ওয়ার্ল্ড সুইসাইড প্রিভেনশন ডে (WSPD) প্রতি বছর ১০ সেপ্টেম্বর পালিত হয় যা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন (IASP) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দ্বারা অনুমোদিত।
প্রতি ৪০ সেকেন্ডে গড়ে একজন আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে বিশ্বে। আগে ধারণা করা হতো উন্নত বিশ্বে এ হার হয়ত বেশি, কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে ৭৮% আত্মহত্যা হয়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে।বিশ্বে পুরুষদের আত্মহত্যার প্রবনতা কম। তবে বাংলাদেশে মহিলাদের মৃত্যুর হার পুরুষদের থেকে বেশী।
উদ্দেশ্যঃ
বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যা প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করাই এই দিবসের সার্বিক লক্ষ্য। উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে রয়েছে আত্মহত্যা মোকাবেলা করা , মানসিক রোগ নিয়ে সমাজে প্রচলিত অজ্ঞতা কমানোর চেষ্টা করা, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, সাধারণ জনগন এবং ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ যেমন তরুণদের ইতিবাচক ও তথ্যবহুল বার্তা পাঠানো এবং বাড়িতে, স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর আলোচনা করা ।
প্রভাব ঃ
আত্মহত্যা এবং আত্মহত্যার প্রচেষ্টার একটি প্রভাব রয়েছে যা কেবল ব্যক্তি নয়, পরিবার, সম্প্রদায় এবং সমাজকেও প্রভাবিত করে। আত্মহত্যার জন্য ঝুঁকির কারণ, যেমন চাকরি বা আর্থিক ক্ষতি, মানসিক আঘাত , মানসিক ব্যাধি, এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে বাধা, কোভিড এ আক্রান্ত এসবের ফলে আরও বেড়ে গিয়েছে। মহামারী শুরুর এক বছর পরে, চিলি, ব্রাজিল, পেরু এবং কানাডায় জরিপ করা অর্ধেকেরও বেশি মানুষ জানিয়েছেন যে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে গেছে।
যদি আপনি উদ্বিগ্ন হন যে কেউ আত্মহত্যার কথা ভাবছে, তাহলে তাদের সরাসরি জিজ্ঞাসা করুন :
১. আপনি কি আত্মহত্যার কথা ভাবছেন?
২. আপনি কি আপনার জীবন শেষ করার চিন্তা করছেন?
যখন কেউ আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা করার কথা উল্লেখ করে, তখন ধরে নেবেন না যে তারা তাদের চিন্তায় কাজ করবে না। যদি তারা আপনাকে বলে যে তারা আত্মহত্যার কথা ভাবছে, তাহলে তাদের কোন পরিকল্পনা আছে কিনা তা জানতে সময় নিন। যেমন ঃ তারা কখন এটা করার পরিকল্পনা করছে?তারা কি জানে কিভাবে তারা এটা করবে? যদি জানে তাদের কি সেই উপায় আছে?তারা কি জানে কোথায় তারা এই কাজটা করতে চায়?যদি তারা প্রাণঘাতী কিছু খেয়ে থাকে বা তাদের আত্মহত্যার চিন্তাধারায় কাজ করার তাত্ক্ষণিক পরিকল্পনা থাকে তবে তাদের জরুরি মানসিক সেবা পেতে সহায়তা করুন।
কারণ ঃ
১. আত্মহত্যার কারণগুলোর মধ্যে আছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, প্রিয়জন হারানো, তর্ক-বিবাদ
২. আইনগত বা কর্মক্ষেত্রের সমস্যাসহ নানাবিধ সামাজিক, ব্যক্তিগত কারণ
৩. বংশধারার প্রবণতা,মনস্তাত্ত্বিক কারণ
৪. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা, দুর্যোগ, যুদ্ধ বা সংঘাতের অভিজ্ঞতা
৫. বৈষম্যের অভিজ্ঞতা, সম্পর্ক বিচ্ছিন্নতা এবং সামাজিক সহায়তার অভাব,ক্ষতি বা দ্বন্দ্ব
৬. পূর্ববর্তী আত্মহত্যার চেষ্টা,মানসিক অসুস্থতা যেমন ডিপ্রেশন , মাদকাসক্তিসহ অন্যান্য মানসিক রোগ, ড্রাগ এবং অ্যালকোহলের অপব্যবহার
৭. দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা
৮. আর্থিক ক্ষতি
৯. আত্মহত্যার পারিবারিক ইতিহাস
১০. স্ব-ক্ষতির আচরণও একটি ঝুঁকির কারণ হিসাবে দেখা গেছে। যদিও অনেক লোক যারা নিজের ক্ষতি করার আচরণে জড়িত তারা মারা যেতে চায় না, তবে এমন গবেষণার পরামর্শ রয়েছে যে এমন ব্যক্তিরা আত্মহত্যার চেষ্টা বা সম্পূর্ণ করার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের লক্ষ্য ঃ
১. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং মোকাবিলার দক্ষতা যা লোককে কঠিন পরিস্থিতিতে পরিচালনা করতে সহায়তা করে।
২. মিডিয়া প্রোগ্রাম আত্মহত্যা সচেতনতা এবং প্রতিরোধ প্রচার করে।
৩. আত্মহত্যা সচেতনতা এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে প্রকাশনা চালু করা ও আত্মহত্যা এবং হতাশা সচেতনতা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ কোর্স দেয়া।প্রয়োজনে সহজেই কার্যকর মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা এবং চিকিত্সা করার ক্ষমতা।
৪. শিশু এবং যুবক-যুবতীদের জন্য সহায়ক স্কুল পরিবেশ তৈরি করা
৫. সামাজিক সংযোগ থাকা (যেমন পরিবার, বন্ধুবান্ধব, অংশীদারদের সাথে ইতিবাচক সম্পর্ক ইত্যাদি)।
৬. উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীতে আত্মহত্যার ঝুঁকি হ্রাস করা (যেমন যুবক পুরুষ, নিজের ক্ষতি করার ইতিহাসের মানুষ, অপরাধমূলক বিচার ব্যবস্থার সংস্পর্শে থাকা লোক)
৭. আত্মহত্যা এবং আত্মঘাতী আচরণের প্রতি সংবেদনশীল পন্থা প্রদানের ক্ষেত্রে মিডিয়াকে সমর্থন করা। বন্ধু, সহকর্মী এবং যে কারও সম্পর্কে মনোনিবেশ করে সহায়তা করতে পারে। একটি সাধারণ 'আপনি কেমন আছেন' কথোপকথনটি খুলতে পারে। শুনা এবং খোলা থাকা এবং বোঝা ঝুঁকির মধ্যে থাকা লোকদের তাদের ভাগ করে নেওয়া ঠিক আছে তা জানিয়ে জানাতে সাহায্য করতে পারে।
সচেতনতা বৃদ্ধিতে যা করতে হবে ঃ
১. আত্মহত্যার ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরী।আশেপাশে কেউ যদি হঠাৎ বেশি চুপচাপ হয়ে যায় কিংবা বিষণ্ণতায় আক্রান্ত থাকে তবে তাকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে চিকিৎসা করাতে হবে।
২.আগে একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে তার প্রতি বেশি খেয়াল রাখতে হবে।কারও মধ্যে আত্মহত্যার প্রবনতা থাকলে তাকে প্রয়োজন হলে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নিতে হবে।
৩. কেউ যদি আত্মহত্যা করতে পারলে ভাল হতো এমন কথা বলে তাহলে অতি দ্রুত তাকে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে।
৪. কীটনাশক, ওষুধ ও মারনাস্ত্র সহজলভ্য যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল করা জরুরী।দড়ি,ওড়না,ধারালো জিনিস,ওষুধ রোগীর হাতের কাছে রাখা যাবেনা।
৫. রোগীর সাথে সার্বক্ষণিক একজন লোক থাকতে হবে।রোগীকে একা রাখা যাবেনা।এমনকি বাথরুমে গেলেও সাথে লোক থাকতে হবে।
৬.মানসিক রোগ নিয়ে হীনমন্যতা না করে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে। গল্প করা,বই পড়া,ঘুরতে যাওয়া,টিভি দেখা এসব উপদেশ না দিয়ে চিকিৎসক দেখাতে হবে।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/Dr-Fatema-Zohra-Psychiatrist-Specialist-in-Family-Medicine-293734764582169
লেখক
ডা. ফাতেমা জোহরা
MBBS(DU), MD Psychiatry (BSMMU), FMD(USTC), DHMS(BD) ,
মনোরোগ, যৌনরোগ ও মাদকাসক্তি নিরাময় বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক
মানসিক রোগ বিভাগ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/Dr-Fatema-Zohra-Psychiatrist-Specialist-in-Family-Medicine-293734764582169