অ্যাজমা ফুসফুসের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। এলার্জি , শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, দুশ্চিন্তা, সুগন্ধি, আবহাওয়া, ডিম , দুধ, চিংড়ী, বোয়াল, ইলিশ, শিমসহ কিছু খাবার, নির্দিষ্ট ওষুধের কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। হাঁপানি রোগীদের জন্য ধুলোবালি অত্যন্ত ক্ষতিকর। গবেষণায় প্রমাণিত, যারা ছোটবেলা থেকে পুষ্টিকর খাবার খায়নি তাদের মধ্যে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি।
অ্যাজমার লক্ষণ বা উপসর্গ
বুকে আঁটসাঁট, দম খাটো অর্থাৎ ফুসফুস ভরে দম নিতে না পারা।
শ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট অনুভব করা।
বুকের ভেতর বাঁশির মতো শব্দ হওয়া।
ঘন ঘন শুষ্ক কাশি, গলার নিচের অংশ এবং দুই পাঁজরের নিচের ও মধ্যবর্তী অংশ শ্বাস নেওয়ার সময় ভেতরে ঢুকে যাওয়া, চিত হয়ে শুয়ে থাকতে না-পারা এবং ঘুম থেকে উঠে বসে থাকা, সর্দি লাগার পর শ্বাসকষ্ট অনুভব করা। এসব উপসর্গ সাধারণত রাতে বাড়ে।
হাঁপানির সাথে স্থূলতার সম্পর্ক
ওবেসিটি বা স্থূলতা অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। শরীরের ফ্যাট বিশেষ করে পেটের চর্বি ফুসফুসের ফাংশনকে সংকুচিত করার সাথে শ্বাস-প্রশ্বাসকে কঠিন করে তুলে। আমেরিকান Journal of Respiratory and Critical Care Medicine এর এক গবেষণা অনুযায়ী ১২০,০০০ মানুষের উপর গবেষণায় দেখা গেছে যাদের তলপেটে অতিরিক্ত চর্বি তারা দুর্বল ফুসফুসের অধিকারী হন।
খাবার ও প্রাকৃতিক উপায়ে হাপানী নিয়ন্ত্রণ
অ্যাজমা বা হাঁপানি পুরোপুরি ভালো হওয়ার কোনো চিকিৎসা এখনও আবিষ্কৃত হয় নি। কিছু ওষুধের মাধ্যমে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাছাড়া খুব সহজে প্রাকৃতিক উপায়েও খাবার-দাবার মেনে চলার মাধ্যমে অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
আদা ও আদা চা
গবেষকদের মতে, আদা শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে এবং শ্বাসনালীর সংকোচন রোধে সাহায্য করে। এছাড়া কাঁচা আদা লবণ দিয়ে মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যায়। আদা দিয়ে রং চা অ্যাজমা বা হাঁপানীতে খুবই কাজে দেয়।
গাজর
গাজরে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে বিটা-ক্যারোটিন যা ভিটামিন-এ হিসেবে শরীরে কনভার্ট হয় যা অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
সরিষার তেল
অ্যাজমা বা হাঁপানির আক্রমণে সরিষার তেল ও রসুন মিশিয়ে বুকে ও পিঠে ম্যাসাজ দারুণ কার্যকরী। এর ফলে শ্বাসনালীর প্যাসেজ পরিষ্কার হয় এবং স্বাভাবিক শ্বাস ফিরে পেতে সাহায্য করে। ঘরোয়া উপায়ে হাঁপানি প্রতিকারের এটি খুবই কার্যকরী পদ্ধতি।
রসুন
রসুনে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আদিকাল থেকেই রসুন ভাইরাল চিকিৎসাসহ, শ্বাসকষ্টে বহুল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাছাড়া রসুনে অ্যালিসিন রয়েছে যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। অ্যাজমা রোগীদের বেশি করে রসুন খাওয়া উচিত।
হলুদ
এটি জীবাণু ধ্বংসকারী হিসেবে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। ২০১৪ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে হলুদে থাকা curcumin উপাদান অ্যাজমা রোগীর শ্বাসনালীর প্রদাহ কমায়।
আপেল
হাঁপানির হাত থেকে ফুসফুসকে রক্ষা করার জন্য আপেলের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ব্রিটিশ গবেষণার এক ফলাফলে দেখা গেছে যারা প্রতি সপ্তাহে ২টি থেকে ৫টি আপেল নিয়মিতই খেয়েছেন তাদের মধ্য থেকে ৩২% মানুষই অ্যাজমা বা হাঁপানীর প্রকোপ থেকে নিরাপদ থেকেছেন।
মধু
অ্যাজমার চিকিৎসায় মধুর ব্যবহার বহুকাল ধরে হয়ে আসছে। প্রাকৃতিক মধুতে এমন কিছু শারীরিক উপাদান রয়েছে, যা অ্যাজমা বা হাপানীর প্রকোপ কমাতে দারুণ কাজে আসে। এক গ্লাস গরম পানিতে এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়।
ব্রকলি
গবেষকদের মতে, প্রতিদিন ১ বা ২ কাপ হাফ সিদ্ধ ব্রকলি হাঁপানী বা শ্বাসকষ্ট উপশম করে। ব্রকলিতে থাকা সালফোরাফেইন ফুসফুসের এয়ারওয়ের কোষগুলিকে সুরক্ষিত করে। ক্রুসিফেরাস ফ্যামিলির সবজি হিসেবে ব্রকলি অ্যালার্জি ও শ্বাসকষ্টের চিকিৎসায় অনন্য।
ধন্যবাদ
Nusrat Jahan
Nutrition and Diet Consultant