নারী জীবন স্বার্থক হয় মা ডাক শোনাতে। প্রতিটা মেয়েরই একটি অত্যন্ত আকাংক্ষার বিষয় হচ্ছে মা হওয়া। গর্ভধারন থেকে বাচ্চা জন্ম দেওয়া পর্যন্ত একজন মা কে অনেক চড়াই উতরাই পার হতে হয়। এমন টা কখনই নয় যে, একজন মা হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলো আর একসপ্তাহের মধ্যে মা হয়ে গেল। দশটা মাস অনেক কষ্টের পর একজন মেয়ে মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহন করতে পারে।
আজকের এই বিজ্ঞান নির্ভর সময়েও আমাদের দেশের মায়েরা অনেকটাই মান্ধাতা আমলের চিন্তা ভাবনা পোষন করে থাকেন, যা খুবই দুঃখজনক। এর মধ্যে একটা অন্যতম ভুল ধারনা হচ্ছে যে, তুমি যেদিন জানতে পারছ যে তুমি কন্সিভ করেছ, সেদিন থেকেই তোমাকে দ্বিগুণ খাবার খেতে হবে। মায়েরাও সেটা মানতে শুরু করে দেন। আপনি কন্সিভ করেছেন তারমানে কিন্তু এই নয় যে, আপনাকে শুরু থেকেই দ্বিগুণ খাবার খেতে হবে। আবার এটাও ভাববেন না যে এই সময়ে মায়ের বাড়তি যত্নের দরকার নাই। অবশ্যই বাড়তি যত্নের দরকার আছে, তবে সেটা কখনোই মাত্রাতিরিক্ত নয়।
একজন মায়ের সম্পুর্ন প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডে, স্বাভাবিকভাবেই ৯-১২ কেজি পর্যন্ত ওজন বাড়াটা স্বাভাবিক । এর বেশি হলে সেটা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় আমাদের দেশের মেয়েরা ১৫ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত ওজন বাড়িয়ে ফেলেন। যা ডেলিভারীর সময় বাচ্চা ও মা উভয়ের জন্য অনেক ঝুকিপুর্ন হয়ে ওঠে। আর কন্সিভ করার আগে থেকেই যদি আপনি একটু ওভার ওয়েট হয়ে থাকেন তাহলে তো ঝুকি আরো দ্বিগুন বেড়ে যাবে। মনে করেন আপনার উচ্চতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ওজন থাকবে ৬০ কেজি, কিন্তু আপনার আছে ৭০ কেজি। এখন আপনি কন্সিভ করলেন। ডেলিভারীর আগ পর্যন্ত আপনার ওজন আরো ২০ কেজি বেড়ে ৯০ কেজি হয়ে গেল। এখন আপনার অবস্থাটা কি হতে পারে আপনিই একটু ভেবে দেখুন। আবার আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে দেখলেন যে, বাচ্চার ওজন অনেক কম। তারমানে মাত্রারিক্ত খেয়ে শুধু আপনার ওজনই বেড়েছে কিন্তু বাচ্চার ওজন সঠিকভাবে বাড়েনি। এখন দেখা যাবে যে, অতরিক্ত ওজনের কারনে আপনার পায়ে পানি চলে আসছে, আপনি বিছানায় শুয়ে থাকলে আর উঠতে পারছেন না, সারারাত ঘুমাতে পারছেন না, ডায়াবেটিস হয়ে যাচ্ছে, বিপি বেড়ে যাচ্ছে এমন বিভিন্ন ধরনের জটিলতা যেন আপনাকে আচ্ছাদন করে রেখেছে। ফলাফল হিসাবে আপনার ডাক্তার আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছেন যে, সঠিক সময়ের আগেই সিজার করে আপনার বাচ্চা তুলে নিতে হবে। আপনি একটি আন্ডার ওয়েট প্রিম্যাচিউরড বাচ্চার জন্ম দিচ্ছেন। জন্মের পর থেকেই আপনার বাচ্চা বুকের দুধের ঘাটতিতে ভুগবে । অসুখ-বিসুখ যেন আপনার বাচ্চার সাথে খেলার সাথীরমত লেগে থাকবে।
একজন পুষ্টিবিদ আপনার টোটাল প্রেগন্যান্সি জার্নিকে তিনভাগে ভাগ করে আপনার জন্য একটা খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করে দিবেন। যেটা মেনে চল্লে সম্পুর্ন প্রেগন্যান্সি জার্নিতে আপনার নিজের ওজন যেমন ঠিক থাকবে, ঠিক তেমনি আপনার বাচ্চাও সুস্থ স্বাভাবিকভাবে সঠিক ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করবে। তাই সম্পুর্ন প্রেগন্যান্সি পিরিওডটা খুব সতর্কতার সাথে ডায়েট মেইন্টেন করুন, যেন আপনি এবং আপনার বাচ্চা দুজনেই ঝুকিমুক্ত থাকতে পারেন। প্রয়োজনে আপনি আপনার পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
পুষ্টিবিদ মোঃ ইকবাল হোসেন
চেম্বারঃ
সার্জিস্কোপ হাসপাতাল, ইউনিট-২, কাতালগঞ্জ, চট্টগ্রাম। প্রতি শুক্রবার থেকে বুধবার, সন্ধ্যা ৭ঃ০০ টা থেকে রাত ১০ঃ০০ টা পর্যন্ত।
শেভরন, প্রবর্তক মোড়, চট্টগ্রাম। প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ঃ৩০টা - ৯ঃ৩০টা পর্যন্ত।
হাটহাজারী ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম। প্রতি বুধবার বিকাল ৫ঃ০০ টা থেকে ৭ঃ৩০ টা পর্যন্ত ।
সিরিয়ালের জন্যঃ ০১৭৬৪-৭৮৬৭৫৩