কনভার্সন ও ডিসোসিয়েটিভ ডিজঅর্ডার একসময়ে হিস্টেরিয়া নামেই বেশী পরিচিত ছিল। যে কোন কারনে মনের ভিতর চেপে রাখা কোন মানসিক চাপ, কষ্ট কিংবা মানসিক দ্বন্দ্ব হঠাৎ করে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক বা স্নায়বিক লক্ষণ আকারে প্রকাশ পায় তখন এই সমস্যাটিকে কনভার্সন ডিজঅর্ডার বা হিস্টেরিয়া বলে। এই রোগের জন্য ডাক্তারী পরীক্ষা করে কোন কারণ পাওয়া যায় না। অনেকেই বিশেষতঃ গ্রাম অঞ্চলে এটি জ্বীন-ভুতের আছর হিসেবে বেশী প্রচলিত। তবে বর্তমানে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত হয়েছে এটি জ্বীন-ভুতের আছর না বরং মৃদু বা নিউরোসিস জাতীয় মানসিক সমস্যা। এই রোগে ব্যক্তির মানসিক চাপ বা দ্বন্দ্বের কারনে নানান ধরনের শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়।
সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব অনুযায়ী, মানব মন সচেতন, প্রাক-সচেতন ও অবচেতন এই তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত। অবচেতন স্তরে সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন চাওয়া-পাওয়া, ইচ্ছা, ক্ষোভ, না পাওয়া, বিভিন্ন মানসিক দ্বন্দ্ব, মানসিক চাপ ও জটিলতা অবদমিত হতে থাকে। এই অবদমনকারী প্রক্রিয়া কোন কারনে দূর্বল হয়ে পড়লে, অবদমিত মানসিক চাপ, দ্বন্দ্ব বা মানসিক যন্ত্রণাগুলো সচেতন মনে চলে আসে, যার বহি:প্রকাশ হয় বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গের মাধ্যমে। এই শারীরিক উপসর্গগুলোই হিস্টেরিয়ার লক্ষণ।
লক্ষণঃ
এই রোগের লক্ষণগুলো সাধারণত নাটকীয়ভাবে উপস্থিত হয়। তবে মনোযোগ পেলে এই লক্ষণগুলোর প্রকটতা বেড়ে যায়। রুগীর যত্নকারী ব্যক্তিরা রোগের লক্ষণগুলো নিয়ে যতই বিচলিত থাকুক না কেন এই রোগীরা কিন্তু ততটা উদ্বিগ্ন হন না।
হিস্টিরিয়ার প্রধাণ লক্ষণগুলো হলো-
-বার বার খিঁচুনী হওয়া, ফিট হওয়া, জ্ঞান হারানো, হাত-পা বেঁকে যাওয়া।
-হঠাৎ করে কথা বলতে না পারা, চোখে দেখতে না পারা, কানে শুনতে না পারা।
- হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া, শরীরে ব্যাথা বা স্পর্শের অনুভূতি হ্রাস পাওয়া।
-হঠাৎ করে কোন কারন ছাড়াই শরীরের কোন অঙ্গের কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া যেমন- হাটতে না পারা, হাত দিয়ে লিখতে না পারা।
-অস্বাভাবিক আচরণ করা যেমন-পরিচিত লোককে না চেনা, কোন ঘটনা মনে করতে না পারা।
- ঢেউয়ের মতো হাত নাড়তে নাড়তে দেহে ঝাঁকুনি দিয়ে হাঁটা যাতে মনে হয়ে এই বুঝি পড়ে যাবে। পড়ে গেলেও এমনভাবে পড়ে যাবে যাতে দেহে কোন আঘাত না লাগে।
-অপরিচিত স্থানে চলে যাওয়া বা নিজের পরিচয় ভুলে যাওয়া।
চিকিৎকসাঃ হিস্টিরিয়া একটি সাধারণ ও চিকিৎসাযোগ্য মানসিক সমস্যা। সময়মতো চিকিৎসা করতে পারলে রুগী সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করেন এবং স্বাভাবিক ও সুস্থ্য জীবন যাপন করেন। এই রুগীদের প্রথমে একজন রেজিষ্টার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করতে হয়। পরীক্ষার ফলাফলে যদি কোন অস্বাভাবিকতা না পাওয়া যায় তাহলে নিশ্চিত হওয়া যায় এই সমস্যাটি হিস্টেরিয়া। এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা হলো সাইকোথেরাপী। অর্থাৎ সাইকোলজিক্যাল থিউরি ও নীতি অনুযায়ী রুগীকে চিকিৎসা করা। তবে রুগীর উদ্বেগের পরিমান খুব বেশী হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে কিছু মেডিসিন দিয়ে উদ্বেগের পরিমান কমিয়ে পরবর্তীতে সাইকোথেরাপী শুরু করতে হয়।
সমাজে হিস্টেরিয়া রুগীরা পীর, ফকির, ওঝা, কবিরাজের কাছে গিয়ে জ্বীনে-ভুতের আছরের বা বদ নজরের রুগী হিসাবে ভুল চিকিৎসা নিয়ে তাদের অবস্থা আরোও খারাপ হচ্ছে। এই ধরনের রুগীদের সঠিক মনোচিকিৎসার আওতায় আনার জন্য সকলে মিলে কাজ করলে রুগী সহ অভিভাবকের যন্ত্রনা দ্রুত লাঘব হবে। তাই এই ধরনের রুগীদের চিহ্নিত করে দ্রুত মনোবৈজ্ঞানিক চিকিৎসার আওতায় আনা প্রয়োজন।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/jianur.kabir
লেখকঃ
জিয়ানুর কবির
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিষ্ট
বি-এস.সি (অনার্স), সাইকোলজি
পিজিটি (সাইকোথেরাপি)
এম.এস ও এম.ফিল (ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি)।
কল্যাণ মানসিক হাসপাতাল
দক্ষিণ কল্যানপুর,মিরপুর রোড, ঢাকা
ফোন নম্বর:০১৭৪৮৭৮৭৮২৩
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/jianur.kabir