নারকেল তেল খাওয়া যায় আবার অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা যায়। আমাদের মধ্যে অনেকেই জানে না যে নারকেল তেল খাওয়া যায়। তবে সেক্ষেত্রে ভার্জিন কোকোনাট ওয়েল ব্যবহার করলেই সবচেয়ে উপকারী।
আপনারা নারকেল তেলের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যের উপকার জানলে অবাক হবেন। তাই দেরী না করে চলুন জেনে নেই –
নিউট্রিশন বা পুষ্টিমূল্য
১ টেবিল চামচ নারকেল তেল রয়েছে :
১২১ ক্যালোরি
প্রোটিন ০ গ্রাম
১৩.৫ গ্রাম ফ্যাট, যার মধ্যে ১১.২ গ্রাম স্যাচুরেটেড
0 মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল
নারকেল তেলে ভিটামিন-ই থাকে তবে কোনও ফাইবার থাকে না।
নারকেল তেল প্রায় ১০০% ফ্যাট, যার বেশিরভাগ স্যাচুরেটেড ফ্যাট।
এবার স্বাস্থ্যের কী কী উপকারে আসে তা জেনে নিবো –
ভাল কোলেস্টেরল বাড়ায়
দুই ধরণের কোলেস্টেরল রয়েছে:
এইচডিএল বা ভাল কোলেস্টেরল, এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল । এইচডিএল এলডিএলের মাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য করে এবং উচ্চ স্তরের এইচডিএল হৃদরোগের অসুস্থতা ঠিক করে তুলতে সাহায্য করে। কিছু গবেষক যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন যে, নারকেল তেলের একটি উপাদান মাঝারি-চেইন ট্রাইগ্লিসারাইডস (এমসিটি) ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।তাই পরিমিতো নারকেল তেল খেতেই পারেন।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
জার্নাল লিপিডসের প্রমাণ থেকে প্রমাণিত হয় যে, নারকেল পেটের অদৃশ্য ফ্যাট পোড়াতে ও ওজন হ্রাসে সহায়তা করে। এছাড়াও নারকেল তেল হজম করা সহজ এবং থাইরয়েড এবং এন্ডোক্রাইনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে। ইউনিভার্সিটি সানস মালয়েশিয়াতে করা গবেষণা বলে যে, নারকেল তেল স্থূল লোকদের ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে।
স্ট্রেস কমায়
পিউর ভার্জিন নারকেল তেল অ্যারোমাথেরাপির বাহক হিসাবে ব্যবহৃত যা মানসিক চাপ হ্রাস করে। আর তাই স্ট্রেস কমাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিশিষ্ট নারিকেল তেল গ্রহণ করুন।
আলঝাইমার রোগের চিকিৎসা করে
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা সুপারিশ করেছে যে, নারকেল তেল খাওয়ার ফলে আলঝাইমার রোগীদের স্মৃতিশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নারকেল তেলে উপস্থিত এমসিটি স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর সাথে সরাসরি যুক্ত ।
হজমে উন্নতি করে
নারকেল তেলে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিডের মধ্যে লরিক অ্যাসিড ও মনোলিউরিনের শক্তিশালী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে হজমে সমস্যা করে এমন ব্যাকটিরিয়া, ছত্রাক এবং পরজীবীদের ধংস্ব করতে সাহায্য করে। ফলে হজমে কারো সমস্যা থাকলে তা নির্মূল হয়।
হাড়কে ভালো রাখে
নারকেল তেল দেহের হাড়ের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সহ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদানের শোষণ ক্ষমতা বাড়ায়। সুতরাং এটি ৪০ বছরের বয়সের পরে মহিলাদের অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি এড়াতে খুব দরকারী।
মৃগী রোগের চিকিৎসা করে
বেশ কয়েকটি গবেষণার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে যে, নারকেল তেলের এমসিটি মৃগীরোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। নারকেল তেলে এমসিটিগুলির সার্থকতা হচ্ছে খিঁচুনি এবং মৃগী থেকে মুক্তি দেওয়ার অংশ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
লিভারকে ভালো রাখে
২০১৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সমীক্ষায় যারা নারকেল তেল গ্রহণ করেছেন তাদের লিভারের স্বাস্থ্যে অনেক ভালো ছিলো অন্যদের তুলনায়। প্রমানিতো হয়েছে যে, নারকেল তেল লিভারের যে কোনও ক্ষয়ক্ষতি থেকেও রক্ষা করে এবং সেই সাথে মূত্রনালীর ইনফেকশন ভালো করতে সাহায্য করে।ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ এবং ডায়াবেটিসের জন্য ভাল নারকেল তেল দেহে স্থূলত্বের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে এবং ইনসুলিন প্রতিরোধের বিরুদ্ধেও লড়াই করে – এমন সমস্যাগুলি যা টাইপ টু ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে নারকেল তেল কতো বড়ো একটি কাজ করছে তা বুঝতেই পারছেন। শক্তি বৃদ্ধি করতে নারকেল তেল প্রতিদিন খেলে তা শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে। তবে রান্নায় বিশুদ্ধ নারকেল তেল ব্যবহার করতে হবে যেটাকে আমরা বলি ভার্জিন কোকোনাট ওয়েল।
ব্যথা প্রশমিত করতে
জয়েন্টের ব্যথা কিংবা হাঁটু ব্যথাতে কুসুম গরম নারকেল তেল ম্যাসাজ করুন। এটি ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
নারকেল তেলের এই পুষ্টিগুণের কথা হয়তো অনেকেই হয়তো জানেন না। প্রতিদিন অল্পমাত্রায় নারকেল তেল খেলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে পারে। আর ইস্ট, ফাঙ্গাস এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দমনে দারুণ উপকারী নারকেল তেল। সামনে শীত আসছে সাথে করোনা। এই সময়ে নারকেল তেল খাওয়ার মতো ভালো সাজেশন আর কী হতে পারে বলুন।
প্রতিদিন কতটুকু নারকেল তেল?
গবেষণায় দেখা গেছে যে, ২ টেবিল চামচ (৩০মিলি) একটি কার্যকর ডোজ বলে মনে হয়। এটি ওজনে উপকার করতে, পেটের মেদ কমাতে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য চিহ্নিতকারীগুলিকে উন্নত করতে দেখানো হয়েছে। আবার কিছু গবেষণায় ক্যালরি খাওয়ার উপর নির্ভর করে প্রতিদিন ২.৫ টেবিল চামচ (৩৯ মিলিগ্রাম) পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়।তবে যতো যাই বলেন না কেনো?আপনার পরিবার ও আপনার ব্যবহারের পরিমাণ বিভিন্ন প্রক্ষাপটের উপর নির্ভর করে। একজন ডায়েটিশিয়ানই কিন্তু পারেন এর সঠিক পরিমান জানিয়ে দিতে। কারণ, আমাদের দেশে একেকটি পরিবার একেকরকম। নিশ্চয়ই সবাই আলাদা আলাদা রান্না করেন না। তাই এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞের মতামত জেনে নিবেন।
অনেকের মনেই প্রশ্ন আসবে নারকেল তেল কীভাবে খাবে?
***ভার্জিন কোকোনাট ওয়েল খাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো।
কোন কোন জায়গায় কীভাবে নারকেল তেল ব্যবহার করবেন –
রান্নার জন্য ব্যবহার
নারকেল তেল রান্নার জন্য আদর্শ কারণ এর প্রায় ৯০% ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি স্যাচুরেটেড হয়, এটি উচ্চ তাপমাত্রায় অত্যন্ত স্থিতিশীল করে তোলে। নারকেল তেল ঘরের তাপমাত্রায় অর্ধ-কঠিন এবং ৭৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট (২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) গলে যায়।তাই এটিকে নমনীয় রাখার জন্য এটি রেফ্রিজারেটরের চেয়ে আলমারিতে রেখে দিন।
কষানো বা ভাজা
পপকর্ন
এয়ার-পপড পপকর্নে নারকেল তেল গলিয়ে নিন। তারপর নিজেদের মতো পপকর্ন রেসিপি চেষ্টা করে দেখুন।
বেকিং
পোল্ট্রি বা মাংসের উপরে এটি ব্যবহার করুন। তারপর বেকিং এ দিয়ে দিলেন।
এমনকি চা কফিতেও নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারবেন।
কী নিজের দেশের এমন জিনিসের গুণাগুণ শুনতে ভালো লাগছেনা? জানি আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে। তাই দেরী না করে আজ থেকে শুরু করে দিতে পারেন নারকেল তেলের ব্যবহার। পরের পর্বে চোখ রাখুন। ফিরে আসবো কোনো চমক নিয়ে। সেই পর্যন্ত সুস্থ থাকুন।
লেখক
পুষ্টিবিদ সিরাজাম মুনিরা
কনসালটেন্ট ডায়েটিশিয়ান
ইবনেসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
www.facebook.com/DietitianMunira