এখনকার ১০০ জন মানুষের মধ্যে ৯৯ জন মানুষ স্ট্রেসে ভোগে। মজার ব্যাপার এই বিষয়টিকে মানুষ একেবারেই অবহেলা করেন। অথচ এর ভয়াবহতার একটি শব্দ আমার কাছে আছে, সেটি হলো – 'Stress is the mother of disease.
বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও আমার অভিজ্ঞতা তাই বলে। তাই এতো বড়ো সমস্যাকে অবহেলা না করে চলুন জেনে নেই কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন। আমি একজন ডায়েটিশিয়ান অবশ্যই খাবারের বিষয় সর্বপ্রথম তুলে ধরবো। কারণ, Eating Disorder কিন্তু এই স্ট্রেস থেকেই হয়ে থাকে।
দুধ
দুধ ভিটামিন-ডি এর একটি দুর্দান্ত উৎস যা সুখ বাড়িয়ে তোলে বলে মনে করা হয়। শিশুদের জন্য লন্ডনের ইউসিএল ইনস্টিটিউটের ৫০ বছরের গবেষণায় দেখা গেছে যে ভিটামিন-ডি কম থাকার কারণে পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে আতঙ্ক ও হতাশার ঝুঁকি বেশি কাজ করে। ভিটামিন-ডি পেতে হলেও দুধ নিয়ম করে গ্রহণ করুন।শোবার সময় স্ট্রেস বাস্টার হল উষ্ণ দুধ। এছাড়াও গবেষণা দেখায় যে, দুধের ক্যালসিয়াম উদ্বেগ এবং মেজাজকে ভালো রাখে। ডায়েটিশিয়ানরা সাধারণত স্কিম বা কম ফ্যাটযুক্ত দুধের পরামর্শ দেন। আজ থেকে আর দুধ বাদ দিয়েন না!
বীজ
ফ্ল্যাকসিড, কুমড়োর বীজ এবং সূর্যমুখী বীজ হল ম্যাগনেসিয়ামের দুর্দান্ত উৎস।ম্যাগনেসিয়াম হতাশা, অবসন্নতা এবং বিরক্তি দূর করতে সাহায্য করে। তাই এ খাবারগুলো নিয়মিতো রাখার চেষ্টা করবেন।
কাজু বাদাম
এক মুঠো কাজু বাদাম প্রতিদিনের জিংকের প্রস্তাবিত মানের ১৫% পূরণ করে ।জিংক একটি প্রয়োজনীয় খনিজ যা স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। গবেষকরা সনাক্ত করেছেন যে, স্ট্রেস যাদের আছে তাদের শরীরে জিংকের অভাব রয়েছে। দস্তা মুডকে প্রভাবিত করে শরীরের উপর প্রভাব ফেলে। জিংক এর একটি খুবই ভালো উৎস কাজু বাদাম। তাই এক মুঠো কাজু বাদাম খাবেন কিন্তু।
ভিটামিন সি
গবেষণায় দেখা গেছে যে, উচ্চ মাত্রার ভিটামিন-সি স্ট্রেসের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। পাকিস্তান জার্নাল অফ বায়োলজিকাল সায়েন্সে ২০১৫ সালের জানুয়ারী তে প্রকাশিত একটি ডাবল-ব্লাইন্ড স্টাডি জানিয়েছে যে, ভিটামিন-সি প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম গ্রহণকারী অংশগ্রহণকারীদের স্ট্রেসের মাত্রা হ্রাস হয়েছে। পাকিস্তান জার্নাল অফ বায়োলজিকাল সায়েন্সে ২০১৬ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় এসেছে যে, ভিটামিন-সি হতাশার মাত্রা উল্লেখযোগ্য পরিমানে হ্রাস করে।লেবু, কমলা, সজনে পাতা, কাঁচামরিচ, আমলকি ইত্যাদি প্রতিদিন অবশ্যই খাবেন।হতাশা দূর করতে হবে তো!
সবুজ শাকসবজি
পিজা বার্গার লোভনীয়, তবে তার পরিবর্তে যদি আপনি সবুজ খাবার গ্রহণ করেন তবে হয়ে যাবেন স্ট্রেসবিহীন। একাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটিক্স বলে – সবুজ শাক-সবজিতে ফোলেট থাকে, যা ডোপামিন তৈরি করে মস্তিষ্কে এক মজাদার রাসায়নিক উপাদান তৈরি করে, যেটি আপনাকে শান্ত রাখতে সহায়তা করবে।জার্নাল অফ এফেক্টিভ ডিসঅর্ডারগুলিতে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা সবচেয়ে বেশি ফোলেট গ্রহণ করেন তাদের মধ্যে হতাশার লক্ষণগুলির ঝুঁকি কম থাকে। নিউজিল্যান্ডের ওটাগো ইউনিভার্সিটির আরেকটি গবেষণায় আবিষ্কার করা হয়েছে যে, কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা সবুজ শাকসবজী গ্রহণ করে থাকে তারা অন্যদের চেয়ে শান্ত, সুখী এবং আরও শক্তিশালী বোধ করে।
ডার্ক চকলেট
অনেকর ধারণা চকলেট মানেই ক্ষতিকর।কিন্তু মানসিক চাপ কমানোর অসাধারণ খাবার হচ্ছে ডার্ক চকলেট।কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে, ডার্ক চকলেট খেলে ফিল-গুড ইফেক্ট বৃদ্ধি পায়, অর্থাৎ সুখের অনুভূতি বাড়ে। ২০১৭ সালের একটি গবেষণামতে, প্রতিদিন ২০ গ্রাম ডার্ক চকলেট খেলে হার্ট ও রক্তনালির স্বাস্থ্যের ওপর উপকারী প্রভাব পড়তে পরে।তাই পরিমান করে একটু ডার্ক চকলেট আপনার সুখের অনুভূতি বাড়াতে পারে। তবে এক্ষেত্রে যে চকোলেটে ৭০ শতাংশ অথবা তার বেশি কোকো থাকে, সেটাই বেছে নিন। তবে অতিরিক্ত চকলেট খাওয়া থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
দই
আপনি যদি ঘন ঘন অ্যাংজাইটি বা উদ্বেগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে আপনার দৈনিক ডায়েটে ইয়োগার্ট নিয়ে আসুন।মিষ্টিতে ভরপুর দই নয়।টক মিষ্টি দইতে বোঝানো হয়েছে।সাম্প্রতিক এক সমীক্ষার ফলাফল থেকে জানা যাচ্ছে, কেউ যদি টানা চার সপ্তাহ দিনে দুবার ইয়োগার্ট খায়, তার মস্তিষ্ক অনেক বেশি কাজ করে।তাই মন খারাপের দিনগুলতো একটু দই মুখে দিয়ে দিন।
এছাড়াও –
সঠিক ডায়েট অনুসরণ করে খান।
ক্যাফিন এবং চিনি হ্রাস করুন।
সিগারেট, অ্যালকোহল এবং অন্যান্য ড্রাগ এড়িয়ে চলুন।
পর্যাপ্ত ঘুমান।
কাজের বিরতি নিন।
নিয়ম করে প্রতিদিন গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন।
সমস্যার সমাধান খুঁজুন।
নিজেকে বিরতি দিন।
ইতিবাচক দিক যেকোনো পরিস্থিতিতে দেখুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি যানজটে আটকে থাকেন তবে একা সময় উপভোগ করুন।
আপনাকে মানসিক চাপ দেয় এমন লোকদের এড়িয়ে চলুন।
আপনাকে বিরক্ত করা বা ক্রস করতে পারে এমন বিষয়গুলি এড়িয়ে চলুন।
আপনার সময় সঠিকভাবে পরিচালনা করুন এবং সামনের দিকের পরিকল্পনা করুন।
সবশেষে বলবো সুখি হতে পয়সা লাগে না। আবার অসুখে পড়লে এই কথা উল্টে যায়।কারণ, তখন টাকা ছাড়া উপায় থাকেনা। আবার টাকা থাকলেও যে বাঁচবেন তারও কোনো গ্যারান্টি দিতে কেউ পারবেনা। তাই সাবধান থাকুন, ভালো থাকুন।
লেখক
পুষ্টিবিদ সিরাজাম মুনিরা
কনসালটেন্ট ডায়েটিশিয়ান
ইবনেসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল