সিজোফ্রেনিয়া একটি জটিল মানসিক রোগ। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চিন্তা, আবেগ, অনুভুতি, পারস্পরিক সম্পর্ক ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনিস্টিউটের গবেষণায় দেখা যায় যে, জনসংখ্যার প্রতি ১০০০ জনের ৬ জন এই রোগে আক্রান্ত। সাধারণত ১০ থেকে ২৫ বছরের ছেলেরা এবং ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী মেয়েরা প্রথম এই রোগে আক্রান্ত হয়।
সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ সমূহঃ
DSM-5 অনুযায়ী নিচের (১)বা (২) বা (৩) সহ কমপক্ষে ২ টি সিম্পটম ১মাসের বেশি থাকলে সে সমস্যাকে সিজোফ্রেনিয়া বলে,
১) ভ্রান্ত বিশ্বাষ (Delusion)
২) অমূলক প্রত্যক্ষণ (Hallucination)
৩) অসংলগ্ন কথাবার্তা (Disorganized speech)
৪) কেটাটোনিক বা অস্বাভাবী আচরণ (Catatonic behaviour)
৫) নেগেটিভ উপসর্গ (সামাজিকভাবে নিজেকে গুয়িয়ে নেয়া, কাজকর্মে আগ্রহ না থাকা,বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা-ভাবনা করার ক্ষমতা কমে যাওয়া, ভাবলেশহীন)
চিকিৎসাঃ
সিজোফ্রেনিয়া রোগটি দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল হলেও বর্তমানে কার্যকরী চিকিৎসা আছে। প্রধান চিকিৎসা হলো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেডিসিন নেয়া। মেডিসিনের পাশাপাশি সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসা একত্রে করলে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। সিজোফ্রেনিয়া রোগীর বিশেষ ধরনের কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি ভালো কাজ করে। সিস্টেমেটিক ফ্যামিলি থেরাপিও এই রোগের জন্য কার্যকর। এছাড়া সামাজিক দক্ষতা অর্জন, স্ট্রেস কমানো, পরিবারের সাথে সুস্পর্ক, নিজের হ্যালুসিনেশন ও ডিলুশন কমাতে সাইকোলজিক্যাল থেরাপি ভালো কাজ করে।
আশার কথা হলো, করোনাভাইরাসের এই সময়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ মনোচিকিৎসক নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারিভাবে আবার অনেকেই অনলাইনে সহায়তা দিচ্ছেন, তাই এই রোগের যথাযথ চিকিৎসা নিতে পারবেন। পাশাপাশি সাইকোলজিষ্টরাও নিয়মিত সরাসরি ও অনলাইনে সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। এই রোগের তীব্রতা বেশি হলে অনেক সময় রুগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এই সময়ে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালেই (কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে) নিয়মিত রুগি ভর্তি করা হচ্ছে। কোন কারনে হঠাৎ মেডিসিন বন্ধ করলে এই রোগের তীব্রতা বেড়ে যাবে, তাই অভিভাবক ও যত্নকারীদের খেয়াল রাখতে হবে, চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী রুগী যেন নিয়মিত মেডিসিন নেয়। রুগীকে মানসিক চাপমুক্ত রাখতে সাইকোলজিক্যাল থেরাপি নিতে উৎসাহিত করতে হবে। বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসায় সিজোফ্রেনিয়া রুগীরা ভালো হয় এবং সারাজীবন সুস্থ্য থাকতে পারেন। তাই রুগীদের দূরে ঠেলে না দিয়ে ও ভ্রান্ত ধারণা বাদ দিয়ে সঠিক চিকিৎসা মাধ্যমে এই মানুষদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
লেখক
জিয়ানুর কবির
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিষ্ট
বি-এস.সি (অনার্স), সাইকোলজি
পিজিটি (সাইকোথেরাপি)
এম.এস ও এম.ফিল (ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি)।
কল্যাণ মানসিক হাসপাতাল
দক্ষিণ কল্যানপুর,মিরপুর রোড, ঢাকা
ফোন নম্বর:০১৭৪৮৭৮৭৮২৩
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/jianur.kabir