-
পিসিওএস বা পলিসিস্ট ওভারী। পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম একটি হরমোন জনিত স্বাস্থ্য সমস্যা যা সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে আক্রান্ত করছে। এটি প্রধানত বালিকা ও মহিলাদের প্রজননক্ষম সময়ে হয়ে থাকে (১৫-৪৪ বছর) সংখ্যার কিছুটা তারতম্য হলেও ১৫ বছর থেকে বয়স ৪৪ বছরের দিকে যত আগাতে থাকে, পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের রোগীর সংখ্যা তত বৃদ্ধি পেতে থাকে (২.২%-২৬.৭%)। পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশেই পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের রোগীর সংখ্যা আলাদা আলাদা রকম তবে বাংলাদেশে এ হার ২৫ শতাংশের কাছাকাছি হবে বলে ধরে নেওয়া হয়।
তাই আজ সংক্ষেপে আলোচনা করবো এ ব্যাপারে
কী খেলে পিসিওস হয়ে থাকে
-
এক
চিনি
আপনার পিসিওএস থাকলে আপনার ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে। আপনার শরীরে ইতিমধ্যে ইনসুলিন এবং গ্লাইসেমিক স্তর বেশি হওয়ায় জটিল কার্বস বা চিনি খাওয়া আপনার পরিস্থিতি আরও খারাপ করে দেবে। এছাড়াও, অতিরিক্ত চিনি আপনার ওজনকে বাড়িয়ে তুলবে। অতএব, কৃত্রিম মিষ্টি, প্যাকেটজাত জুস, চিনিযুক্ত মিষ্টি এবং ক্যান্ডিগুলি এড়িয়ে চলুন।
-
দুই
দুধ চা
রং চা চিনি ছাড়া ভালো।কিন্তু চায়ের সাথে দুধ মিশ্রণ কোনোসময়ই ভালো নয়। আমাদের দেশে টিনএজ থেকে বুড়ো সবারই দুধ চা এর প্রতি বিশাল আকর্ষণ। কিন্তু এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, চায়ের সাথে কয়েক ফোঁটা দুধ মিশ্রিত করলে চায়ের গুণাগুণ নষ্ট হয়।
২০০২ সালে USA এর হিউম্যান নিউট্রিশন রিসার্চ সেন্টারের একটি গবেষণায় দেখা যায়, এক কাপ চায়ে ৫০ গ্রাম দুধ মেশানো হলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা ৯০% কমে যাচ্ছে। যখন চায়ের ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায় তখন শরীরের ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ পিসিওএসের দিকে ধাবিতো হচ্ছে হাজার হাজার মেয়ে ও মহিলা।
-
তিন
লাল মাংস
লাল মাংস যেমন মাটন, গরুর মাংস ইত্যাদিতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল থাকে যা কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এটি ওজন বাড়ায় এবং হরমোন ভারসাম্যহীনতায় অবদান রাখে, যা পিসিওসের দিকে টেনে নিয়ে যায়।
-
চার
প্রক্রিয়াজাত বা প্রসেসড জাঙ্ক ফুড
প্রসেসড ফুডে উচ্চ পরিমাণে লবণ রয়েছে যা স্বাস্থ্যকর নয়। এছাড়াও, এই খাবারগুলি অস্বাস্থ্যকর ট্রান্স ফ্যাট এবং কৃত্রিম মিষ্টি দিয়ে পূর্ণ যা খারাপ কোলেস্টেরলের বৃদ্ধিতে অবদান রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপের দিকে প্রভাবিত করে। জাঙ্ক, ভাজা খাবার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বাড়ায় এবং ডায়াবেটিসের দিকে টেনে নিয়ে যায়। এগুলি স্থূলত্বের পিছনে প্রধান কারণ। আর এসকল বিষয়ের সাথে পিসিওএস হওয়া জড়িতো।
-
পাঁচ
দুগ্ধজাত খাবার বা ডেইরি প্রোডাক্ট
ডেইরি মিল্ক প্রোডাক্টের মধ্যে পনির ,চকলেট দুধ, আইসক্রিম ইত্যাদি বোঝায়।দুগ্ধের অতিরিক্ত ব্যবহার রক্তের গ্লুকোজ স্তর বৃদ্ধি করতে পারে এবং ইনসুলিন বৃদ্ধির কারণকেও উদ্দীপিত করতে পারে। অতএব, প্রয়োজনীয় ডেইরি সামগ্রীর সাথে সুষম খাদ্য বজায় রাখুন।
-
ছয়
অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ
পিসিওএসের লক্ষণ নিয়ে আক্রান্ত মহিলারা সাধারণত কার্বোহাইড্রেট সঠিকভাবে গ্রহণ করতে করেন না। আমাদের দেশ তো নাস্তা মানেও ভাত ধরে নেয়। যার ফলস্বরূপ পিসিওএস হয়ে থাকে। আর তখন মেয়েলি হরমোন অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা হ্রাস পায়।
কার্বোহাইড্রেটের উদাহরণের মধ্যে রয়েছে
পিজা, পাস্তা, সাদা ভাত, নুডুলস ইত্যাদি।
-
সাত
ভাজা খাবার
ভাজা খাবার যেমন রেস্তোরার মুরগী ভাজা, লুচি ভাজা ইত্যাদিতে স্যাচুরেটেড বা হাইড্রোজেনেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ। এই অস্বাস্থ্যকর ফ্যাটগুলি পুরুষ হরমোন ইস্ট্রোজেন উৎপাদন বাড়াতে পারে যা আপনার পিসিওএসের দিকে টেনে নিয়ে যাবে।
-
আট
কোল্ড ড্রিংকস
আমাদের দেশে এইটি এতো অহরহ যে, সব খাবারের সাথে খেতে চাই। এই পানীয়টি আপনাকে পিসিওসের প্রথম ধাপে ঠেলে নেয়, তা হয়তো আপনি জানেন ও না।
-
নয়
সয়া সস অথবা সয়া পণ্য
পিসিওএস এর লক্ষণে সাধারণত ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেশি হয়ে থাকে। সয়া পণ্য ইস্ট্রোজেনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। সয়া পণ্য বলতে সয়া দুধ, সয়া সস ইত্যাদিকে বোঝানো হয়েছে।
ছাড়াও ওজনাধিক্যের কারণে সিস্ট হতে পারে। বন্ধ্যাত্ব রোগের চিকিৎসায় যে ওষুধ ব্যবহার করা হয় তার জন্যও এই সমস্যা হতে পারে। হরমোনজনিত কারণে হতে পারে। বংশগত কারণে হতে পারে। ওভারি ক্যানসার, ব্রেস্ট ক্যানসার, খাদ্যনালির ক্যানসার বিশেষ করে বিআরসিএ জিন যাদের থাকে তাদের এ সমস্যা হতে পারে।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন এই মারাত্মক রোগটি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।তাই দেরী না করে নিজেকে সংযত করে ফেলুন এসকল খাবার থেকে। আজ এ পর্যন্ত।পরের পর্বে হয়তো নতুন চমক নিয়ে আবারো হাজির হবো।
ধন্যবাদ
Dietitian Shirajam Munira
কনসালটেন্ট ইবনেসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
Dietitian Shirajam Munira |
পিসিওএস বা পলিসিস্ট ওভারি সিনড্রোম কি? কেন হয়? |
মেয়েলি সমস্যা |
- royalbangla.com এ আপনার লেখা বা মতামত বা পরামর্শ পাঠাতে পারেন এই এ্যড্রেসে [email protected]
পরবর্তী পোস্ট |
ইউরিন ইনফেকশন: কারণ ও প্রতিরোধের উপায় |