দাঁত সম্পর্কিত বিষয়গুলো জেনে রাখুন
১। আপনার বাচ্চার দুধ দাঁত উঠবে ৬ মাস বয়স থেকে আড়াই বছর বয়স পর্যন্ত।
২। আপনার বাচ্চার মূল দাঁত উঠবে ছয় বছর বয়সের পর থেকে ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত।
৩। আপনার সন্তানের আক্কেল দাঁত উঠবে সাধারণত ১৭ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে।
৪। বাচ্চা দুধ দাঁতগুলো সাধারণত ৬ বছর বয়সের আগে থেকে ক্রমানুসারে পড়তে থাকবে।
৫। বাচ্চাকে অন্তত ২ বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াবেন যা দাঁত ও চোয়ালের গড়নে সহায়তা করে।
৬। ঘুমন্ত অবস্থায় বাচ্চাকে ফিডার দিয়ে দুধ খাওয়াবেন না। ফিডারে দুধ খাওয়ালে দাঁতে ক্ষয়রোগ করে।
৭। বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর পর তুলাতে সামান্য পানি ভিজিয়ে দাঁতের পৃৃষ্ঠ ঘষে দেবেন যা ক্ষয়রোগ থেকে দাঁতকে রক্ষা করবে।
৮। বড়দের দাঁতের ক্ষেত্রে যদি দাঁতের মধ্যে কালোদাগ বা ক্ষয় রোগ বা ডেন্টাল ক্যারিজ দেখা যায়, তাহলে ব্যথা হওয়ার আগেই ডাক্তারের কাছে গিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বা ফিলিং করিয়ে নিবেন। মনে রাখবেন যত দেরি করবেন, তত বিপদ অর্থাৎ, দাঁতে ব্যথা শুরু হবে এবং সে ক্ষেত্রে আর ফিলিং-এর মাধ্যমে দাঁতের চিকিৎসা করা সম্ভব হবে না।
৯। ব্যথাযুক্ত দাঁতের ফিলিং করা যায় না। সেক্ষেত্রে রুট ক্যানেল করে দাঁতকে ব্যথামুক্ত করতে হয়। মনে রাখবেন, রুট ক্যানেল চিকিৎসা বয়বহুল তাই ব্যথা শুরুর আগেই দাঁত ফিলিং করিয়ে নিন।
১০। দাঁতের মুকুট বা ক্রাউন যদি বেশি ভেঙ্গে যায় অথবা চারদিকের যে কোন একদিকে দাঁতের দেয়াল ভাঙ্গা থাকে সেৰেত্রে ফিলিং দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ব্যথাযুক্ত দাঁত হলে রুট ক্যানেল করে তার উপর কৃত্রিম মুকুুট বা ক্রাউন পরিয়ে দেয়া হয় যা দাঁতকে দীর্ঘস্থায়ী রূপ দেয়।
১১। দাঁতের ক্রাউন কয়েক ধরনের হয়। যেমন_
(ক) পোরসেলিন ক্রাউন (সিরামিক মুকুট)
(খ) মেটালিক ক্রাউন (স্টিলের মুকুট)
(গ) সিরামেজ ক্রাউন
(ঘ) অ্যাক্রেলিক জ্যাকেট ক্রাউন (শুধুমাত্র সামনের দাঁতের প্লাস্টিক মুকুট)
(ঙ) মেটাল ফিউজড টু পোরসেলিন ক্রাউন,
(চ) ক্যাড-ক্যাম মিল্ড জিরকোনিয়া ক্রাউন,
(ছ) ই ম্যাক্স ক্রাউন, ইত্যাদি।
১২। উপরের ক্রাউন বা মুকুট বা ক্যাপগুলোর মধ্যে আমাদের দেশের অবস্থা অনুযায়ী মেটাল ফিউজড টু পোরসেলিন ক্রাউন সবচেয়ে সুন্দর, দীর্ঘস্থায়ী ও উন্নত।
১৩। তাই দাঁতের মুকুট বা ক্রাউন বা ক্যাপ ধরতে হলে একটু বেশি দাম দিলে উন্নত ক্যাপ লাগানোই উচিত হবে।
১৪। প্রতি ৬ মাস অন্তর উন্নত দেশে দাঁত ওয়াশ বা স্কেলিং করে থাকে। রোগীরা আমাদের দেশে আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনে প্রতি বছর অন্তত একবার স্কেলিং করানো ভালো।
১৫। আজকাল দাঁতে অনেক উন্নত ধরনের ফিলিং করা যায় দাঁতের কালারের সাথে মিশে যায়।
১৬। আপনার শিশুর দাঁতের যত্ন নিন ও নিয়মিত পরিচর্যা করুন। প্রথম ৬ বছর অন্তত ৩ বার ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন, নতুবা দুধ দাঁতগুলো ঠিক সময়ে না পড়ে অনেক দেরিতে পড়তে পারে এবং সে ৰেত্রে মূল দাঁত ঠিক সময় ঠিক জায়গায় না উঠে আঁকা-বাঁকাভাবে অন্যত্র উঠবে পারে। ফলে চোয়াল ও দাঁতে অসামঞ্জস্য দেখা দিতে পারে। আবার সময়ের আগেই দুধ দাঁত পড়ে গেলে ও পরে উঠার মূল দাঁত আকা-বাঁকা হতে পারে।
১৭। বাচ্চার আকা-বাঁকা দাঁতগুলো সাধারণ ৮ থেকে ১৩ বছরে মধ্যে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করিয়ে নিতে হবে।
১৮। আকা-বাঁকা দাঁতের এ ধরনের চিকিৎসা অর্থোডেন্টিক ট্রিটমেন্ট বলে।
১৯। তুলনামূলক কম খরচে রিমুভেল অ্যাপস্নায়েন্স দিয়ে যথাসময়ে চিকিৎসা সম্ভব।
২০। তবে ফিক্সড অর্থোডেন্টিক ট্রিটমেন্টটি বা ব্রেইস পদ্ধতির চিকিৎসা অত্যাধুনিক কিন্তু ব্যয়বহুল ও অধিক কার্যকরী।
২১। মনে রাখবেন দাঁতে ক্যারিজ বা ক্ষয় থাকলে যদি ফিলিংয়ে সমাধান না হয়, সেৰেত্রে দাঁতের ক্যাপ করার প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে রুট ক্যানেল চিকিৎসা ছাড়াও ক্যাপ বা ক্রাউন করা যায়।
২২। মনে রাখবেন রুট ক্যানেল ছাড়া দাঁতে ক্যাপ করলে ভবিষ্যতে যদি ব্যথা হয় সেক্ষেত্রে ঐ ক্যাপ না খুলে ডেন্টাল ড্রিল মেশিনের সাহায্যে ক্যাপ ফুটো করে কেটে আক্রান্ত দাঁতের রুট ক্যানেল করে নিতে হবে।
২৩। মনে রাখবেন, দাঁত স্কেলিং করলে দাঁতের মাড়ি সুস্থ ও সবল থাকে।
২৪। অনেকের ধারণা স্কেলিং করলে দাঁতের গোড়া আলগা হয়ে যায়। আসলে ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। বরং দাঁতের গোড়ার পাথর তা দাঁতকে মাড়ি থেকে আলগা করতে থাকে এবং দীর্ঘদিন একরকম পাথর জমতে থাকলে মাড়ির প্রদাহ জনিত রোগ হয়।
২৫। আপনার ভাঙ্গা দাঁত বা দাঁতের গোড়া ব্যথা না করলে ও ফেলে দিন নতুবা দীর্ঘদিন এ অবস্থা থাকলে মারাত্মক রোগ যেমন_ চোয়ালে সিস্ট, টিউমার এমনকি ক্যান্সার রোগ সৃষ্টি করতে থাকে।
২৬। দাঁত তোলার আগে রোগীর রক্তচাপ (ব্লাড প্রেসার) হৃদরোগ (হার্ট ডিজিজ), জন্মগত হৃদরোগ, প্রোস্থেটিক বডি পার্টস, ডায়াবেটিস, এন্ডোকার্ডাইটিস ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত হতে হবে।
কিছু রোগ থাকলে দাঁত তোলার ১ ঘন্টা আগে রোগীকে প্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক ড্রাগ খাওয়াতে হবে যাতে হৃদরোগের ঝুকি কম থাকে। মনে রাখবেন এন্টিবায়োটিক খেলে দাঁতের ক্ষত জলদি শুকায় না।
দাঁত তুলতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এন্টিবায়োটিক লাগে না। কিছু রোগের ক্ষেত্রে আগে প্রতিষেধক এন্টিবায়োটিক ছাড়া দাঁত তোলা নিষেধ।
২৭। দাঁত তোলার আগে ব্যথানাশক ঔষধ খেয়ে নিতে পারেন। তাহলে পরে আর ঝামেলা হবে না। ব্যাথা না করলে ব্যাথানাশক ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
২৮। দাঁত তোলার পর অন্তত ২৪ ঘন্টা গরম ও শক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। দাঁত তোলার পর ঘণ্টা খানেক পর প্রেশার প্যাক এর গজ ফেলে দেবেন। ২৪ ঘন্টা ঠাণ্ডা ও পাতলা খাবার খেতে হবে।
২৯। গজ ফেলে দেয়ার পর শুকনো তুলো ব্যাবহার করবেন না। তাহলে রক্ত পড়া শুরু হতে পারে। ২৪ ঘন্টা জোরে কুলি করা বা থুথু ফেলা নিষেধ। কারন এতে দেন্টাল সকেটে জমাটবাধা রক্ত সরে গিয়ে এখানে ফাঁকা জায়গা তৈরি করতে পারে এবং সেখানে খাবার জমে ড্রাইসকেট নামক যন্ত্রনাদায়ক ইনফেকশান তৈরি করতে পারে।
৩০। দাঁত ফেলার পর আইসক্রিম খাওয়া একটি বোকামী। কারন আইসক্রিম এর চিনি জমাটবাঁধা রক্তের সাথে মিশে ব্যাক্টেরিয়ার উৎকৃষ্ট খাবার হতে পারে। এতে ইনফেকশান হওয়ার সুযোগ বেশী থাকে।
৩২। বাচ্চাকে চকলেট জাতীয় খাবার খেতে বারণ করা উচিত। এগুলো দাঁতের ক্ষয়রোগ সৃষ্টি করে।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/DrS-MSadique-105600987900812
লেখক
ডা: এস.এম.ছাদিক
বি ডি এস (ডি ইউ)
এম পি এইচ (অন কোর্স)
পি জি টি (ওরাল এন্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারী)
ঢাকা ডেন্টাল কলেজ এন্ড হসপিটাল
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/DrS-MSadique-105600987900812