাই সময়ের ব্যবধান, আর এই সময়ের মধ্যে আমরা কোনোরকমের খাবারই আমাদের শরীরে দিই না। তাই সবসময় আমরা সকালের নাস্তায় এমন কিছু খাবার খেতে চাই যা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষেও ভালো সাথে খেতেও বেশ সুস্বাদু হয়।ওটস আপনি চটজলদি বানাতেও পারবেন সাথে এর মধ্যে থাকা ফুড মেডিসিন আপনার মুডকেও ভালো রাখবে।যদি আপনি রোজ ওটস ডালিয়া মানে ওটসমিল নিয়ে থাকেন তাহলে কিছু দিনের মধ্যেই আপনার ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ও গর্ভের বাচ্চার জন্য ওটস একটি পুষ্টিকর খাদ্য যা খুব তাড়াতাড়ি হজমও হয়ে যায়।
আধ কাপ ওটমিলে ১৩ গ্রাম মতো প্রোটিন থাকে যা আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। সঙ্গে ওটসমিলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভরপুর মাত্রায় থাকে যা এর ভিতর থাকা ভিটামিন E ও আয়রনের থেকে পাওয়া যায়।শুধু এইটুকুই নয় ওটমিলে ভিটামিন বি 1, তামা, ফসফরাস ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো পুস্টিকর উপাদান থাকে যা এটিকে একটি সম্পূর্ণ খাবার বানায়।
ওটস আপনার সম্পূর্ণ ক্যালোরির ৮১% পর্যন্ত কম করতে পারে। ওটসের মধ্যে থাকা পুষ্টিকর তত্ত্ব আপনার খাবারের ক্যালোরির মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।আমরা হয়তো লক্ষ্য করে থাকবো যে আমরা যদি কম ক্যালোরির খাবার দিনে বেশিরভাগ সময় খেয়ে থাকি তাহলে আমাদের খুব তাড়াতাড়ি খিদেও পেয়ে যায়, কিন্তু ওটমিল এমন একটা খাবার যা নেওয়ার ফলে আমাদের পেট অনেকক্ষণ পর্যন্ত ভরা থাকে। আর এই জন্য যদি আমরা মাঝে মাঝে অল্প অল্প খেতে থাকি তাহলে আমাদের পেটও ভরে থাকে সাথে ওজনও বেশি বাড়তে পারে না। আরো সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এই যে ওটস সহজপাচ্য। এই সব কারণ যদি আমার একটু বিবেচনা করে দেখি তাহলে সহজেই বুঝতে পারবো যে আমাদের আজকের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে মেদবর্জিত সুস্থ থাকতে ওটস সব থেকে সঠিক খাবার বা বলা ভালো জলখাবার বা নাস্তা।
ওটস আর ওটসমিলের কিছু স্বাস্থ্যসম্মত উপকারিতা
১. একটি পুষ্টিকর খাবার
ওটস একটি পুষ্টিকর খাবার এ বিষয়ে আমরা আগেও বলেছি। এটিতে অনেক বেশি পরিমানে কার্বোহাইড্রেড ও সাথে প্রোটিন থাকে যা শরীরের প্রয়োজনীয় প্রায় সবরকম পুষ্টিই এর থেকে পাওয়া যায়।
এর মধ্যে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল শরীরকে অনেক ধরণের রোগের হাত থেকেও সুরক্ষা দিয়ে থাকে ।
২. ভরপুর মাত্রায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
ওটসে অনেক ধরণের প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের উচ্চ রক্তচাপকে কম করতে সাহায্য করবার সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়।
৩. বিটা-গ্লুকোন
ওটসে বিটা-গ্লুকোন এর মাত্রা অনেক পরিমানে থাকার কারণে তা সহজেই রক্তের সাথে দ্রবিত হয়ে যায়। বিটা-গ্লুকোন শরীরের কোলেস্টরল ও মধুমেহকে নিয়ন্ত্রণ করার সাথে সাথে শরীরের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থেকেও সুরক্ষা প্রদান করে থাকে।
৪. কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে
ওটস এল ডি এল কোলেস্টরল (LDL cholesterol) কে নিয়ন্ত্রিত করে, যার ফলে হার্ট সম্পর্কিত অনেক সমস্যা কম হয়ে যায় সাথে হৃদরোগের আশঙ্কাও অনেক কমে যায়।
৫. শর্করা নিয়ন্ত্রণ
ওটস ওজন কম করার সাথে সাথে রক্তে শর্করার পরিমাণও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। একই সাথে ওটসের মধ্যে থাকা ফাইবার ইনসুলিনের মাত্রাকে সঠিক রাখতে সাহায্য করে। এই জন্য একটু বয়স্ক ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ওটস খাওয়া অত্যন্ত লাভদায়ক।
৬. ওজন কম করতে সাহায্য করে
ওটসে ফাইবারের মাত্রা অনেকটা পরিমাণে থাকাতে আমরা যদি সকালে ওটস খেতে পারি তাহলে গোটা দিন আমাদের পেট ভর্তি থাকে যার ফলে আর ভারী কোনো খাবার খাওয়ার আমাদের প্রয়োজন হয় না।তাই যারা পুষ্টি সঠিক রেখে নিজেদের ওজন কম করতে চাইছেন তাদের জন্য ওটস একটি সঠিক পুষ্টিকর খাবার।
৭. ত্বকের সুরক্ষা
যদি প্রতিদিন আপনি ওটসমিল দিয়ে আপনার সকালের নাস্তা সারেন তাহলে কিছুদিন বাদেই আপনি আপনার ত্বকের মাধ্যমে তার ফলটি দেখতে পাবেন।আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বেড়ে যাবে ওটস খাওয়ার ফলে। ওটসকে তাই অনেক ধরণের স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে প্রাকৃতিক হার্ব হিসাবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।এটি ত্বকের ঔজ্জ্বল্যের পাশাপাশি একজিমা থেকেও ত্বককে সুরক্ষা দিয়ে থাকে।
৮. বাচ্চাদের অ্যাজমার সমস্যা কম করে
একটি গবেষণাতে পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যাচ্ছে যে যদি বাচ্চাদের ছয় মাস হওয়ার সাথেই ওটস খাওয়ানো শুরু করা যায় তাহলে বাচ্চাদের শিশু বয়সের অ্যাজমা সহ অন্যান্য সমস্যা অনেক কম হয়ে যায়।
৯. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার একটি আদর্শ খাবার
আজকাল আমরা সব থেকে বেশি সমস্যায় থাকি আমাদের কনস্টিপেশন সমস্যা নিয়ে। এর কারণ হলো আমাদেরআমাদের অনিয়মিত জীবনযাপন আর সাথে সঠিক খাবার না খাওয়া, কিন্তু আপনি অস্বাস্থ্যকর খাবার না খেয়ে যদি প্রতিদিন সঠিক মাত্রায় ওটসমিল নিতে থাকেন তাহলে তা আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষেত্রে একটি ভালো উপায়।
১০. সম্পূর্ণ ভিটামিন আর মিনারেলে ভরপুর ওটস
ওটসে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন আর মিনারেল থাকে সঙ্গে ম্যাঙ্গানিজও থাকে তা আমাদের হাঁড়ের পক্ষে খুবই লাভদায়ক। বেশিরভাগ আমরা দেখে থাকি যে একটু বয়েস হবার সাথে সাথে পুষ্টির অভাবে আমাদের হাঁড়ের স্বাস্থ্য খুব কমজোর হতে থাকে। তাই আপনি যদি প্রতিদিন খাবার রুটিনে ওটসমিল সামিল করে নেন তাহলে আপনার হাঁড়ের ক্ষয়রোগ রোধ করা অনেকটাই সম্ভব হবে।যার ফলে আপনি অনেক বয়েস অবধি সুস্থও থাকতে পারবেন।
কোন ওটস খাবেন?
সাদা ওটস ! ভালো কোম্পানির সাদা ওটস খেতে পারেন!
লেখক
নিউট্রিশনিস্ট সুমাইয়া সিরাজী
Bsc (Hon's) Msc (food & Nutrition)
CND (BIRDEM), CCND (BADN)
Trained on Special Child Nutrition
Consultant Dientitiant (Ex)
Samorita Hospital
Mobile: 01750-765578,017678-377442
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/নিউট্রিশনিস্ট-সুমাইয়া-সিরাজী-102934114426153