মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন বর্তমানে বিশ্বের ৭৫ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। স্মার্ট ফোন ছাড়া আধুনিক নিত্যদিনের জীবন কল্পনাই করা যায়না । বাণিজ্যিক স্বার্থে মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপনে বলা হয়ে থাকে যে, কম কম্পাংকের তড়িৎচুম্বক তরঙ্গ ব্যবহার করা হয় তাই এর রেডিয়েশনের কোন ক্ষতিকর প্রভাব নেই । বাস্তবে পরিবেশ , জীবজগত তথা মানব শরীরের উপর এর মারাত্মক প্রভাব লক্ষ্য করা যায় ।
মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর প্রভাব মোবাইলফোন ব্যবহারকারীদের সাধারণত যে ধরনের সমস্যার লক্ষণ প্রকাশ পায়:
* মাথাব্যথা
* দুশ্চিন্তা
* অনিদ্রা
* ত্বকের সমস্যা
* চোখের সমস্যা
* স্নায়বিক দুর্বলতা
পুরুষের বন্ধ্যাত্বতার সৃষ্টি করতে পারে মোবাইল ফোন থেকে নির্গত স্বল্প কম্পংকের তড়িৎচুম্বক তরঙ্গ । শুক্রাণুর সংখ্যা , গতিশীলতা ও কার্যকারিতার হার আশংকাজনক হারে হ্রাস পায় এর প্রভাবে ।
সবথেকে ভয়াবহ ব্যাপার , গবেষণায় দেখা গেছে মোবাইল ফোনের ব্যবহার মস্তিষ্কের টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি করে।
এছাড়াও কয়েক ধরনের ক্যান্সার এর কারণ হিসেবে এই রেডিয়েশন এর প্রভাব আছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা ।
রেডিয়েশন হতে রক্ষা পাবার উপায়:
১. দূরত্ব বজায় রাখুন:
মোবাইলে কথা বলার সময় যতটা সম্ভব শরীর থেকে দুরে রেখে কথা বলা উচিৎ । সম্ভব হলে লাউড স্পিকারে বা তারযুক্ত হেডফোন ব্যবহার করা যেতে পারে। কম পক্ষে ফোন থেকে দশ হাত দূরে থাকুন । অর্থাাৎ ফোন দূরে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখুন ।
২. আপনার ফোনের SAR Value চেক করুন:
SAR Value চেক করার জন্য আপনি ফোন কেনার সময় স্পেসিফিকেশন পড়ে জেনে নিতে পারেন। এছাড়া *#07# ডায়াল করে জানা যেতে পারে কিন্তু এটি সবসময় কাজ করে না। SAR Value ’র সেফ লিমিট হলো 1.6 watts পার কিলোগ্রাম । বিস্তারিত তথ্যের জন্য ভিজিট করুন https://muditalab.com/5-ways-of-checking-the-sar-value-of-your-phone-67c2083301bc
তবে আমাদের পরমার্শ খুব কম দামি কিন্তু বেশী ফাংশনাল এমন ফোন এড়িয়ে চলুন।
৩. শারীরিক স্পর্শ থেকে দুরে রাখা:
বহন করার সময় শরীরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক স্পর্শ করে থাকে এমন ভাবে রাখা অনুচিত।
৪. ঘুমানোর সময় সতর্কতা:
রাতে ঘুমানোর সময় মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখা অথবা এরোপ্লেন মোড এ রাখা ভালো । যদি তা সম্ভব না হয় তবে মাথার কাছে না রেখে দুরে রাখা উচিৎ ।
৫. মেসেজিং এর অভ্যাস করা:
কথা বলা ব্যতীত বিকল্প হিসেবে ফোনের অন্য মাধ্যম গুলো ব্যবহার করা যেতে পারে যোগাযোগের জন্য যেমন মেসেজিং ।
৬. শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন:
অত্যন্ত জরুরী সময় ব্যতীত শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার একেবারেই অনুচিত । উল্লেখ্য, শিশুর মস্তিষ্কে রেডিয়েশনের ক্ষতিকর প্রভাব বেশি হয় ।
৭. টেলিফোন ব্যবহার করুন:
সেলফোনের তুলনায় টেলিফোনের রেডিয়েশন প্রভাব কম। তাই বিকল্প হিসেবে বাসাবাড়িতে বা অফিসে টেলিফোন ব্যবহার যুকিযুক্ত।
৮. কথা বলার সময় পার্শ্ব- পরিবর্তন করুন:
মাথার একদিকে দীর্ঘক্ষণ ধরে রেখে কথা বলা মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর তাই কিছুক্ষণ পরপরই পাশ পরিবর্তন করা উচিৎ।
৯. ধাতব বদ্ধ যায়গায় মোবাইলফোন ব্যবহার করবেন না:
ধাতব বেষ্টিত আবদ্ধ যায়গা যেমন, বাস, ট্রেন, বিমান , প্রাইভেট-কার, লিফট প্রভৃতি স্থানে রেডিয়েশন বারবার প্রতিফলিত হয় যার মাত্রা অত্যন্ত বেশি । তাই এসকল স্থানে মোবাইলে কথা বলা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
১০. ব্লটুথ এর ব্যবহার কমান:
নেটওয়ার্কের মত ব্লু-টুথও নিম্ন কম্পাংকের তরঙ্গ ব্যবহার করে তাই এর রেডিয়েশন ও সমান ক্ষতিকর । বিশেষ করে , যারা দীর্ঘক্ষণ ব্লু-টুথ হেডফোন ব্যবহার করেন তারা বেশী স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মধ্যে থাকেন ।
১১. চার্জে থাকা মোবাইল ব্যবহার করবেন না:
মোবাইলের ব্যাটারিতে চার্জ কম থাকলে অথবা চার্জে থাকা অবস্থায় ফোন ব্যবহার করা একেবারেই অনুচিত । এসময় রেডিয়েশনের মাত্রা খুব বেশি থাকে ।
১২. কল কানেক্ট হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন:
কল করার পরপরই ফোন কানের কাছে নিয়ে ধরবেন না , কল কানেক্ট হলে তারপর কথা বলা শুরু করুন।
বর্তমানে বাজারে কিছু রেডিয়েশন প্রভাব কমানোর যন্ত্র পাওয়া যায় এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন । অনেকক্ষেত্রে এর থেকে বাধাদানকারী তরঙ্গের প্রভাবে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে , তাই প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ও পণ্য সম্পর্কে জেনে বুঝে তবেই তা ব্যবহার করুন । এছাড়াও মোবাইল ফোন কিভাবে স্বাস্থ‌্যের ক্ষতি করছে তা এই আর্টিকেল থেকে পড়ে নিতে পারেন।