অনিয়মিত মলত্যাগের সম্পর্কিত সমস্যাকে সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়ে থাকে । সাধারণ ভাবে নিয়মিত ভাবে পায়খানা না হওয়া স্বাভাবিক হিসেবেই ধরা হয় । যদিও কোষ্ঠকাঠিন্য খুব মারাত্মক কিছু নয় তবে নিয়মিত মলত্যাগ শরীরের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ও সুস্থতা প্রদান করে ।
ব্যক্তি বিশেষে স্বাভাবিক মলত্যাগের সময়ের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় । অনেকের দিনে ৩ বার টয়লেটে যাওয়ার অভ্যাস থাকে আবার অনেকের সপ্তাহে ২-৩ বার। উভয়ই ক্ষেত্রই স্বাভাবিক ঘটনা। তবে ৩ দিনের বেশি সময় ধরে পায়খানা না হলে তা ধীরে ধীরে কাঠিন্য লাভ করে এবং তখনই তা কষ্টদায়ক হয় । এই সময়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ । স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া বজায় রাখতে কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করা আবশ্যক । এর কারণ সমূহ জানা থাকলে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা সহজ হয়।
পাইলসের লক্ষণ সমূহ
১. মলত্যাগের সময় ব্যথাবিহীন রক্তপাত
২. পায়ুপথ চুলকানো অথবা অস্বস্তিকর জ্বালাপোড়া
৩. পায়ুপথ এবং বাইরের অংশ ফোলা
৪. পায়ুপথে চাকা অনুভব করা ও ব্যাথা হওয়া
* দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য
* ডায়রিয়া
* অধিক ভারী জিনিস উত্তোলন
* গর্ভাবস্থা
* মলত্যাগের মুহূর্তে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ
* দীর্ঘ সময় একস্থানে বসে থাকা
* দীর্ঘস্থায়ী কাশি
কিছু পূর্ব সতর্কতা
ছোট ছোট কিছু অপ্রয়োজনীয় অভ্যাস এ রোগের সৃষ্টি করতে পারে । এগুলো এড়িয়ে চলা উচিৎ ।
১. কখনো পায়খানা চেপে রাখবেন না: অত্যন্ত সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যা অনেকেই গুরুত্বের সঙ্গে মেনে চলেন না । পায়খানার চাপ অনুভব করলেও অনেকেই সেটা উপেক্ষা করেন এবং দীর্ঘক্ষণ চেপে রেখে কাজ করতে থাকেন। এই মানসিকতা অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে । চাপ অনুভূত হলে যত দ্রুত সম্ভব টয়লেট ব্যবহার করতে হবে।
২. টয়লেটে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকবেন না: টয়লেটে বসে পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়া বা আজকাল মোবাইল অথবা ট্যাবে ইন্টারনেট ব্রাউজ করা ও গেমস খেলা আমাদের অনেকেরই অভ্যাসে পরিণত হয়েছে । এটি খুবই ক্ষতিকর বদভ্যাস। এতে মলদ্বার ও পেটের নিম্নাংশের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে যা পাইলসের অন্যতম কারণ।
৩. মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা যাবেনা: যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সময় দিয়ে মলত্যাগ করা উচিৎ। দ্রুত অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে তা করা উচিৎ নয় । এতে রক্ত নালি অতিরিক্ত চাপে বাইরে বের হয়ে আসতে পারে ।
৪. নিয়মিত শরীরচর্চা করা: নিয়মিত শরীরচর্চা করলে শরীর ফিট থাকে এবং অতিরিক্ত ওজন নিঃসরিত হয় । তাই দৈনন্দিন ব্যস্ততার ফাঁকে সময় বের করে ব্যায়াম বা হালকা শরীরচর্চা করা আবশ্যক।
যা করা যাবেনা -
* অতিরিক্ত চা/ কফি পান করা থেকে বিরত থাকুন । কোমল পানীয় যথেষ্ট ক্ষতিকর।
* খাবারে মাত্রাতিরিক্ত ঝাল অথবা টক প্রয়োগ করবেন না । যেমন , ভিনেগার, লেবু, কাঁচামরিচ, টমেটো ইত্যাদি ।
* বেশি সংখ্যায় ডিম খাওয়াও অনুচিত।
* অধিক পরিমাণে গুরুপাচ্য ডাল খাওয়া যাবেনা । যেমন, বুটের ডাল , খেসারির ডাল ইত্যাদি।
* তৈলাক্ত খাবার এবং অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাওয়া যাবেনা ।
* মদ্যপান, তামাক সেবন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
* অতিরিক্ত ব্যায়াম যেমন , ভার উত্তোলন ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন।
* অধিক পরিমাণে রাত জাগা উচিৎ নয় ।
* দীর্ঘ যাত্রা থেকে বিরত থাকুন ।
* অনেক সময় ধরে একস্থানে বসে থাকবেন না। ১ ঘণ্টা বসে থাকলে তারপর মিনিট দশেক হাঁটাচলা করুন।
খাদ্যাভ্যাস
* প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন। কমপক্ষে দিনে ৪-৫ লিটার।
* তরল খাবার ও সহজপাচ্য ডাল খাওয়া উচিৎ। যেমন , মুগডাল, অড়হরের ডাল , স্যুপ ইত্যাদি।
* গাজর ও মুলা বেশ কার্যকরী । পাইলসের লক্ষণ দেখা দিলে ৫০-১০০ মিলি করে মুলার রস দিনে দুই বেলা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
* আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন বেশি বেশি । পেঁপে, লাউ, ডাঁটা শাক, ঝিঙে, ধুন্দল প্রভৃতি খাবার সহজপাচ্য ও উপকারী।
* অধিক ফলমূল খেওয়া উচিৎ । যা কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করবে এবং মলদ্বারের সকল ধরনের সমস্যায় উপকারী। যেমন, পেঁপে, পেয়ারা, তরমুজ ইত্যাদি।
বেশি জটিলতা দেখা দিলে ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়া উচিত। মনে রাখবেন ডাক্তারের চিকিৎসায় পাইলস পুরোপুরি ভালো হয়।