মৌলিকে আজ পরীর মত সুন্দরী লাগছে।আজ তার বিয়ে।পরিবারের একমাত্র মেয়ের বিয়ে।ধুমধাম ত হবেই।চারিদিকে উৎসব, আনন্দ,কচিকাঁচার কোলাহল। কিন্তু মৌলির মন অস্থির,খুব অস্থির। সে মোটেও এই বিয়ের জন্য রাজি না।তার স্বপ্ন ছিল বাইরে পড়তে যাওয়ার।কিন্তু বাবা-মার কড়া শাসন আর চাকরির অনিশ্চয়তা সব মিলে সে বাধ্য হয়েছে।আজ সবার মুখে হাসি আর ধরে না।খুব রাগ হচ্ছে তার।নিচে খুব চিল্লাচিল্লি হচ্ছে বর এসেছে।সে গম্ভীর মুখে বসে রইল।সবাই বর আর কনের সাথে হুড়োহুড়ি করে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল।কিন্তু সে পাথরের মূর্তির মত বসে রইল।অবশেষে শেষ হল অনুষ্ঠান।বাসর রাতে তেমন কোন কথা হল না।
সকালে ঘুম ভেংগে উঠে ফ্রেশ হয়ে সবার সাথে দেখা করতে গেল।যেতেই শুরু হল ননদ আর দেবরদের খুনসুটি। সে ভীষণ বিরক্ত হয়ে রুমে চলে গেল।সারাদিন সবার সাথে টুকটাক কথা আর কাজ করে চলে গেল।বিকালে এক আত্মীয় এলেন নতুন বউকে দেখতে।শাশুড়ি শাড়ি পরতে বললেও সে পরল না।খুব বকাবকি করলেন এই নিয়ে শাশুড়ি।কেমন মায়ের মেয়ে,মা কি কিছু শিখায়নি এইসব।রাতে তার স্বামী বাসায় ফিরতেই শাশুড়ি অভিযোগের ঝাপি খুলে বসলেন তার বিরুদ্ধে।সে কিছু না বলে চুপচাপ শুনে গেল।পরদিন সকালে তার এক বান্ধবী ফোন দিল তার খোঁজ নেয়ার জন্য।সে ফোনটা ধরল না।চুপচাপ হয়ে রইল।রাতেও কিছু খেল না।এদিকে শাশুড়ির বকবক বেড়েই চলছে।রাতে তার একফোঁটা ঘুম ও হল না।
ধীরে ধীরে তার ভিতর বাড়তে লাগল হতাশা।কোন কাজে তার মন বসে না,কারও সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করেনা।ঘুম হয়না,খাওয়ার রুচি নাই।ওজন কমে যেতে লাগল।এইভাবে প্রায় ১মাস যাওয়ার পর সবার নজরে পরল ব্যাপারটা।এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হল একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ এর কাছে।তার রোগ ডায়াগনোসিস হল ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা।
বিষন্নতা একটি মানসিক রোগ। কিছু ভালো লাগেনা, কোনো আনন্দ নেই, কাজে আগ্রহ নেই, ঘুম-খাওয়ার সমস্যা, বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করে না ইত্যাদি নানা সমস্যা নিয়ে আসতে পারে বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন।আমরা জানি যে, বিষন্নতা আত্মহত্যার বড় একটা কারন। বিষন্নতা একটা মানসিক রোগ এবং এর বিজ্ঞান সম্মত চিকিৎসা রয়েছে।
কারন :
অনেক সময় বিষন্নতার আপাত: কোনো কারন খুঁজে পাওয়া যায় না তখন একে বলে ভেতর থেকে সৃষ্টি হওয়া বিষন্নতা। আরেক রকম বিষন্নতা যেখানে নানারকম কারন থাকে। যেমন বিচ্ছেদ, ঘনিষ্ট জনের মৃত্যু, চাকরী না থাকা, অর্থাভাব ইত্যাদি।এটি একটি ব্যক্তির জেনেটিক মেকআপ এবং পরিবেশগত অবস্থার অনন্য সমন্বয় উপর নির্ভর করে। এর অনেক কারণ আছে:
- মস্তিষ্কের শারীরিক গঠন বা রসায়ন
- পরিবারের বিষণ্নতা ইতিহাস
- অন্যান্য রোগের ইতিহাস ( উদ্বেগ , পরে আঘাতমূলক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার )
- তীব্র, আঘাতমূলক ঘটনা (অপব্যবহার, আর্থিক সমস্যা, প্রিয়জনের প্রিয়জনের মৃত্যু)
- হরমোন পরিবর্তন (মাসিক চক্র, গর্ভাবস্থা)
- কিছু ঔষধ (ঘুমের সহায়ক, রক্তচাপ ঔষধ)
চিকিৎসা :
ডিপ্রেশনে ওষুধ খুব ভালো কাজ করে। তিন সপ্তাহ থেকে এক মাসের মধ্যে রোগের ভালো উন্নতি হয়। কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি সাইকোথেরাপী প্রয়োজন হয়। চাপ মোকাবিলা করার নানা রকম কৌশল শেখানো হয় সেসনে ,তবে মনে রাখতে হবে যে, চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী হয়। কমপক্ষে এক বৎসর চিকিৎসায় লেগে থাকতে হয়। বিষণ্নতা জন্য কোনো চিকিত্সা একটি সুস্থ খাদ্য এবং নিয়মিত ঘুম সময়সূচী সঙ্গে মিলিত হওয়া উচিত। এটা সরল শব্দ হতে পারে, কিন্তু আপনার শরীরের যত্ন নেওয়ার গুরুত্ব overstated করা যাবে না।
বিষণ্নতার উপসর্গগুলি দূর করার জন্য আপনি বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। আমরা সবাই বেশি ব্যায়াম করার জন্য দাঁড়াতে পারতাম, কিন্তু ব্যায়াম হতাশার জন্য বিশেষ করে সহায়ক। এটি আপনাকে আরও ভালভাবে হ্যান্ডেল করতে সক্ষম করে এবং ব্যায়ামের সময় মুক্তিপ্রাপ্ত এন্ডারফিনগুলি আপনাকে মানসিক উন্নতি দেয়
মানসিক স্বাস্থ্যের সুবিধার পাশাপাশি শারীরিক ক্রিয়াকলাপ আপনাকে রাতে ভাল ঘুমের জন্য সাহায্য করে।
যোগব্যায়ামটি ব্যায়ামের আরও একটি অনন্য ফর্ম, কারণ এতে সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়না।
মেডিটেশন শরীরের শিথিলতার একটি অত্যন্ত কার্যকর উপায়। ফোন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে উপলব্ধ নির্দেশিত ধ্যান সহ, পাঠ্য এবং ভিডিওগুলিতে অনলাইন এবং বইগুলিতেও এটি করা সহজ।
তাই ডিপ্রেশন এর লক্ষণ অবহেলা না করে মানসিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও চিকিৎসা নিন এবং সুস্থ থাকুন।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/Dr-Fatema-Zohra-Psychiatrist-Specialist-in-Family-Medicine-293734764582169
লেখক
ডা. ফাতেমা জোহরা
MBBS(DU), MD Psychiatry (BSMMU), FMD(USTC), DHMS(BD)
মনোরোগ, যৌনরোগ ও মাদকাসক্তি নিরাময় বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক
মানসিক রোগ বিভাগ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/Dr-Fatema-Zohra-Psychiatrist-Specialist-in-Family-Medicine-293734764582169