প্রথমেই বাদামের প্রকারভেদ নিয়ে একটু বলে নেই
বাদাম অনেক রকমের হয়ে থাকলেও সাধারণত আমরা চার রকম বাদাম আমাদের হাতের কাছে পাই -
কাঠ বাদাম
কাঠ বাদামকে আলমন্ড বলা হয়। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফাইবার, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ফলিক এসিড ও ভিটামিন ই। তাই আলমন্ডকে বাদামের রাজা বলা হয়।
চীনা বাদাম
এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারি। এতে রয়ছে প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম,আয়রন, সোডিয়াম,পটাসিয়াম, ভিটামিন-এ, বি, সি।
পেস্তা বাদাম
একে আদর্শ খাবারের তালিকায় রাখা যায়। কারণ এই বাদামে ভিটামিন বা প্রোটিন কোনও কিছুর কমতি নেই।
কাজু বাদাম
এর উপাদানগুলো হচ্ছে আয়রন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন-এ।খেতে সুস্বাদু।
এবার বলবো বাদামের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে -
ওজন নিয়ন্ত্রণ
ঘেরলিন হরমোন শরীরে ক্ষুদা বৃদ্ধি করে, তখন সঠিকভাবে শরীরকে নিয়ন্ত্রিত করে পরিমিত খাদ্য গ্রহণে সহায়তা করে থাকে বাদাম। অনেক উচ্চমাত্রার ক্যালরি সম্পন্ন খাবারের তুলনায় সামান্য পরিমাণ বাদাম আপনার দৈনন্দিন প্রয়োজনের ক্যালরি পূরণে সক্ষম। তাই প্রতিদিন ১০-১২ টি বাদাম গ্রহণ করুন।
পিরিয়ডের সমস্যা দূর করে
পিরিয়ডের সময় সাধারণত অধিকাংশ নারীদের মন-মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। কিছু খেতে ভালো লাগে না। অনেকের আবার তলপেটে ব্যাথা থাকে। বাদাম ক্যালসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি পিরিয়ড সময়ে খেলে কোমরের ও তলপেটের ব্যাথা কমায়। মন সতেজ ও সুন্দর থাকে। নারীদের শরীরের জন্য, বিশেষত বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন রকম পরিবর্তনে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খুবই প্রয়োজন হয়। আর পেস্তা বাদামও পিরিয়ডের সমস্যা সমাধানের জন্য উপকারী। নিয়মিত পেস্তা বাদাম খেলে নারী স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকার পাওয়া যায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
বাদামে পটাসিয়ামের পরিমাণ উচ্চ মাত্রায় থাকে এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকে। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ।সোডিয়ামের মাত্রা বেশি হলে দেহে রক্ত বৃদ্ধি পায় তখন রক্তচাপ বেড়ে যায়।
কোলেস্টেরল কমায়
নিয়মিত বাদাম খাওয়ার দ্বারা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয় ।বাদামে উচ্চ প্রোটিন সামগ্রী হওয়ার কারণে দ্রুত হজমের শক্তি বাড়ায়। এছাড়াও শরীরের জন্য সবচেয়ে খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল কমিয়ে দেয় এবং ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল বাড়াতে সাহায্য করে। এভাবে বাদাম রক্তে কোলেস্টেরলের তারতম্য ঠিক রাখে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে
বাদাম টিউমারের বৃদ্ধিজনিত ক্যান্সারের বিরুদ্ধে রীতিমতো লড়াই করে। গবেষণায় দেখা যায়, সপ্তাহে কমপক্ষে দুই বার বাদাম খেলে পুরুষদের ২৭ শতাংশ ও নারীদের ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় এই খাবারটি।
হার্ট ভালো রাখে
বাদামে রয়েছে দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম, তামা,লোহা,ওমেগা ৩ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে যা হৃদযন্ত্রের করোনারি ধমনীতে যে কোনো প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সহায়তা করে এবং রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং হৃদরোগের সহায়তা করে।
ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি করে
আমেরিকার অ্যান্ড্রস ইউনিভার্সিটির গবেষকদের করা এক পরীক্ষায় দেখা গেছে বাদামে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো পরীক্ষার আগে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ম করে বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
ডায়াবেটিস কমায়
বাদামে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি-৩, ফলিক অ্যাসিড ও প্রোটিন রয়েছে। ম্যাঙ্গানিজ হার্টের জন্য খুব ভালো। বাদাম খনিজের দারুণ উৎস। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে – বাদাম খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২১ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।
ক্লান্তি দূর করে
বাদাম শক্তির ভালো উৎস। বাদাম খাওয়ার ফলে দেহে এনার্জি দেয়। নিয়মিত এই বাদাম খেলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়।
উজ্জ্বল ত্বক
রূপচর্চা বা ত্বকের সৌন্দর্যের ব্যাপারে যারা সচেতন নিয়মিত বাদাম খেতে পারেন এতে করে চামড়ার খসখসে ভাব দূর হয়ে ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল।
রক্তশূন্যতা হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে।
কোনো কিছু অতিরিক্ত ভালো না।তাই বেশি গ্রহণের অপকারিতা একটু জেনে নিন
ওজন বৃদ্ধি
মাত্রাতিরিক্ত বাদাম খেলে আপনি কিন্তু মোটা হয়ে যেতে পারেন। যেমন কাঠ বাদাম ওজন কমায় পাশাপাশি বেশি খেলে ওজন বাড়াতেও পারে ।
এসিডিটি বৃদ্ধি
কাজু বাদাম আপনার পছন্দ আর আপনি রোজ প্রয়োজনের থেকে ( ২০০ গ্রাম বা তার বেশি ) খেয়ে ফেলেন। তাহলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
এলার্জি,কোনো কোনো ঔষধের কাজে বাঁধা দেয়া ইত্যাদি ঝামেলা হতে পারে।
কিছু টিপস -
খাওয়ার আগে ৩০ মিনিট বাদাম ভিজিয়ে রাখবেন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত খাবারের তালিকায় বাদাম যোগ করলে চার ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ৫-৮টি বাদাম।
অতিরিক্ত কাজু বাদাম খাবেন না।
দুপুরে সবজি খাওয়ার পরে ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ৩০ মিনিট আগে ৫-৬ টি কাঠ বাদাম খেতে পারেন।
কাঠবাদাম খোসা সহ খাবেন।
যাদের আ্যনিমিয়া আছে তারা অবশ্যই প্রতিদিন ৮-১০ টি বাদাম খাবেন।
সন্তানসম্ভবাদের নিয়ম করে ভেজানো আমন্ড খেতে পরামর্শ দেন স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞরা।এতে উপস্থিত ফলিক অ্যাসিড জন্মের সময় শিশুর খুঁত দূর করে।
লেখক
পুষ্টিবিদ সিরাজাম মুনিরা
কনসালটেন্ট ডায়েটিশিয়ান
ইবনেসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।