আসুন জেনে নেই কি এই ভিটামিন ডি সম্বন্ধে যা করোনা প্রতিরোধ ও প্রতিকারে কাজ করবে একইভাবে !!
ভিটামিন ডি কি:
আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এর মধ্যে অন্যতম হলো ভিটামিন ডি!!! আমাদের ত্বক সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসলে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। এই ভিটামিন হাড়ের বৃদ্ধি ও শক্তির জন্য প্রয়োজনীয় কারন এটি ক্যালসিয়াম , ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস অন্ত্রে শোষণ এ সহায়তা করে।
কেন ভিটামিন ডি প্রয়োজন??
১. শিশুর দৈহিক বিকাশ ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ও হাড়কে সুরক্ষিত করে।
২. বয়স্কদের হাড় জনিত ক্ষয়রোধ থেকে রক্ষা করে
৩. শরীরে ক্যালসিয়াম এর শোষন ও ফসফরাসের এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
৪. ঠান্ডা লাগা, সর্দি কাশি ভালো হয়।
৫. মহিলাদের হাড়ের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে।
৬. চুল পড়া বন্ধ হয় ।
৭. ওজন কমায় ও নিয়ন্ত্রণে রাখে !
৮. দাঁতের গঠন সুরক্ষিত রাখে।
কিভাবে বুঝবেন আপনার ভিটামিন ডি এর অভাব???
১. বার বার অসুস্থ হয়ে পড়া
২ . হাড় ও পিঠে ব্যাথা
৩. মাংসপেশী তে ব্যাথা সৃষ্টি হওয়া
৪. শরীরের কোন ঘা বা ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া
৫. অতিরিক্ত চুল পড়া
৬. অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া
৭. হতাশা আর বিষন্নতায় ভোগা
৮. কখনো কখনো ওজন বেড়ে যাওয়া।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে,
দ্যা ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র অনুসারে , বয়স্ক এবং কালো বর্ণের লোকেরা যাদের ভিটামিন ডি এর পরিমাণ কম রয়েছে তাদের করোনা ভাইরাসের গুরুতর লক্ষন থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিনের পরিপূরক থেকে উপকার পাওয়া যেতে পারে সুতরাং প্রবীণ ও কালো বর্ণের লোকেরা তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি পরিপূরক থেকে উপকার পাবেন। লকডাউনের জন্য এখন অনেকেই এখন বাসা থেকে বের হতে পারছেনে না এই অবস্থায় ভিটামিন ডি এর ঘাটতি বাড়তে পারে।
ল্যানসেটে স্টাডিতে বলা আছে___ বিভিন্ন দেশে মৃত্যু হারের সম্ভাব্য কারন গুলোর মধ্যে একটি হিসাবে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা যায় । এটি এজিং ক্লিনিক্যাল এন্ড এক্স পেরিমেন্টাল রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত একটি পর্যবেক্ষন গবেষনাকে উদ্ধৃত করে যা ২ টি ইউরোপীয় দেশ থেকে প্রাপ্ত বেটা ব্যবহার করেছিলো । এটি অনুসারে ইতালি এবং স্পেনে গড়ে ভিটামিন ডি এর মাত্রা কম। আশ্চর্যের বিষয়, এই দেশগুলোতে উত্তর ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় করোনায় আক্রান্তের হার বেশি। উত্তর ইউরোপীয় দের মধ্যে তুলনামূলক ভাবে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন ডি আছে।অতীতের গবেষণা গুলো ভিটামিন ডি এর অভাবের সঙ্গে শ্বসনতন্তের সংক্রমণের একটা সংযোগ খুঁজে পেয়েছেন। ভিটামিন ডি তখন ঔষধ হিসেবে খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিষাক্ততার ঝুঁকি কম থাকে। কিডনি ও যকৃতের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বিষাক্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি হতে পারে। তাই একজন ডাক্তার ও একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞ এর মতামত অনুসারে নিয়মমাফিক খেতে হবে।
কিভাবে পাবেন ভিটামিন ডি?
সবচেয়ে ভালো উৎস সূর্যের আলো । সকালের রোদে ১৫ -২০ মিনিট শরীরে লাগানো । তবে সানস্ক্রীম ব্যবহার করে বা ফুল হাতা জামা পড়লে এটা কাজ করবে না।
কোন কোন খাবারে পাবেন ভিটামিন ডি ???
১.ডিমের কুসুম
২. দুধ
৩.পনির
৪. মাশরুম
৫. সামুদ্রিক মাছ
৬. চর্বিযুক্ত মাছ
৭. মাছের তেল
৮.দই
৯. কমলালেবুর রস
কিছু ঘরোয়া টিপস
যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে গেছেন তারা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি জাতীয় টকফল এর সাথে এই খাবার গুলো রাখতে পারেন। একেক বেলায় একেক খাবার রাখুন তেমন একটা নমুনা খাবার নিচে বলা হলো------
সকালে :
টকদই চিড়া কলা অথবা আপেল মিক্সড করে খান!সাথে ১ টা ডিম আস্ত সেদ্ধ করে খান কুসুম সহ পুরোটাই । ১ ঘন্টা পর আদা রস কুসুম গরম পানি তে মিশিয়ে হালকা লেবু মধু দিয়ে খান
মধ্যে দুপুরে:
১ গ্লাস কমলালেবুর রস
দুপুরে :
ভাত মাছ সবজি +সালাদ পরিমাণ মতো সাথে একটা টক ফল।
বিকেলে :
মাশরুম চিকেন এর স্যুপ । আর এর পুষ্টিগুণ বাড়াতে সাথে যোগ করুন আদার কুচি , রসুন সস,অল্প কালিজিরা ।
রাতে:
ব্রেড সাথে ১ স্লাইস পনির + ১টা ফিশ বেকড(তেল ছাড়া)+ কিছু সবজি এবং করে নিন সবশেষে ঘুমানোর আগে ১ গ্লাস দুধ সাথে ১ চিমটি হলুদ মিশানো । সারাদিনে আদা লেবু পানি চলবে। টালা জিরার গুঁড়া মিক্সড করে খেলে আরো ভালো।এভাবে সব প্রয়োজনীয় খাবার গুলো আপনার খাবারে রেখে সহজেই পুষ্টি চাহিদা মেটাতে পারেন।
(বি.দ্র: এই ধরনের নমুনা চার্ট শুধুমাত্র যাদের অন্য কোন শারীরিক সমস্যা নেই তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সবার বয়স ওজন ও উচ্চতা ভেদে চাহিদা ভিন্ন হয় তাই আপনার নিকটস্থ একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞ এর সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন)
সর্বশেষ ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট:
কারো ভিটামিন ডি এর অতিরিক্ত অভাব হলে সেক্ষেত্রে কেবল খাবার ও সূর্যের আলো দিয়ে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ সম্ভব নয় সেক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে। কতটুকু পরিমাণ এ সাপ্লিমেন্ট নিবেন সেটাও বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে নির্ধারণ করবেন। আর যারা মাছ খেতেই পারেন না একদম তারা কড লিভার অয়েল খেতে পারেন। বাজারে পাওয়া যায় ভালো কোম্পানির টা দেখে নিতে পারেন। করোনা প্রতিরোধ এ এখন পর্যন্ত কোন ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। নিত্য নতুন তথ্য আসছে WHO থেকে কিন্তু আজ পর্যন্ত যতগুলো খাবার নিয়ে কথা হয়েছে সবগুলো তেই ভালো ফলাফল আসছে আলহামদুলিল্লাহ! তাই করোনা প্রতিরোধে ও প্রতিকারে এই ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার গ্রহন ই পারে আপনার সমস্যার মাত্রা বহুলাংশে কমিয়ে দিতে । ইনশাআল্লাহ।সবাই সুস্থ থাকুন আপনার দেহের ভিটামিন ডি এর খবর রাখুন।
লেখক
নিউট্রিশনিস্ট সুমাইয়া সিরাজী
Bsc (Hon's) Msc (food & Nutrition)
CND (BIRDEM), CCND (BADN)
Trained on Special Child Nutrition
Consultant Dietitian (Ex)
Samorita Hospital
Mobile:
01750-765578,017678-377442
www.facebook.com/নিউট্রিশনিস্ট-সুমাইয়া-সিরাজী-102934114426153