সহজ ভাষায় পায়খানা কষা বলতে আমরা কোষ্ঠকাঠিন্যই বুঝি। মাত্রই শেষ হল ঈদুল আযহা। ইসলাম ধর্মের অনেক বড় একটা অনুষ্ঠান। সে উপলক্ষে মাংশ খাওয়া হয়েছে অনেক বেশি। আবার সাথে যোগ হয়েছে তীব্র গরম। শরীরে হচ্ছে পানিশূন্যতা। ফলে পায়খানা কষা হওয়া এখনকার একটি খুবই সাধারন সমস্যা। অনেকের টয়লেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায়, কিন্তু পেট পরিষ্কার হয় না। আবার অনেকের ২ দিন ৩ দিন কেটে যায় তাও পায়খানা হয় না। সাথে যোগ হচ্ছে মলদ্বারে ব্যথা, রক্তপাত, আর তীব্র যন্ত্রণা।
পায়খানা কষা বলতে কি বুঝি?
• মলত্যাগ যদি সপ্তাহে তিনবারের কম অথবা পরিমাণে খুব কম হয়।
• অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করেও মলত্যাগ না হওয়া।
• মল অস্বাভাবিক রকমের শক্ত বা শুকনো হওয়া।
• যদি ঘন ঘন পায়খানা নরম কারক ঔষধ খেতে হয়।
• পায়খানা করতে যদি অনেক বেশি বল প্রয়োগ করতে হয়।
পায়খানা কষা কেন হয়?
বিভিন্ন কারণে এ সমস্যা দেখা দেয়। তবে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস কোষ্ঠকাঠিন্যের পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করে।
• শাকসবজি , ফলমূল কম খাওয়া।
• ফাস্ট ফুড ও মশলাযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া।
• শরীরের ওজন কমানোর জন্য অপরিকল্পিত ডায়েট , অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস।
• ব্যথানাশক ওষুধ যেমন- অ্যাসপিরিন এবং ইবুপ্রোফেন , Tramadol, Opioids-জাতীয় ওষুধ খাওয়া।
• হাইপোথাইরয়েডিজম -থাইরয়েডগ্রন্থির সমস্যা।
• ব্যায়াম না করা এবং খাদ্যাভ্যাস সঠিক না হওয়া।
• ভিটামিন যেমন : ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদি খাওয়া।
• মলের বেগ পেলেও চেপে রাখা যদি নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়।
• বিষণ্ণতা, মানসিক চাপ, অনিদ্রা ।
• পানি কম পান করা ।
• গর্ভধারণ- গর্ভকালীন ও বুকের দুধ খাওয়া কালীন সময়ে অধিকাংশ মা ই এই সমস্যাটির সম্মুখীন হন। যার কারনে অনেক জতিলতার মুখোমুখি হতে হয়।
• তবে কিছু ক্ষেত্রে এই সমস্যা বংশানুক্রমিক।
জটিলতা কি হতে পারে?
দীর্ঘ মেয়াদে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে –
• পাইলস, ফিশার, ফিস্টুলা হতে পারে ।
• পাইলস থেকে রক্তপাত হতে পারে।
• অ্যানাল ফিশার হয়ে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।
• অ্যানাল ফিশার থেকে অ্যাবসেস এমনকি পরবর্তীতে ফিস্টুলা হতে পারে।
• রেক্টাল প্রোলাপস বা মলদ্বার বাইরে বের হয়ে আসা।
• ইন্টেসটাইনাল অবস্ট্রাকশন, পেটব্যথা বা ফাঁপা, অরুচি, ক্ষুধামান্দ্যের মতো জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
• কলোরেক্টাল তথা মলাশয়ের ক্যানসার এর ঝুকি বাড়ায়।
• সময়মতো কোষ্ঠকাঠিন্যের যথাযথ ব্যবস্থা বা সতর্কতা অবলম্বন না করলে তা কোলন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
• গর্ভকালীন সময়ে দীর্ঘ মেয়াদে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে অনেক রকম জটিলতা এমনকি গর্ভপাত থেকে শুরু করে অপরিণত বাচ্চা জন্ম নিতে পারে।
তাহলে সমাধান কি?
• খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন।
• প্রতিদিন প্রচুর পানি ও তরল এবং যথেষ্ট আঁশযুক্ত খাবার খান।
• শস্য, শাকসবজি, ফলমূল যেমন বেল, পেঁপে ইত্যাদি হলো আঁশযুক্ত খাবার খান।
• দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপমুক্ত জীবনযাপনের চেষ্টা করুন।
• যত দূর সম্ভব মল চেপে না রাখা।
• নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটাচলার অভ্যাস গড়ে তোলা।
• ইসবগুলের ভুসি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধানে বেশ কাজে আসে।
• কিছু কিছু ওষুধ যেমন-ব্যথানাশক ওষুধ, আয়রন বা ক্যালসিয়াম এর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
• কফি, পিৎজা, ফাস্ট ফুড বা পাস্তার মতো খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
• চকলেট, ভাজাপোড়া, লাল মাংস (গরু, খাসি ইত্যাদি), চিপস, প্রচুর চিনিযুক্ত বেকারি খাদ্য যেমন কেক, পেস্ট্রি কেক এবং আয়রন ক্যাপসুল, কাঁচাকলা ইত্যাদি কম খাওয়াই ভালো।
• পায়খানা নরমকারক ঔষধ কম খান। কারণ, এতে মলদ্বারের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।
• প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন।
শেষকথা-
সময়মতো কোষ্ঠকাঠিন্যের যথাযথ ব্যবস্থা বা সতর্কতা অবলম্বন করলে এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয় সেজন্য এই ব্যপারে সাবধানতা অবলম্বন করলে আমরা এই ঝূকি গুলো এড়িয়ে চলতে পারি।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/Colorectal-Care-Dr-Md-Ashek-Mahmud-Ferdaus-911427482298482
লেখক
Colorectal Care Dr. Md Ashek Mahmud Ferdaus
FCPS(surgery) FISCP(India) Ms(Colorectal Surgery) Bangabandhu Sheikh Mujib Medical Univarsity
Chamber: নেক্সাস হাসপাতাল-ঢাকা রোড - ময়মনসিংহ
Contact:01796586561
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/Colorectal-Care-Dr-Md-Ashek-Mahmud-Ferdaus-911427482298482