গতদিনের লেখাতে বলেছিলাম যে একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর মানুষ অস্টিওপোরেসিস এর শিকার হতে পারে। বাস্তবিক চিত্রে দেখা যায় যে, মেয়েরা এই রোগে ছেলেদের চেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। কিন্তু কারো মনে কোন প্রশ্ন জাগেনি যে কেন মেয়েরা বেশি আক্রান্ত হয়। হ্যা একটু জানা দরকার যে মেয়েরা কেন বেশি অস্টিওপোরেসিস এর শিকার হয়।
আগেই বলেছি যে শরীরে যদি ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি এর ঘটতি হয় তাহলে মানুষ অস্টিওপোরেসিস এর শিকার হয় । তাহলে এখন দেখার বিষয় যে মেয়েদের এই ঘটতিটা কিভাবে হয়।
যতই মুখে চিৎকার করে বলিনা কেন যে, আমাদের সমাজে মেয়েরা সমান অধিকার নিয়ে চলে, আসল চিত্রটা তার কিছুটা উল্টা। বেশিরভাগ মেয়েরা এখনো অবহেলিত। তবে হ্যাঁ , সেদিন আর বেশি দুরে নয় যেদিন মেয়েরাও আমাদের সমাজে সমান অধিকার নিয়ে বাচবে। বর্তমান প্রজন্ম মেয়েদের অধিকার শিখতে শিখতেই বড় হচ্ছে। এখন ছেলেরাও মেয়েদের সমান অধিকার দিচ্ছে সম্মান দিচ্ছে এবং মেয়েরাও সেটা আদায় করে নিচ্ছে।
মেয়েরা সঠিক সময়ে খায় না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা অনেক দেরী করে খায়। হয়ত কাজের চাপে সেটা হয়ে ওঠেনা। তারা ভাবে একটু দেরীতে খেলে কিছু হয়না। ফলে তারা ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি এর ঘাটতিতে ভুগতে থাকেন।
ভালো খাবারের(মাছ, মাংস, ডিম , কলিজা ইত্যাদি) বেশিরভাগ অংশই তারা ছেলে মেয়ে এবং স্বামীর প্লেটে তুলে দেন আর মনে মনে বলেন যে, তোমরা খেলেই আমার খাওয়া হয়ে যাবে। আর ক্যালশিয়ামের সবচেয়ে ভাল উৎস দুধ যেন তাদের খেতেই মানা।
বাড়ির বয়স্কদের সঠিক খাদ্যভ্যাসের ধারনা না থাকার কারনেও মেয়েরা ক্যালসিয়াম ডেফিসিয়েন্সিতে ভুগেন। অনেক শ্বশুর শ্বাশুড়ি কে এখনো বলতে শোনা যায় যে, মেয়েদের আবার এতো খাওয়া কিসের? আগে বাড়ির সবাই খাবে তারপর বাড়ির বউ খাবে। এটা মোটেও ঠিক নয়। সকলকে তার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী খেতে হবে এবং সময়মত খেতে হবে ।
বররতমানে ডায়েটের নামে মেয়েরা বেশিরভাগ সময়ই না খেয়ে থাকেন বা খুব কম পরিমানে খেয়ে থাকেন। যা তাদের শরীরে ক্যালশিয়াম এবং ভিটামিন ডি এর ঘাটতি তৈরি করে।
প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডে একজন মায়ের সবচেয়ে বেশি ক্যালশিয়াম এর ঘাটতি হয়ে থাকে। বাচ্চা যখন পেটে থাকে তখন বাচ্চা, ক্যালসিয়ামসহ তার শরীর গঠনের সমস্ত উপাদান মায়ের শরীর থেকে নিয়ে থাকে। কিন্তু মা তার চাহিদা অনুযায়ী খাবার খান না। যে মা যত বেশি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তার অস্টিওপোরেসিস এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি থাকে।
শুধু প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডে নয়, বাচ্চা যখন বুকের দুধ খায় তখনও মায়ের ক্যালশিয়ামসহ সব ধরনের মিনারেলস এর ঘাটতি হতে পারে।
শারীরিক পরিশ্রমের ঘাটতির কারনেও আপনি অস্টিওপোরেসিস এর শিকার হতে পারেন। হাউজ ওয়াইফ রা সারাদিন তাদের সংসারের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন ঠিকই কিন্তু সেখানে হয়ত শারীরিক পরিশ্রমটা পর্যাপ্ত পরিমানে হয়না। আবার কর্মজীবি মেয়েরা বেশিরভাগই ডেস্কে বসা জব করেন। সেখানেও তাদের পর্যাপ্ত পরিমানে শারীরিক পরিশ্রম হয়না।
শারীরিক ব্যায়ামের অভাবে শরীরে অস্থির রক্ত প্রবাহের পরিমান কমে যায়। সেক্ষত্রে হাড়ের গঠন দুর্বল হতে থাকে।
তাই দেখা যাচ্ছে যে ছোট ছোট কিছু অভ্যাসের পরিবর্তন আর একটু সচেতনতাই পারে আপনাকে অস্টিওপোরেসিস এর থাবা থেকে মুক্ত রাখতে। বাড়ির বয়স্ক সদস্যদেরকেও এই সম্পর্কে সঠিক ধারনা দিতে হবে। প্রয়োজনে আপনার পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। সুস্থ থাকুন ভাল থাকুন।
ধন্যবাদ
পুষ্টিবিদ মোঃ ইকবাল হোসেন
পুষ্টি কর্মকর্তা চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল।