পিত্তপাথুরী বা পিত্তথলির পাথর বা পিত্তাশয় পাথর (ইংরেজি: Gallstone) হলো পিত্তাশয়ের একটি রোগ যাতে মানুষের পিত্তাশয়ে পাথর জমা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি কোলেলিথিয়াসিস (Cholelithiasis) নামে পরিচিত
পিত্তথলি কি ?
পিত্তথলি বা গলব্লাডার লিভারের সাথে সংশ্লিষ্ট পিত্তরস সম্পর্কিত তন্ত্রের একটি অঙ্গ। দেখতে একটি ছোট্ট থলির মতো। লিভারের ডান দিকের অংশের ঠিক নিচে এর অবস্থান।লিভার থেকে নির্গত বাইল বা পিত্ত সাময়িকভাবে পিত্তথলিতে জমা থাকে। হজম ক্রিয়ার প্রয়োজনমতো পিত্তথলির পিত্ত আবার পিত্তনালীর মাধ্যমে খাদ্যনালীতে নির্গত হয়। গলব্লাডার পিত্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। এই পিত্ত আমাদের হজমসহ খাদ্যনালীর অন্যান্য কাজে সহায়তা করে থাকে।
- গলব্লাডারের সাধারণ কয়েকটি অসুখের মধ্যে গলব্লাডারের পাথর অন্যতম।গলব্লাডারের ইনফেকশন(Cholecystitis)অনেক ক্ষেত্রে দায়ী পিত্তথলির পাথরের জন্য।
পিত্তথলির পাথর কাদের হয় বেশি?
স্থূল ও ওজনাধিক্য ব্যক্তিদের পিত্তথলিতে পাথর বেশি হতে দেখা যায়। পুরুষদের তুলনায় নারীদের এই প্রবণতা বেশি। এ ছাড়া চল্লিশোর্ধ্ব বয়স, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাবার অভ্যাস, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদি এই ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। মনে রাখবেন,,,শিশুদেরও হতে পারে।আমি এরকম দুইজনের অপারেশন করেছি।
গলব্লাডারে পাথরের উপসর্গ বা কীভাবে লক্ষণ বুঝবেন পিত্তথলিতে পাথর
প্রায় ৮০% ক্ষেত্রেই গলব্লাডারের পাথর উপসর্গবিহীন থাকতে পারে।বাকিদের ক্ষেত্রে : -
পেটের ডান দিকের ওপরিভাগে তীব্র ব্যথা, ওই ব্যথা পিঠের দিকেও ছড়িয়ে ডান কাঁধ পর্যন্ত আসতে পারে। এই ব্যথা হঠাৎ করে শুরু হয়ে কিছুক্ষণ পরে কমেও যেতে পারে অথবা সব সময় অল্প ব্যথা অনুভব হতে পারে। বেশির ভাগ রোগী ভারি খাবার, যেমন তেল জাতীয় খাবার খাওয়ার পর এই ধরনের ব্যথা অনুভব করেন।
- বমি হয় বা বমিভাব হতে পারে।
- সাধারণত অল্প জ্বর হয়ে থাকে।
কিভাবে পিত্তথলির পাথর বা এই রোগ নির্ণয় করা যায়
শুধুমাত্র একটা আলট্রাসাউন্ড করলেই তাতে গলব্লাডারের যে কোন রোগ ডায়াগনোসিস করা যায়।যেমন :
গলব্লাডারের পাথর, *গলব্লাডারের দেয়ালের অবস্থা, *গলব্লাডারের পুঁজ, কোনো চাকা এবং *টিউমার বা পলিপ ইত্যাদি অতি সহজে নিরূপণ করা যায়। আবার সাধারণ রক্ত পরীক্ষাতেও(CBC) গলব্লাডারের ইনফেকশন হয়েছে কি না বোঝা যায়।
মনে রাখবেন, পিত্তথলির পাথরে কি সমস্যা হতে পারে
- অ্যাকিউট কোলেসিস্টাইটিস: পিত্তাশয় এর তীব্র প্রদাহ হয়।
- পিত্তথলিতে পুঁজ তৈরি হয়(এম্পাইমা)
- পিত্তথলি গ্যাংরিন বা পচে যাওয়া বা পরে ফুটো হয়ে পেটে পিত্তরস ছড়িয়ে পড়া।
- পিত্তথলির পাথর পিত্তনালিতে চলে যাওয়া(পিত্তনালির পাথর)যার কারনে পিত্তরসের প্রবাহে বাধা দেয় ফলে রক্তে বিলিরুবিন এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যায় এবং জন্ডিস হয়, ব্যথা হয়। এই ধরনের জন্ডিসকে অবস্ট্রাক্টিভ জন্ডিস বলে।
- অ্যাকিউট প্যানক্রিয়েটাইটিস: পাথর অনেকসময় পিত্তনালী বেয়ে নিচের দিকে ডিউওডেনামের অ্যাম্পুলা অব ভ্যাটার নামক অংশে যেখানে পিত্তনালী উন্মুক্ত হয় সেখানে আটকে যায় এবং পিত্তরস ও অগ্ন্যাশয় নিঃসৃত উৎসেচকের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে ফলে উক্ত উৎসেচকগুলো অগ্নাশয়ের কোষকে ধ্বংস করতে শুরু করে এবং তীব্র প্রদাহ সৃষ্টি করে।
- পিত্তাশয় ক্যান্সার : পিত্তাশয় ক্যান্সার দুর্লভ হলেও প্রায় ৯৫% ক্ষেত্রে এটি পিত্তপাথরের সাথে সম্পর্কিত।
পিত্তথলির পাথর চিকিৎসা কী?
এক কথায় পিত্তথলি অপারেশন করে ফেলে দেওয়া, কিভাবে ??
এই অপারেশন সাধারণত দুইভাবে করা যায়¬
ল্যাপারোস্কপিক কলিসিসটেকটমিঃ প্রথাগত পদ্ধতির মতো পেট না কেটে ল্যাপারোস্কপের মাধ্যমে গলব্লাডারসহ পাথর বের করা হয়। সুবিধা কি ?? বর্তমানে এই পদ্ধতিই বেশি পছন্দনীয়। রোগী সাধারণত অপারেশনের দ্বিতীয় দিনই বাড়ি চলে যেতে পারেন এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে অংশগ্রহণ করতে পারেন। আরেকটা হলো ওপেন কলিসিসটেকটমি বা পেট কেটে পিত্তথলির অপারেশন।এটার সমস্যা হল, অনেকদিন কাটা যায়গায় ব্যাথা থাকে, ৩/৪ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়।
মনে রাখবেন :
- গলব্লাডারের ক্যান্সারের প্রায় ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে পাথরের কারনে হয়ে থাকে।
- অ্যাকিউট প্যানক্রিয়েটাইটিস বা অগ্নাশয়ের ইনফেকশন আমাদের দেশে ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে এই পাথরের কারনেই হয়ে থাকে, যা পেটের সবচেয়ে জটিল ইনফেকশন ।
- কোন মেডিসিন বা হোমিওপ্যাথিতে পাথর গলে না, আসল মেকানিশম নিচের ছবিতেই আছে, পাথর যদি খুব ছোট থাকে তা নিজে নিজেই পিত্তনালি দিয়ে বের হয়ে যায়, এগুলো কোন মেডিসিন এ গলে না।
- ব্যথা হলেই এখন অপারেশন করা যায়, এবং ল্যাপারোস্কির মাধ্যমেই।
- অনেকেই বলে পিত্তথলি ফেলে দিলে ভয়ানক ক্ষতি হয়, আসলে কথাটি একদম ভুল, খাবার হজমের সাথে পিত্তথলির কোন সম্পর্ক নেই।কারো কারো কিছুদিন পাতলা বা নরম পায়খানা হতে পারে যা আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়(Ref: Mayo clinic, USA)
লেখক
ডাঃ মোঃ মাজেদুল ইসলাম
এমবিবিএস, এফসিপিএস (সার্জারি)
জেনারেল, কোলোরেক্টাল এবং ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন।
সহকারী অধ্যাপক ,মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মানিকগঞ্জ।
চেম্বার:
ডেলটা কেয়ার হাসপাতাল লি.
মিরপুর কেন্দ্রীয় মসজিদ কমপ্লেক্স, মিরপুর ১১
সিরিয়ালের জন্য : 02-58055111-15, 01407-075714,০১৭১২১২৭৫৭৩
(মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ ঘটিকা থেকে ১০ ঘটিকা )
www.facebook.com/emonsurgeon