কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কবিতায়,
'সখী, ভাবনা কাহারে বলে।
সখী,যাতনা কাহারে বলে।
তোমরা যে বলো দিবস- রজনী
' ভালোবাস' 'ভালোবাসা '-
সখী, ভালোবাসা কারে কয়!
সে কি কেবল যাতনাময়।
সে কি কেবলই চোখের জল?
সে কি কেবলই দুখের শ্বাস?
লোকে তবে করে কী সুখেরই তরে এমন দুখের আশ'।
মনস্তত্ত্বে, ভালোবাসা এক ধরনের আবেগ। ভালোবাসার প্রক্রিয়াগুলোকে নারী ও পুরুষের ভালোবাসার সাড়া প্রদানের উপর ভিত্তি করে আলাদা বললেও তাদের মধ্যে পার্থক্য কিন্তু খুবই সামান্য। ভালোবাসা ও মোহ নিয়ে এক সমীক্ষা পরিচালনা করেন মনোবিজ্ঞানী রবিন (১৯৭৩)। তিনি দেখান যে, পুরুষ মহিলার আগে প্রেমে পড়ে, আর মহিলারা প্রেমে পড়ে পরলেও প্রেম থেকে আগে বের হতে পারে। অর্থাৎ মহিলারা প্রেমে দেরীতে পরলেও আগে বের হয়ে আসতে পারে। আর ছেলেরা প্রেমে তাড়াতাড়ি পড়লেও বের হতে সময় লাগে। তবে মহিলারা প্রেমের মোহে বেশি পড়ে। প্রেমের মোহ নিয়ে কাপলানের গবেষণায় দেখা যায়, মেয়েরা গড়ে ৫.৬ বার ও ছেলেরা গড়ে ৪.৫ বার প্রেমের মোহগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তবে প্রেম করার ক্ষেত্রে তারা একই অর্থাৎ ১.২৫ বারের কথা বলেছেন। এসব গবেষণার ভিত্তিতে, ভালোবাস কে শুধুমাত্র একটি সরল আবেগ না বলে একে জটিল আবেগ হিসাবে চিহ্নিত করা যায়, এই জটিল আবেগের সাথে জড়িয়ে আছে অনেক ধরনের অনুভুতি।
ভালোবাস কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মাসলো তার তত্ত্বে অস্তিত্ব প্রদানকারী ভালোবাসা ও নির্ভরশীল ভালোবাসা এ দু ভাগে ভাগ করেছেন। অস্তিত্ব প্রদানকারী ভালোবাসা কে ইতিবাচক ও শুধুমাএ নিজের উপর নিভরশীল ভালোবাসা হিসাবে দেখেছেন। এই ধরনের ভালোবাসার ক্ষেত্রে সঙ্গী কি করল তার উপর নির্ভর না করে নিজেকে বিকশিত করেন এবং নির্ভরশীল ভালোবাসা হলো নেতিবাচক ও চাহিদার জন্য সঙ্গীর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া । সমাজ মনোবিজ্ঞানী স্টেনবার্গ তার তত্ত্বে, ভালোবাসার তিনটি বৈশিষ্টের কথা বলেছেন, এগুলো হলো অন্তরঙ্গতা, তীব্য অনুভূতি (প্যাশন) এবং দায়বদ্ধতা। সম্পর্কে অন্তরঙ্গতার তৈরি হয় আবেগীয় সহায়তা আদান প্রদান ও ভালোবাসার মানুষটির চাহিদার প্রতি সন্মান দেখানোর মাধ্যমে। সম্পর্কে অন্তরঙ্গতার মাধ্যমে ভালোবাসার মানুষটির ব্যক্তিগত উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্যাশন হলো, তীব্র আবেগীয় অনুভূতি। এই ধরনের অনুভূতির মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের যৌন চাহিদা, আত্মতুষ্টি ও আত্মমর্যাদা পুরন করতে চায়। এই ধরনের আবেগের পরিনতি ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনেরই হতে পারে।
আর দায়বদ্ধতা (কমিটমেন্ট) হলো সব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে, সঙ্গীর সাথে ভালোবাসার সম্পর্কটি চালিয়ে যাওয়া। এই তিনটি বিষয়ের কোনটি না থাকা মানে আপনী ভালোবাসাহীন জীবন-যাপন করছেন। ফ্রয়েডের মতে, লিঙ্গকামস্তরে প্রবেশ করে ব্যক্তির যৌনতা বা লিবিডো পরিপূর্নতা পায়। এ সময়ে কিশোর- কিশোরীদের মধ্যে প্রচন্ড যৌন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, কেউ কেউ সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষিত হলেও বেশিরভাগ লোক বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষিত হয় এবং একে অন্যকে ভালোবাসতে থাকে। পিয়ার ও বোডস্কি মনে করেন, ভালোবাসা হলো একে অন্যের প্রতি নির্ভরশীলতা। ভালোবাসায় একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও যত্ন নেওয়ার ইচ্ছা না থাকলে সে ভালোবাসাকে স্বাস্থ্যবান ভালোবাসা না বলে আসক্তিমুলক ভালোবাসা বলা যায়। আসক্তিমুলক ভালোবাসা হলো অ্যালকোহল বা নেশা দ্রব্যের প্রতি মোহের মত ভালোবাসা।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/jianur.kabir
লেখকঃ
জিয়ানুর কবির
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিষ্ট
বি-এস.সি (অনার্স), সাইকোলজি
পিজিটি (সাইকোথেরাপি)
এম.এস ও এম.ফিল (ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি)।
কল্যাণ মানসিক হাসপাতাল
দক্ষিণ কল্যানপুর,মিরপুর রোড, ঢাকা
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/jianur.kabir