বর্ষাকাল চলে এসেছে, করোনা ভাইরাসসহ নানা ধরণের ভাইরাস ও ফ্লু এর আক্রমণ বেড়েই চলেছে। সেইসাথে বর্ষাকালে পানি বাহিত কিছু রোগেরও প্রাদুর্ভাব ঘটে। কোভিডের পাশাপাশি সাধারণ ফ্লু ও বেশ ব্যাপকভাবে মানুষকে আক্রান্ত করছে। ফ্লু আক্রান্ত ব্যাক্তিরা এবং চিকিৎকেরাও বেশ হিমসিম খাচ্ছেন। এর থেকে বাঁচতে চিকিৎসার পাশাপাশি আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চেষ্টা করতে হবে।
যদিও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি একদিনের বিষয় নয়। বিষয়টাএমন নয় যে, আমি চাইলাম আর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে গেল। এটা অনেক লম্বা সময়ের ব্যাপার। তবুও চেষ্টা করতে হবে।
একটি বিল্ডিং এর কথায় বলি। একটি বিল্ডিং কতটা মজবুত হবে সেটা নির্ভর করে, ঐ বিল্ডিং এর ভিত্তি কতটা মজবুত তার উপরে। ঠিক তেমনি একজন ব্যাক্তির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা শক্তিশালি হবে সেটা নির্ভর করে, ঐ ব্যাক্তি মায়ের গর্ভ থেকে শুরু করে শিশুকালের পরিচর্যার উপরে। পরিচর্যা বলতে অনেক কিছুই বোঝায়, তারমধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ডায়েট বা খাবার ব্যাবস্থাপনা। আসলে মানুষের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সকল উপাদান আসে খাবার থেকেই। তাই আসুন আমরা ঐ সকল উপাদান সম্পর্কে একটু জানার চেষ্টা করি, যে সকল উপাদান আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রধান ভুমিকা পালন করে ভিটামিন এবং মিনারেলস । যে সমস্ত ভিটামিন ও মিনারেলস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সহায়ক, সেগুলো এবং সেগুলোর উৎস সম্পর্কে আমরা একটু জানার চেষ্টা করবো।
লাল চাল-লাল আটাঃ
লাল চাল এবং লাল আটার কথা যেন আমরা শুধু মুখেই বলে থাকি। এখন এগুলোর দেখা পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য বিষয়। একটা সময় ছিল, যখন নিম্নবিত্তের প্রধান খাবার ছিল লাল চালের ভাত আর লাল আটার রুটি। এটা খেয়েই তারা সুস্থ স্বাভাবিক নীরোগ জীবন যাপন করত। ঐ সময়ে উচ্চবিত্তরা লাল চাল আর লাল আটার কথা শুনে যেন নাক শিটকাত। উচ্চবিত্তদের প্লেটে শোভা পেত পলিশ করা সাদা চিকন চালের ভাত এবং ময়দার তৈরী সাদা রুটি।এখন যেন দিন বদলিয়েছে। সাদা ভাত আর সাদা রুটি খেয়ে খেয়ে যখন শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে, তখন তারা লাল চাল আর লাল আটার পিছনে দৌড়াচ্ছে। একযুগ আগেও আগেও বাজারে লাল চাল আর লাল আটার দাম ছিল সবচেয়ে কমদামি। আর এখন লাল চাল আর লাল আটার আটার দাম অন্যগুলোর চেয়ে বেশি।এতে বিদ্যমান সেলেনিয়াম শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। চালের সবচেয়ে পুষ্টিকর অংশ বাহিরের লালচে বা বাদামী আবরণ। পালিশ করে তুলে ফেলে ভিতরের শুধুমাত্র শর্করা অংশ খাওয়ার ফলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিন দিন কমছে। এছাড়া, কিছু সামুদ্রিক মাছ, টার্কি, চিংড়ি, ডিম প্রভৃতিতে সেলেনিয়াম রয়েছে । এছাড়াও ফাইবারের খুব ভাল উৎস লাল চাল এবং লাল আটা
অঙ্কুরিত বীজঃ
অঙ্কুরিত ছোলা, গম, যব সবকিছুতেই মিনারেলস এর পরিমান স্বাভাবিক থেকে অনেক বেশি থাকে। আয়রন, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, মাঙ্গানিজ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে , ফোলেট পর্যাপ্ত পরিমানে থাকে। এসেনশিয়াল এমাইনো এসিডের সবগুলোই অঙ্কুরিত বীজে থাকে। তাই চেষ্টা করুন প্রতিদিন সকালে একটু অঙ্কুরিত বীজ খেতে।
জিংকঃ
রক্তের শ্বেতকনিকা মানবদেহের সৈন্য হিসাবে কাজ করে। আর এই শ্বেতকণিকার সংখ্যা ঠিক রাখতে সহায়তা করে জিংক। শরীরে জিংকের ঘাটতি হলে রক্তে শ্বেতকণিকার পরিমান কমে যেতে পারে। ফলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। বাদাম,শিম, মাংস, ডিম, মটরশুটি, কাঠালের বিচি, দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবারে জিংকের পরিমাণ বেশি থাকে।
ম্যাগনেসিয়ামঃ
ক্লোরোফিলের একটি অন্যতম উপাদান ম্যাগনেশিয়াম। তাই সবুজ পাতা বা কান্ড বিশিষ্ট যেকোন শাকসবজিতেই ম্যাগনেশিয়ামের আধিক্য থাকে। গাঢ় সবুজ শাক সবজি,কলা, ডার্কচকলেট,কাজু,পেস্তা বাদাম, কাঠ বাদাম, সূর্যমূখীর বীজ ইত্যাদিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম আছে, যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
ভিটামিন সিঃ
শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ উপাদান হচ্ছে ভিটামিন সি। শরীরের এমন কোন অংশ নাই যেখানে ভিটামিন সি এর ভুমিকা নাই। শরীরে কাটা ছেড়া, চর্মরোগ, মাড়ির যত্ন, চুলের যত্ন, কাশি, জ্বর সবকিছু থেকেই আমাদের সুরক্ষা দানে ভিটামিন সি এর অবদান আছে। এমনকি বর্তমানের মহামারি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধেও ভিটামিন সি এর মেগাডোজ শক্তিশালি ভুমিকা পালন করছে। টকজাতীয় সমস্ত দেশীয় ফল ভিটামিন সি এর উৎস। এরমধ্যে আমলকি, পেয়ারা, জলপাই, আমড়া, জাম্বুরা, জাম এবং কাচামরিচ, এগুলোতে একটু বেশিই ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
ভিটামিন বি-১২ঃ
শুধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেই নয়, রোগ থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভেও ভিটামিনবি১২ দারুণ কার্যকর। দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, ডিম ও কলিজাতে ভিটামিনবি১২ পাওয়া যায়।
ভিটামিন সি এবং বি পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিন, এটি প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়। শরীরে জমা থাকে না বিধায় এগুলোর প্রতিদিনের চাহিদা প্রতিদিন পুরন করতে হবে। সেলক্ষ্যে আমাদের প্রতিদিন কিছু পরিমানে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হবে।
ভিটামিন ডিঃ
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ভিটামিন ডি। শরীরে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করতে, ভিটামিন ডি যুক্ত খাবারের পাশাপাশি শরীরে রোদ লাগাতে হবে। রোদ লাগলে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরী হয়। সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ দিন, ১৫-২০ মিনিট রোদ লাগালেই হবে। এছাড়াও তেলযুক্তমাছ, সামুদ্রিক মাছ, মাছ, মাছ, দুধ, মাশরুম ও ডিমের কুসুম ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার।
তবে এসব খাবার গ্রহনে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ।
লেখক
পুষ্টিবিদ মোঃ ইকবাল হোসেন।
চেম্বারঃ
সার্জিস্কোপ হাসপাতাল, ইউনিট-২, কাতালগঞ্জ, চট্টগ্রাম। প্রতি শুক্রবার থেকে বুধবার, সন্ধ্যা ৭ঃ০০ টা থেকে রাত ১০ঃ০০ টা পর্যন্ত।
সিরিয়ালের জন্যঃ ০১৭৬৪-৭৮৬৭৫৩
অনলাইন সেবা পাওয়ার জন্য
হোয়াটস এ্যাপ নম্বর-01533843123
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/Nutritionist.Iqbal