কথায় আছে প্রতিষেধকের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। বিশেষ করে কিডনি রোগ যদি প্রাথমিকভাবে ধরা পড়ে তাহলে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারন মেনে চললে কিডনিকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা সম্ভব। এবিষয়ে একজন ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ কিডনির সুস্থতায় দারুন ভুমিকা পালন করতে পারে। কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ কিডনি রোগে ভুগছেন। এর মধ্যে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষের কিডনি প্রতিবছরই অকেজো হয়ে যাচ্ছে। আরও খারাপ খবর কিডনী রোগ যদি জটিল আকার ধারণ করে তাহলে এর চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি।
যে অভ্যাসগুলো কিডনি রোগের জন্য দায়ী:প্রস্রাব ধরে রাখা
কিডনি বিকল হওয়ার কারণগুলোর অন্যতম হলো প্রস্রাব ধরে রাখা। প্রস্রাব ধরে রাখলে তা কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে। দীর্ঘমেয়াদী প্রস্রাব ধরে রাখার অভ্যাস কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে।
পর্যাপ্ত পানি পান না করা:
দৈনিক যতটুকু পানি পান করা দরকার ততটুকু না করলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। কিডনির প্রধান কাজ শরীর থেকে বর্জ্য বের করা। কিন্তু পর্যাপ্ত পানি না করলে রক্তে দূষিত পদার্থ জমা হতে থাকে কিডনি যা ছাকতে পারে না।
ডায়বেটিস কিডনি রোগের অন্যতম কারণ:
পর্যাপ্ত পানি পান না করলে,,,গবেষণায় দেখা গেছে,, কিডনি বিকল হওয়ার অন্যতম কারণ ডায়বেটিস। যাদের ডায়বেটিস অনেক বেশি তারা প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি বিকল হওয়ার বিষয়টি টের পান না। ডায়বেটিস রোগীরা খেয়াল করুন শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিনা , বা ঘন ঘন পেশাব , রক্তশূন্যতা,অরুচি,মুখ ও শরীর ফুলে যাওয়া,শরীরে পানি জমা ও স্মৃতিশক্তির মত কোন সমস্যা।
উচ্চ রক্তচাপ:
উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে কিডনি রোগের আরেকটি কারণ। উচ্চ রক্তচাপ হৃদপিন্ড ও দেহের রক্তনালীর ক্ষতি করে । এতে কিডনির রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের কিডনি বিকল হতে ১০ থেকে ১৫ বছর লাগে। তবে অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ খুব বেশি থাকলে কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যেও কিডনি বিকল হতে পারে।
অতিরিক্ত শারীরিক শ্রম:
আপনি যখন অতিরিক্ত শারিরীক পরিশ্রম করেন তখন আপনার পেশি ভেঙে যায়। ঐ ভেঙে যাওয়া পেশিগুলো রক্তের সাথে কিডনিতে প্রবাহিত হয়। কিডনি ঐ প্রবাহকে ছাকতে পারে না। ফলে কিডনির ক্ষতি হয়।
বেশি বেশি প্রোটিন খাওয়া:
অতিরিক্ত প্রোটিন জাতীয় খাবার কিডনির ক্ষতির কারণ হতে পারে। খাদ্য তালিকায় অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনির ক্ষতি করে ।
বেশি বেশি লবণ খাওয়া:
অতিরিক্ত লবণ বা সোডিয়াম কিডনি রোগের আরেকটি কারণ । আমরা যখন অতিরিক্ত লবণ খাই এই সোডিয়াম প্রক্রিয়াজাত করা নিয়ে কিডনিকে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকতে হয় এতে কিডনির উপর প্রবল চাপ পরে। একজন মানুষের দৈনিক ৫.৮ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।
কোমল পানীয়তে ক্ষতি:
কোমল পানীয় আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের অংশ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এসব পানীয়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন মেশানো থাকে। অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরে রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। অতিরিক্ত রক্তচাপ কিডনির উপরও চাপ প্রয়োগ করে এবং কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
ব্যথানাশক ঔষধ খাওয়া:
সামান্য কোন ব্যথায় যারা ব্যথানাশক ঔষধ খাচ্ছেন তাদের জন্য খারাপ খবর। কিডনিসহ নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য ব্যথানাশক ঔষধ ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে,দীঘদিন ধরে ব্যথানাশক ঔষধের উপর নির্ভরতা কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস করে।
ধূমপানে আসক্তি:
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের মতে, ধুমপান কিডনিসহ শরীরের সব অঙ্গের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া বিভিন্ন গবেষণাতে ধূমপানের সাথে কিডনির ক্ষতির সম্পর্ক দেখানো হয়েছে।
কম ঘুমানো:
কম ঘুম কিডনি রোগের আরেকটি কারণ। রাতের ঘুম আপনার কিডনি ভাল রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক গবেষণায় দেখা যায়, দীঘদিন একটু পরপর ঘুম ভাঙার সমস্যাও কিডনি রোগের কারণ। রাতে কিডনির টিস্যু তৈরি হয়, তাই রাতের ঘুমের বিঘ্ন ঘটলে তা কিডনির ক্ষতির কারণ হতে পারে ।
চিকিৎসায় দেরি করা:
কারো যদি ডায়বেটিস,উচ্চ রক্তচাপ,স্থুলতা অথবা পরিবারের কেউ যদি কিডনি রোগে আক্রান্ত থাকার ইতিহাস থাকে তাহলে তার নিয়মিতই কিডনি পরীক্ষার প্রয়োজন। কারণ কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হলে এটার চিকিৎসায় দেরী করলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বেড়ে যেতে পারে।
ধন্যবাদ
নুসরাত জাহান
Nutrition and Diet Consultant
ইবনে সিনা ডায়াগনোস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার, কেরাণীগন্জ
মোবাইল: ০১৭৩০-৫৯৯১৭১-২
সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হসপিটাল,ওয়ারী
মোবাইল:০১৭১৮-০৪৬০৯৮
অনলাইন কাউন্সিলিং ০১৮৭-২৪৩৪৪৮১
প্রয়োজনে ক্লিক করুন নিচের ফেসবুক পেজে
www.facebook.com/trust.a.dietitian