নাক আমাদের চেহারার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নাকের উপর আমাদের চেহারার সৌন্দর্য অনেকাংশেই নির্ভর করে। একটা উঁচু, চিকন, চৌকস নাক যেমন চেহারার সৌন্দর্য বাড়ায় ঠিক তেমনি নাকের সামান্য বিকৃতি চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট করে। আমাদের সমাজে আবার কারো নাক নিচু বা অবনমিত থাকলে তাকে বোঁচা কথাটা নানা সময় ই শুনতে হয়।
রাইনোপ্লাস্টি কি?
রাইনোপ্লাস্টি হলো নাক সুন্দর করার প্ল্যাস্টিক সার্জারি। রাইনোপ্লাস্টির মাধ্যমে একটা কাস্টোমাইজড নাক পাওয়া যায়। যেমন কেউ হয়তো তার নাক আরো উঁচু বা চিকন বা ছোট করতে চায়। রাইনোপ্লাস্টির মাধ্যমে তার ইচ্ছা অনুযায়ী নাকের গঠনের পরিবর্তন করা সম্ভব। আবার কারো যদি নাকের সৌন্দর্যের পাশাপাশি নাকের ফাংশনাল সমস্যা থাকে তাও একসাথে ঠিক করা যায়।
কখন রাইনোপ্লাস্টি করা হয়ঃ
১. বোঁচা নাক উঁচু করতে
২.মোটা নাক চিকন করতে
৩.নাকের ডগা মোটা ও নিচু থাকলে চিকন ও খাড়া করতে
৪.নাক আঁকাবাঁকা থাকলে তা সোজা করতে
৫.নাকের হাড় বাইরের দিকে ফুলে বের হয়ে থাকলে (Dorsal hump)
৬. নাক চেহারার তুলনায় অনেক বড় হলে
৬. দূর্ঘটনায় আঘাত পেয়ে নাকের বিকৃতি ঘটলে
৭. নাকের জন্মগত ত্রুটি থাকলে
৮. কোন সার্জারির ফলে যদি নাকের সৌন্দর্যের বিকৃতি ঘটে
রাইনোপ্লাস্টির প্রকারভেদঃ
রাইনোপ্লাস্টি দুই ধরনের হয়
১. ওপেন রাইনোপ্লাস্টি
২. ক্লোজ রাইনোপ্লাস্টি
ওপেন রাইনোপ্লাস্টিঃ
ওপেন রাইনোপ্লাস্টিতে সাধারণত নাকের কলুমেলা তে কেটে নাকের ভিতরে ঢোকা হয়। নাকের সেপটামের সমস্যা থাকলে (আঁকাবাঁকা) থাকলে, ক্রোকড নোজ বা আঁকাবাঁকা নাক, নাকের ডগা ঝুলে থাকলে বা বেশি মোটা থাকলে ইত্যাদি ক্ষেত্রে ওপেন রাইনোপ্লাস্টি করা হয়। ওপেন রাইনোপ্লাস্টি মানে যে নাকের বাইরে অনেক দাগ থাকবে তেমন না। ওপেন রাইনোপ্লাস্টি করলেও নাকের বাইরে তেমন কোন দাগ থাকে না কারণ কলুমেলা তে মাত্র আধা সেন্টিমিটারের মত কাটা হয় যা নাকের বাইরে থেকে তেমন বোঝা যায় না।
ক্লোজ রাইনোপ্লাস্টিঃ
ক্লোজ রাইনোপ্লাস্টি মানে নাকের বাইরে কোন ধরনের কাটাকাটি না করে বরং নাকের ভিতরে কাটা হয়। নাক উঁচু করতে, নাকের হাম্প কমাতে সাধারণত ক্লোজ রাইনোপ্লাস্টি করা হয়।
রাইনোপ্লাস্টি কিভাবে করা হয়?
কিছু ক্ষেত্রে শুধু নাক অবশ করে রাইনোপ্লাস্টি করা যায় আবার কিছু ক্ষেত্রে পুরোপুরি অঙ্গান করে করতে হয়। শুধু নাক অবশ করে করলে রুগী সাথে সাথেই বাড়ি চলে যেতে পারবেন কিন্তু পুরোপুরি অঙ্গান করে করলে ১/২ দিন হাসপাতালে রাখা হয় অবস্থার উপর ভিত্তি করে।
নাকে ব্যান্ডেজ লাগানো থাকে, কখনো কখনো নাকে প্যাক ও দেওয়া থাকতে পারে। অবস্থার উপর ভিত্তি করে ব্যান্ডেজ ৩ থেকে ৮ দিন পর্যন্ত রাখা হয়।
রাইনোপ্লাস্টি তে কি দাগ থাকে?
রাইনোপ্লাস্টি যেহেতু সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য করা হয় তাই দাগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। নাকের বাইরে যাতে কোন দাগ না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা হয়। কাটা ছেড়া এমন ভাবে করা হয় যাতে নাকের বাইরে কোন দাগ বোঝা না যায়।
রাইনোপ্লাস্টি তে কি ধরনের জটিলতা হতে পারে?
একজন অভিজ্ঞ সার্জন দিয়ে করালে জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে সার্জারীর পর কিছুদিন নাক, চোখ, মুখ ফুলে থাকতে পারে, চোখের নিচে কালো বা লাল হয়ে যেতে পারে। সামান্য ব্যাথা বা একটু অস্বস্তি লাগতে পারে। যা ১০/১৫ দিনেই ঠিক হয়ে যায়।
রাইনোপ্লাস্টি কতদিন স্থায়ী হয়?
রাইনোপ্লাস্টি সার্জারি করে নাকের যে পরিবর্তন হয় তা নাকের একটা স্থায়ী পরিবর্তন অর্থাৎ একবার করলে সারাজীবন স্থায়ী থাকবে।
রাইনোপ্লাস্টি সার্জারি ছাড়া কি নাক উঁচু বা সুন্দর করা যায়?
হ্যাঁ করা যায়।
রাইনোপ্লাস্টি ছাড়া ইনজেকশনের মাধ্যমে ফিলারের সাহায্যে নাক উঁচু করা যায় বা নাকের ডগা চিকন করা যায় বা ছোট হাম্প থাকলে সমান করা যায়। কিন্তু এটা অস্থায়ী। ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত স্থায়ীত্ব। ৬ মাসের পর ধীরে ধীরে নাক আবার আগের মতো হয়ে যায়।
কেউ যদি নাকের একটা সুন্দর ও স্থায়ী শেইপ চায় তাহলে রাইনোপ্লাস্টি তার জন্য উপযুক্ত।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/dr.iqbalahmed
লেখক
ডাঃ ইকবাল আহমেদ
প্লাস্টিক ও এস্থেটিক সার্জন
সহকারী অধ্যাপক,
বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ,ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চেম্বার :
বাংলাদেশ কসমেটিক সার্জারি , বাড়ি ৮, রোড
১৪, ধানমণ্ডি (সোবহানবাগ মসজিদের গলিতে), ঢাকা।
এপয়েন্টমেন্ট
০১৭৬৬৯৩৫২৫৪,০১৩১৪০৯৯৯২২
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/dr.iqbalahmed