আপনাদের অনেকের ই প্রশ্ন থাকে যে প্লাস্টিকের ডিম/চাল কিভাবে চিনব। অনেকেই অনুরোধ করেছেন প্লাস্টিকের ডিম/চাল নিয়ে কিছু বলেন। অনেকেই আবার এর সত্যতা জানতে চেয়েছেন যে, সত্যিই কি প্লাস্টিকের ডিম/চালের অস্তিত্ব আছে কিনা। এসব বিষয়ে আপনাদের এক্টু জানাতে চাই--
আমি Nutritionist Iqbal Hossain
প্লাস্টিকের ডিম/চাল কতটা ক্ষতিকর বা আদৌ এগুলোর অস্তিত্ব সত্যিই বাজারে আছে কিনা তার উত্তর আগে আপনারা দিবেন, পরে আমি দেবো। তার আগে আমরা কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।বাজারের একটা মুরগীর ডিম আপনার বাসায় পৌছাতে, প্রতিপিসে খরচ হয় ৮-৯ টাকা। আপনারা জানেন যে প্লাস্টিকের ডিম বাংলাদেশে তৈরী হয় না, চীন দেশে তৈরী হয়। একটা ডিমের ওজন গড়ে ৫০ গ্রাম। তারমানে একটা প্লাস্টিকের ডিমের জন্য গড়ে ৫০ গ্রাম প্লাস্টিক প্রয়োজন হবে। এই ৫০ গ্রাম প্লাস্টিক দিয়ে ডিমের তিনটা পার্ট মানে সাদা অংশ, কুসুম আর খোসা তৈরী করতে হবে। এসব করতে বিভিন্ন মেশিনারিজসহ অনেক জনবল প্রয়োজন হবে। এখন ঐ ডিম চীন দেশ থেকে বাংলাদেশে পাঠাতে হলে জাহাজ বা প্লেনে করে পাঠাতে হবে। তার একটা ভাড়া আছে।
আবার এক দেশের পণ্য অন্য দেশে গেলে ঐ পণ্যের উপর আবগারি শুল্ক আরোপিত হয়, তাতে ঐ পণ্যের দাম আরো বেড়ে যায়। এরপর জাহাজ থেকে খালাসের খরচ, পরিবহন খরচ ইত্যাদি তো আছেই। সবকিছু মিলিয়ে আপনি একটা ডিম কিনতে হবে ৮-৯ টাকায়।
আবার একটু আগের লাইনে চলে যাচ্ছি। বলেছি একটা ডিম তৈরী করতে গড়ে ৫০ গ্রাম প্লাস্টিকের দরকার হয়। এই ৫০ গ্রাম প্লাস্টিক দিয়ে কোম্পানি যদি একটা ডিম তৈরী না করে, একটা ৫০ গ্রাম ওজনের মগ তৈরী করে, বা বাচ্চাদের খেলনাও তৈরী করে, তাহলে বাজারে সেটা মিনিমাম ৫০ টাকায় বিক্রি করতে পারবে।
তাহলে একটা ব্যাবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ৪ গুন লাভ কমিয়ে প্লাস্টিকের ডিম তৈরী করবে নাকি বেশি লাভের জন্য মগ বা খেলনা তৈরী করবে, সেটার একটু ভাবলেই পেয়ে যাবেন। তাই এক্ষেত্রে বলাই যায় যে, প্লাস্টিকের ডিম বলে কিছু নাই। প্লাস্টিকের চালের ক্ষেত্রেও উপরের বিষয়টি বিবেচনা করলেই বুঝতে পারবেন যে, প্লাস্টিকের চাল বলেও কিছু নেই।
বাজারে এককেজি প্লাস্টিকের চাল বিক্রি হবে সর্বোচ্চ ৫০ টাকায়। কিন্তু ঐ এক কেজি প্লাস্টিক দিয়ে যদি ৭ টা বাথরুমের বদনাও তৈরী করা হয়, তাহলে তার বাজারমুল্য হবে ২৮০ টাকা। তাহলে কোম্পানি কোন দুঃখে প্লাস্টিকের চাল তৈরী করবে বলুন তো?
তাহলে মাঝেমাঝে কিছু ডিমে প্লাস্টিকের ন্যায় উপাদান দেখা যায় কেন?
এগুলো নষ্ট ডিম। ডিমেরও কিন্তু একটা শেলফ লাইফ আছে। মুরগী একটা ডিম দিবে আর সেটা এমনিতেই মাসের পর মাস ভাল থাকবে এমনটা কখনই নই। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ডিম সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত ভাল থাকে। আর যদি তাপমাত্রা মেইন্টেন না হয়, তাহলে সর্বোচ্চ ৭ দিন ভাল থাকবে। ডিম নষ্ট হলে প্রথমের ডিমের প্রোটিনের (সাদা অংশের) বিকৃতি ঘটে, যেটাকে প্রোটিনের ডিন্যাচারেশন বলা হয়। বিকৃতির সময় এবং ধরনের উপরে ভিত্তি করে ডিমের বিভিন্ন অংশ তখন বেশ রাবার টাইপের শক্ত হয়ে যায়, তখন সেটাকেই হয়ত অনেকেই প্লাস্টিকের ডিম মনে করেন।
আচ্ছা আপনি জীবনে এমন কোন প্লাস্টিক দেখেছেন, যেটা পানিতে সিদ্ধ হয়? দেখেন নি তো? তাহলে প্লাস্টিকের ডিম আর চাল কিভাবে সিদ্ধ হবে?
এবার অনেকেই বলবেন যে, একসময় ফেসবুকে দেখেছিলাম যে, একজন লোক ভাতের দলা পাকিয়ে মেঝেতে ড্রপ করাচ্ছে। জ্বী সেটা আমিও দেখেছি। এটা ভাতের ন্যাচার। চালের মূল উপাদান স্টার্চ, যেটা রান্না করলে একটু চ্যাটচ্যাটে ভাব হয়। আপনি যদি মাড় না ফেলে বসা ভাত রান্না করেন, তাহলে এই চ্যাটচ্যাটে ভাবটা আরো বেশি হবে। এমন ভাত আপ্নি একটু শক্ত করে রান্না করলে আপনিও ভাতের দলা পাকিয়ে মেঝেতে ড্রপ করাতে পারবেন। তাই আর কোন সংশয় নয়, কোন ভয় নয় নিশ্চিন্তে থাকুন যে, প্লাস্টিকের ডিম আর চালের অস্তিত্ব নেই। তবে চাল ডিমসহ সবধরনের খাবার খাওয়ার সময় নিজ দায়িত্বে এগুলোর কোয়ালিটি বুঝে খাবেন। সবাই সুস্থ থাকুন নিরাপদ থাকুন।
লেখক
পুষ্টিবিদ মোঃ ইকবাল হোসেন।
চেম্বারঃ
সার্জিস্কোপ হাসপাতাল, ইউনিট-২, কাতালগঞ্জ, চট্টগ্রাম। প্রতি শুক্রবার থেকে বুধবার, সন্ধ্যা ৭ঃ০০ টা থেকে রাত ১০ঃ০০ টা পর্যন্ত।
সিরিয়ালের জন্যঃ ০১৭৬৪-৭৮৬৭৫৩
অনলাইন সেবা পাওয়ার জন্য
হোয়াটস এ্যাপ নম্বর-01533843123
www.facebook.com/Nutritionist.Iqbal