-
কভিড ১৯ নতুন একটি করোনাভাইরাস ঘটিত ঠান্ডা, কাশি ও জ্বর উপসর্গযুক্ত একরকম অসুখ যেটা ৮০% এর উপরে রোগীর ক্ষেত্রেই কোনরকম চিকিৎসা ছাড়াই ভাল হয়ে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ফুস্ফুসের সংক্রমন জটিল আকার ধারন করায় খারাপ রকম নিউমোনিয়া দেখা দেয় । সেক্ষেত্রে জীবন সংশয়ে পড়তে পারে। যাই হোক এই রোগের কিছু বৈশিষ্ট জানানোর চেষ্টা করছিঃ
-
এক
এটি ভাইরাসঘটিত অসুখ। ব্যকটেরিয়া বা প্যারাসাইটঘটিত নয় যে এন্টিবায়োটিক খেয়ে ভাল হয়ে যাবেন।
-
দুই
এই রোগ হলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই ভাইরাসকে দমাবে। সেজন্য প্রয়োজন রোগ প্রতিরোধী খাবার ঔষধ শুধুমাত্র লক্ষনভিত্তিক কিছু সুবিধা দিবে। যেমন জ্বর কমাতে নাপা বা শ্বাসকষ্টের উপশমের জন্য অক্সিজেন বা অন্যান্য ঔষধ।
-
তিন
যেহেতু এই রোগে একশ জন রোগির মদ্ধে ৮০ জনের উপরে সাধারন চিকিতসাতেই ভাল হয়ে যায় সেহেতু বিভিন অপ ঔষধ এক্ষেত্রে কার্যকরি মনে হতে পারে। যেমনঃ থানকুনি পাতা, ইথানল ভাপ, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, কুইনাইন সহ নানান ঔষধ প্রয়োগ করে সবাই বিস্ময়কর সাফল্য দাবি করে বসছে। এলোপ্যাথি, হোমিওপ্যথি বা ভেষজ কোনকিছুই বাদ নেই। সবাই কিছু না কিছু সমাধান নিয়ে হাজির। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ছাড়াই। আর সবাই ৮০% সাফল্যতো পাবেই । কারন ৮০% এর উপরে রোগি এমনিতেই ভাল হয়ে যায়। যাই হোক কার্যকর ঔষধ বের করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দেয়া হচ্ছে নিয়মিত। তবে ভাইরাসঘটিত অসুখে সবার জন্য কার্যকর ঔষধ বের হবার সম্ভাবনা খুব কম। ভ্যাক্সিন আসতেও অনেক সময় লাগবে। তাছাড়া ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ভ্যাক্সিন এক দেড় বছরের বেশি কার্যকর থাকে না। তাই ভ্যাক্সিন নিলেও এক দেড় বছরের বেশি নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না। এছাড়া লকডাউন করে তো আজীবন একে ঠেকিয়ে রাখাটা বাস্তবে অসম্ভব। তাই শীঘ্রই যখন সব স্বাভাবিক হয়ে আসবে তখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার ঝুকি নিয়েই আমাদের চলতে হবে। তাই আমাদের টার্গেট হতে হবে যাতে এতে আক্রান্ত না হই। আর যদি আক্রান্ত হয়েই যাই এই ভাইরাস যাতে আমাদের কাবু করতে না পারে। আক্রান্ত না হবার জন্য
-
ক
ভিড় ভাট্টা এড়িয়ে চলুন। বাজার বা ভিড়ের মদ্ধে এক জায়গায় যত কম দাড়াবেন তত ভাল। অকারনে আড্ডা দেয়া থেকে বিরত থাকুন । দিলেও ৩ ফিট দূরত্ব বজায় রাখুন এবং খোলা বাতাসে আড্ডা দিন।
-
খ
মাস্ক পড়ুন । দাম, সহজপ্রাপ্যতা, কার্যকারিতা আর ব্যাবহারে সুবিধা বিবেচনায় নিলে ৩ লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক সবচাইতে ভাল। মাস্ক পড়ে ফু দিয়ে দেখবেন বাতাস খুব বেশি বের হচ্ছে কিনা। যদি মাস্ক পড়ে মোমবাতি নিভাতে পারেন তাহলে সেই মাস্ক মানসম্মত নয়।
-
গ
মাস্ক নাকের নিচে দিয়ে রাখার জন্য নয়। যদি চেহারা শো অফ করতেই হয় তাহলে দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক নাকের নিচে নামাবেন। এছাড়া অবশ্যি মাস্ক দিয়ে নাক ঢেকে রাখবেন। নোজবার ঠিকভাবে চাপ দিয়ে ফিটিং করবেন আর চশমা থাকলে মাস্ক চশমা দিয়ে চাপা দেবেন। যারা চশমা পড়েন না তারা গগলস পড়তে পাড়েন চাইলে। নাকের নিচে মাস্ক রাখার চাইতে মাস্ক না পড়াই ভাল।
-
ঘ
কোনও মাস্কই ধোয়া যাবেনা। সবচেয়ে ভাল একবার (৮ ঘন্টা) ব্যবহারের পর ডাস্টবিনে ফেলে দিলে। আবার ব্যাবহার করতে চাইলে সাবধানে কোন প্যাকেট বা কৌটায় ৭ দিন রেখে পরে ইউজ করতে পাড়েন। চাইলে রোদে দুই তিন দিন শুকিয়ে ইউজ করতে পারেন।
-
ঙ
যাদের ফিজিক্যাল ফিটনেস আর শ্বাস প্রশ্বাস ফিটনেস ভাল তারা চাইলে এন৯৫ এফ এফ পি ২ গ্রেডের রেস্পিরেটর হাফ ফেস মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। এগুলাও টানা আট ঘন্টা ব্যাবহার করা যায়। কোন সমস্যা নেই। তবে যদি নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যি এগুলা বাদ দিয়ে সার্জিক্যাল ব্যাবহার করবেন। এন৯৫ এফ এফ পি ২ গ্রেডের রেস্পিরেটর মাস্কে ইলেক্ট্রোস্ট্যীটীক চার্জ দেয়া থাকে ছোট পার্টিক্যাল আটকানোর জন্য। তাই ধোয়ার কথা চিন্তাই করবেন না। এমনকি স্যানিটাইজার বা ইথানল স্প্রে করলেও এর ফিল্টারিং ক্যাপবিলিটি নষ্ট হয়ে যায়। তাই রোদে শুকিয়ে বা এক সপ্তাহ রেখে দিয়ে রিইউজ করতে পারবেন। এইসব মাস্ক কিভাবে পড়তে হয় এবং সিল করতে হয় তা ইউটিউবে দেখে নেবেন। এইসব মাস্ক ফিজিক্যাল ডেমেজ না হলে বা ছিড়ে না গেলে ৩০ বার ব্যাবহার করতে পারবেন।
-
চ
যাদের সার্জিক্যাল বা রেস্পিরেট্র ব্যাবহারের সুযোগ নেই তারা কাপড়ের মাস্ক ব্যাবহার করবেন। ধুয়ে ব্যবহার করা যায়। তবে এসব মাস্কের ভাইরাস আটকানোর ক্ষমতা সার্জিক্যাল মাস্কের অর্ধেক।
-
ছ
হাত ধোয়ার ব্যাপারটা সবাই জানেন। হাত মুখে বা চোখে দেবেন না। মুখ বা চোখে হাত দিতে হলে সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড ভাল করে ধুয়ে নেবেন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ভাল কোম্পানিরগুলো ব্যাবহার করতে পাড়েন । তবে সাবান সবচাইতে ভাল।
উপরের পয়েন্টগুলির মদ্ধে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ন হচ্ছে মাস্ক দিয়ে নাক ঢাকা । যে মাস্কই হোক।
উপরের পরামর্শগুলো আক্রান্ত হওয়া থেকে বাচাতে সাহায্য করবে। তবে যদি আক্রান্ত হয়েই যান সেক্ষেত্রে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে যাতে কাবু না হন। নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলতে হবে
-
এক
ক্রনিক ডিজিজ (ডায়াবেটিস, প্রেশার ইত্যাদি) যাদের আছে তারা তা নিয়ন্ত্রনে রাখুন। ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
-
দুই
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান। এজন্য সুষম খাদ্য তালিকা অনুসরন করুন। যেকোন নিউট্রিশনিস্ট বা আমার পরমার্শ নিতে পারেন ।
-
তিন
টেনশন বা মানসিক চাপমুক্ত পারিবারিক জীবনযাপন করুন। নিজের উপর নির্ভর করছে।
-
চার
৭ ঘন্টা টানা ঘুমাতে হবে প্রতিদিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখতে। নিজের উপর নির্ভর।
-
পাঁচ
শারিরীক ফিটনেস বাড়ান । অতিরিক্ত ওজন ঝড়িয়ে ফেলুন। প্রতিদিন আধাঘন্টা ব্যায়াম করুন। ইউটিউবে দেখে ঘরেই ব্যায়াম করতে পারেন। ফিটনেস ট্রেইনার এর সাহায্যও নিতে পারেন
-
ছয়
এখানের সব তথ্য অথেনটিক সোর্স থেকে দেবার চেষ্টা করেছি। তাই ঘন ঘন গরম পানি বা ঘন ঘন চা খাবার কথা বললাম না। কারন এগুলোর উপকার এখনো পরীক্ষিত নয়। তবে এতে কোন ক্ষতিও নেই। তবে বেশি গরম পানি পেটের জন্য ক্ষতিকর আর গরম পানির ভাপ ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এগুলো চর্চা করবেন না দয়া করে।
-
সাত
পরিবারের সবার সাথে হাশিখুশি দুঃশ্চিন্তমুক্ত সম্পর্ক রাখুন। কর্মক্ষত্রেও তাই। মানসিক চাপ, পারিবারিক ঝগড়াঝাটি, দুঃশ্চিন্তা এসব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই যার যেভাবে সম্ভব এসব এড়িয়ে চলুন। প্রতিমুহূর্তে কতজন আক্রান্ত, আজকে করোনায় কতজন মারা গেলেন এসব নিয়ে অযথা আলোচনা বা চিন্তাভাবনা পরিহার করুন।
মনে রাখবেন দুনিয়ার সব সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব আপনার নয়। সেসব নিয়ে চিন্তা করাও আপনার কাজ নয়। দেশের কোথায় দূর্নীতি হচ্ছে, কোথায় ত্রানচুরি হচ্ছে সেটা দেখার লোক আছে। আর না থাকলেও আপনার মাথা ঘামানোতে সেই সমস্যা দূর হবে না। তাই অযথা সব বিষয়ে মাথা ঘামিয়ে হতাশা বাড়াবেন না
ধন্যবাদ সবাইকে।
ডায়েটিশিয়ান ফারজানা
চেম্বারঃ ১৯ একে কমপ্লেক্স, গ্রীন রোড (সেন্ট্রাল হস্পিটালের বিপরীতে), ঢাকা।
এপয়েন্টমেন্টঃ ০১৭১-৭২৩৭৭২২
ডায়েটিশিয়ান ফারজানা |
করোনা ভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভঃ করোনা ভাইরাস বা কভিড 19 প্রসঙ্গে যেসব কথা আমাদের সবার জানা প্রয়োজন |
রোগ প্রতিরোধ |
- royalbangla.com এ আপনার লেখা বা মতামত বা পরামর্শ পাঠাতে পারেন এই এ্যড্রেসে [email protected]
পরবর্তী পোস্ট |
ইউরিন ইনফেকশন: কারণ ও প্রতিরোধের উপায় |