আমরা যখন রোগীদের সমস্যা শুনে ঔষধ লিখি তখন অনেক ঔষধ থাকে খালিপেটে খাওয়ার আবার অনেক ঔষধ থাকে ভরাপেটে খাওয়ার জন্য।
আজকাল অনেক চিকিৎসক ই আছেন রোগী কে সুন্দর করে প্রেস্ক্রিপশন বুঝিয়ে বলে দেন।এতে রোগী যেমন রোগ সম্পর্কে সচেতন হয় তেমনি ঔষধ গুলো বুঝে নিলে চিকিৎসক এর নির্দেশনা মেনে খেতে পারে।
পক্ষান্তরে অনেক চিকিৎসক আছেন, হয়তো সময়ের অভাবে রোগী কে বুঝিয়ে বলেন না।এমনকি অনেক চিকিৎসক কে দেখেছি ঔষধের সঠিক নির্দেশনাও লিখতে ভুলে যায়,ব্যাস্ততার জন্য !!!
যাই হোক,সবার জানার জন্য এবং জানা থাকলে রোগী নিজেও সচেতন হতে পারবে এই কারনে নিচে কিছু ঔষধের জানা-অজানা তথ্য তুলে ধরলাম।
ব্যাথার ঔষধঃ
ভরাপেটে খেতে হবে।এর সাথে গ্যাসের ঔষধ খাওয়া উচিৎ। এবং বছরের পর বছর নয়,বরং ব্যাথা কিছুটা কমে গেলেই এসব ঔষধ খাওয়া বন্ধ করতে হবে,আর রেজিস্টার্ড চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া অবশ্যই খাওয়া যাবেনা।
জেনে রাখা ভালো, ব্যাথার ঔষধ খেলে কিডনির জটিলতা হতে পারে।
গ্যাসের ঔষধ এবং বমির ঔষধঃ
অধিকাংশ গ্যাসের ঔষধ খালিপেটে খেতে হয়।এটি খাওয়ার আধা ঘন্টা আগে খেতে বলা হয়,কারন এতে আগে ভাগেই পাকস্থলীতে এসিড সিক্রেশন বন্ধ রেখে পাকস্থলীর সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
বমির ঔষধ ও খালিপেটে খাওয়ার আধা ঘন্টা আগে খেতে হয়।এতে নার্ভ ব্লক হয়ে এবং গ্যাস্ট্রিক মটিলিটি কমে গিয়ে বমির উদ্রেক বন্ধ হয়।
কোলেস্টেরলের ঔষধঃ
আমি খুব কম চিকিৎসক কে এটা নিয়ে কথা বলতে দেখেছি।কখন খাবে এ ব্যাপারে কেনো যে সবাই নীরব তা আজও আমার অজানা।
এটি রাতের খাবার খাওয়ার আধা ঘন্টা আগে খালিপেটে খেতে হয়,তাহলে এবজর্বশন ভালো হয় নতুবা ঔষধের ৩০% পায়খানার সাথে বের হয়ে যায়,যা কিনা খালিপেটে ঔষধ খেলে হয়না।
থাইরয়েড হরমোনের ঔষধঃ
এটি সাধারণত খালিপেটে সকালে খেতে হয়।২ ঘন্টা আগে খাওয়া ভালো, এতে absorption হয় ৮০% এর বেশি।কিন্তু অধিকাংশ রোগী জানান ২ ঘন্টা আগে খাওয়া সম্ভব হয়না,এক্ষেত্রে মিনিমাম ১ ঘন্টা আগে খাওয়া বাধ্যতামূলক। এই সময়ে কোনো গ্যাসের ঔষধ, ডায়াবেটিস এর ঔষধ বা অন্য কোনো কিছু খাওয়া যাবেনা।
ইনহেলারঃ
ইনহেলার ব্যাবহারের পর অবশ্যই কুলি করবেন।
Vitamin-D or Cholecalciferol:
এই গ্রুপের মেডিসিন, যা আমরা ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি পূরনের জন্য ৬-৮ সপ্তাহের জন্য প্রেস্ক্রাইব করি সেটা প্রতি সপ্তাহে সকালে খালিপেটে খেতে হবে।
আয়রন ট্যাবলেট বা রক্তশূন্যতার ঔষধঃ
এই ঔষধ খালিপেটে খাওয়া উচিৎ,কারন খালিপেটে আয়রনের absorption বেশি হয়।কিন্তু অনেক রোগী জানান এতে তাদের অস্বস্তি হয়,যেমন পেট ভুটভুট বা পেট ফাপা।সেসব ক্ষেত্রে ভরা পেটে খাওয়া যেতে পারে।
আয়রন আর ক্যালসিয়ামের ট্যাবলেট এক বেলাতেই নয়ঃ
আমরা যখন রোগী কে আয়রন ক্যাপসুল দেই তখন ক্যালসিয়াম এর ঔষধ দেইনা।মনে রাখা জরুরী, আয়রন আর ক্যালসিয়াম এর ঔষধ একসাথে কখনও খাওয়া যাবেনা।
কারন ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট আয়রনের absorption এ বাধার সৃষ্টি করে।
আশা করছি উপরের আলোচনা থেকে আপনারা সবাই বুঝতে পারছেন,কেনো ঔষধ ভরা বা খালিপেটে খেতে হবে! সামনে আমি এইধরনের আরও কিছু মেডিসিন নিয়ে লিখবো। সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/DrMuhid
লেখক
ডা. মুহম্মদ মুহিদুল ইসলাম
সায়েন্টিফিক অফিসার
বিআইএইচএস হসপিটাল কোভিড-১৯ ল্যাব, ঢাকা
অনলাইন কনসালট্যান্ট ,বায়োমেড ডায়াগনস্টিক এন্ড রিসার্চ ল্যাবরেটরি
চিকিৎসা পরামর্শ নিতে এপয়েন্টমেন্ট নিন:
০১৬৮১২৫৬৩৩১
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/DrMuhid