গর্ভবতী মায়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ, স্বামী পজিটিভ কি সমস্যা হবে?
প্রতিনিয়ত আমাদের এই ধরণের প্রশ্নের মূখোমূখি হতে হয়। সাধারণ মানুষজনের মাঝে একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে যে স্বামী ও স্ত্রীর রক্ত যদি একই গ্রূপের হয় তবে এই দম্পতির সন্তান জন্মদানে সমস্যা হবে। যারা এই ধরণের ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করেন আজকের লিখনী বিশেষত তাদের জন্য।
রক্তের গ্রূপ পজিটিভ হবে নাকি নেগেটিভ হবে তা নির্ভর করছে আপনার রক্তের লোহিত কনিকায় Rh অ্যান্টিজেন আছে কি নাই তার উপর। Rh অ্যান্টিজেন হল এক বিশেষ ধরণের প্রোটিন যা রক্তের লোহিত কনিকায় বিদ্যমান। যদি Rh অ্যান্টিজেন থাকে তবে আপনার রক্তের গ্রূপ হবে পসিটিভ আর যদি রক্তের গ্রূপ নেগেটিভ হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার লোহিত কনিকায় Rh অ্যান্টিজেন নাই।
স্বামী ও স্ত্রীর রক্ত একই গ্রূপের হলে গর্ভধারণ করতে কোনও সমস্যা হয় না। কিন্তু যদি স্বামীর রক্তের গ্রূপ পজি টিভ আর স্ত্রীর রক্তের গ্রূপ নেগেটিভ হয় সেক্ষেত্রে কখনও কখনও গর্ভধারণে সমস্যা হয়। আবার ক্ষেত্র বিশেষে গর্ভধারণে কোন সমস্যা না হলেও গর্ভধারণের কিছু সময় পরই গর্ভপাতের আশঙ্কা তৈরি হয়। এ কারণে যখনই নেগেটিভ রক্তের গ্রূপের কোন গর্ভবতী মা আমাদের কাছে আসেন আমরা তার স্বামীর রক্তের গ্রূপ পসিটিভ নাকি নেগেটিভ তা চেক করতে দেই। উদ্দেশ্য হল সুস্থ গর্ভাবস্থা। স্বামী-স্ত্রী দুজনই যদি নেগেটিভ গ্রূপের হন তাতেও কোন সমস্যা হবে না।
পজি টিভ স্বামী ও নেগেটিভ স্ত্রীর প্রথম সন্তান যদি নেগেটিভ গ্রূপের হয় তাহলে কোনও প্রকার সমস্যা হয় না। বিপত্তি হয় তখন যদি প্রথম সন্তান বাবার রক্তের গ্রূপ পায় অর্থাৎ যদি পসিটিভ হয়। এই পসিটিভ রক্তের গ্রূপের গর্ভাবস্থায় সাধারণত কোন ঝামেলা হয় না। তবে এই সন্তান জন্মের সময় বাচ্চার পসিটিভ রক্ত নেগেটিভ মায়ের রক্তের সাথে মিশে যায় যা গর্ভাবস্থায় দুরুহ, যদিও ০.১% ক্ষেত্রে রক্তের এই মিশ্রণ গর্ভাবস্থায়ও হতে পারে। মায়ের নেগেটিভ রক্তের সহিত বাচ্চার পজি টিভ রক্তের এই মিশ্রণের কারণে মায়ের রক্তে এক ধরণের Antibody তৈরি হয়ে থাকে যা পরবর্তী গর্ভাবস্থাকে ঝুঁকিতে ফেলে। পরবর্তী গর্ভাবস্থার বাচ্চাটি যদি আবার ও পসিটিভ গ্রূপের হয় তবে এই Antibody দ্বিতীয় বাচ্চাটিকে নষ্ট করে দেয়। এ কারনেই প্রথম পসিটিভ সন্তান জন্মের পর পরই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে Rh Anti-D antibody নামক একটি প্রতিরোধক ইঞ্জেকশান মাকে দিতে হবে। এই প্রতিরোধক ইঞ্জেকশান মায়ের শরীরে বিদ্যমান বাচ্চার লোহিত রক্তকণিকাকে ধ্বংস করে দেয় এবং কোনও ধরণের Antibody তৈরি হতে দেয় না। ফলে পরবর্তী বাচ্চা পজি টিভ হলেও কোনও সমস্যা হয় না।
তবে নেগেটিভ মায়ের পজি টিভ বাচ্চা ডেলিভারির পর যদি Rh Anti-D antibody নামক একটি প্রতিরোধক ইঞ্জেকশান মাকে না দেয়া হয় তবে পরবর্তী পসিটিভ বাচ্চা জন্মগতভাবে রক্তশূন্যতা, জন্ডিস নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে, এমন কি গর্ভে সন্তান মারাও যেতে পারে। জন্মগত রক্তশূন্যতা ও জন্ডিস নিয়ে যে বাচ্চারা জন্ম নেয় তাদের অবশ্যই বাচ্চাদের আই সি ইউ তে ভর্তি করতে হয় এবং বাচ্চাদের শরীরের পসিটিভ রক্ত একই গ্রূপের নেগেটিভ গ্রূপ দিয়ে অথবা ও নেগেটিভ রক্ত দিয়ে পুরপুরি বদল করতে হয় যাকে এক্সচেঞ্জ ব্লাড ট্রান্সফিউশন বলে।
সত্যিই মানুষ আল্লাহ তায়ালার মহান সৃষ্টি। কোন কোন নেগেটিভ গ্রূপের মায়ের শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে একাধিক পসিটিভ গ্রূপের সন্তান ও কেউ কেউ জন্ম দিয়ে থাকেন। তাদেরকে আমরা ইমিউনোলজিকেল ননরেসপ্নডার গ্রুপের সদস্য ধরি নেই। এসব বাচ্চার তেমন কোনো সমস্যা হয় না।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/dr.hasnahossain
লেখিকা
ডাঃ হাসনা হোসেন আখী
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এমএস (অবস এন্ড গাইনী)
ট্রেইন্ড ইন ল্যাপারস্কপি এন্ড ইনফার্টিলিটি স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিদ্যা বিশেষজ্ঞ এবং ল্যাপারস্কপিক সার্জন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
নিয়মিত রোগী দেখছেন: মার্কস কনসালটেশন সেন্টার।
প্রতিদিন : বিকেল ৫ টা হতে রাত ৮ টা পর্যন্ত।
সিরিয়াল :
01729-269437.
সিরাজ মার্কেট (২য় তলা), কচুক্ষেত, ঢাকা-১২০৬। (ফুট ওভার ব্রিজের পাশে)
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/dr.hasnahossain