ঘুমিয়ে আছেন হঠাৎ পায়ের মাংসপেশির টানের ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলেন আপনি। এমতাবস্থায় পা সোজা বা ভাঁজ করা সম্ভব না। একটানা পা ভাঁজ করে রেখে হঠাৎ সোজা করতে গেলে পায়ের পেশিতে টান পড়ে তখনই পায়ের পেশীতে বা রগে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়। এমনটা ঘুমের মধ্যে বা জেগে থাকা অবস্থাতেও হতে পারে। তবে ঘুমন্ত অবস্থায় বেশি হয়ে থাকে।দীর্ঘসময় ধরে অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে অনেক সময় পায়ের পেশিতে বেশি টান লাগতে পারে। আবার দীর্ঘক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলেও এমনটা হয়ে থাকে।
পেশিতে টান পড়ার কারণঃ
- শরীরে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে।
- ব্যায়াম, খেলাধূলা বা যে কোনো শারীরিক কসরতের আগে ওয়ার্মআপ বা শরীর গরম না করলে।
- দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ থাকলে।
- হঠাৎ অতিরিক্ত ভারী কিছু ওঠালে।
- পানিশূন্যতা ও খুব ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে।
- পেশী ক্লান্ত থাকা অবস্থায় নড়াচড়া করলে।
- গর্ভকালীন, বিশেষ করে শেষের দিকে প্রয়োজনীয় খনিজের অভাবে।
- অতিরিক্ত ব্যায়াম, পরিশ্রম বা পায়ের পেশির বেশি ব্যবহার করলে।
- বেশি সময় বসে থাকা, শক্ত জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা ও ঘুমের সময় ভুল দেহভঙ্গির কারণে।
পেশিতে টান এবং পায়ের শিরায় ব্যাথা হলে করণীয়ঃ
- যদি হাঁটুর নিচে পায়ের পিছনের মাসলে টান লাগে তাহলে পা সোজা করে হাত দিয়ে পায়ের আঙুলের মাথাগুলো ধরে আপনার দিকে আস্তে আস্তে টানুন। আর যদি সামনের দিকে হয় তাহলে পা ভাঁজ করে পায়ের আঙুলের মাথাগুলো পেছনের দিকে টানুন।
- যদি পেশি শক্ত হয়ে আসে তখন ওয়াটার হট ব্যাগের মাধ্যমে আক্রান্ত পেশিতে কিছুক্ষণ গরম সেক দিন । আবার যদি পেশি বেশি নরম ও ফুলে যায় আর ব্যথা থাকে তাহলে আইস ব্যাগ দিয়ে ঠাণ্ডা সেক দিন।
- উরুর পেছনে এমনটা হলে, চিৎ হয়ে শুয়ে পা ভাঁজ করে হাঁটু বুকের দিকে নিয়ে আসুন যতটুকু পারা যায়। আর উরুর পেছনের পেশিতে আলতো হাতে আস্তে আস্তে মেসেজ করুন আরাম পাবেন।
জেনে রাখুনঃ
- এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ বছরের পর প্রতি তিনজনের একজন পায়ের পেশি টান লাগার সমস্যায় ভোগেন।
- রাতে যাদের বেশি ক্রাম্প বা টান হয়, তাদের ঘুমাতে যাওয়ার আগে গরম পানিতে গোসল করে নিলে এ সমস্যা কমে যেতে পারে।
- অনেক সময় রিল্যাক্স পজিশনে থাকলে কিছু সময়ের মধ্যে ব্যথা চলে যায়।
- যে মহিলাদের গর্ভকালীন সময়ে পায়ের রগে টান পড়ে, বেশির ভাগ সময় বাচ্চা প্রসবের পর এ সমস্যা থাকেনা।
- মাসল পুল হওয়ার পর পেশির ওই অংশ যদি টান টান করতে গিয়ে ব্যথা পান, তাহলে সেই চেষ্টা আর করা যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
- পেশির টানমুক্ত থাকতে বেশি বেশি পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
দীর্ঘক্ষণ না বসে, এক ঘণ্টা পর পর কয়েক মিনিট পায়চারি করুন।- ব্যায়াম, খেলা বা অন্যান্য কাজ ধীরগতিতে শুরু করুন।
- যদি সম্ভব হয় সপ্তাহে অন্তত তিন দিন সাঁতার কাটুন।।
- নেশাজাতীয় বদঅভ্যাস দূর করুন।
- আঘাতের স্থানে কোন ধরণের বাম বা মলম মালিশ করা থেকে বিরত থাকুন।
- শীতে অনেকে পানি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেন তাই শিরায় টান পড়ার প্রবণতা বাড়ে। সাধারণত পানি পানের পরিমাণ বাড়ালে এ সমস্যার সমাধান হয়।
এসব উপায় কাজে লাগিয়েও যদি শিরায় টান পড়ার সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/DrMuhid
লেখক
ডা. মুহম্মদ মুহিদুল ইসলাম
সায়েন্টিফিক অফিসার
বিআইএইচএস হসপিটাল কোভিড-১৯ ল্যাব, ঢাকা
অনলাইন কনসালট্যান্ট ,বায়োমেড ডায়াগনস্টিক এন্ড রিসার্চ ল্যাবরেটরি
চিকিৎসা পরামর্শ নিতে এপয়েন্টমেন্ট নিন:
০১৬৮১২৫৬৩৩১
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/DrMuhid