এই সময়ে শীত বাড়ার সাথে সাথে দিনের আলো কমতে শুরু করেছে এবং বাইরে সবকিছু শীতল হয়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষ ঘর থেকে বের হতে চান না এবং বাইরে কম বের হবার কারণে অনেকেই ডিপ্রেশনের মতো লক্ষণগুলির মুখোমুখি হতে পারেন। কারও কারও ক্ষেত্রে এই লক্ষণ তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও কারও কারও ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলো বেশ কিছুদিন পর্যন্ত থাকে এবং ব্যক্তিকে অক্ষম করে ফেলে। এই সমস্যাটি Seasonal Affective Disorder বা মৌসুমি ডিপ্রেশন নামেও পরিচিত। মূলতঃ এটি একধরনের শীতকালিন ডিপ্রেশন, যা সাধারণত শীতের মাসগুলিতে বেশী হয় এবং কারও কারও ক্ষেত্রে এর প্রভাব বছরের বাকি সময়গুলিতেও থাকে। এই ব্যাধির লক্ষণগুলি ডিপ্রেশনের মতোই। এগুলি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে তীব্রতায় ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে এবং ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্ক, কাজকর্ম ও জীবন যাত্রায় মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করে।
লক্ষণ : মৌসুমি ডিপ্রেশনের অন্যতম লক্ষণগুলির হলো;
- দিনের বেশীরভাগ সময়ে মন খারাপ থাকে।
- কাজকর্মের আনন্দ ও আগ্রহ হ্রাস পায়।
- ঘুমের অসুবিধা বা অতিরিক্ত ঘুম হয়।
- ক্ষুধা ও তৃষ্ণার পরিমান বেড়ে বা কমে যেতে পারে।
- ওজন বেড়ে বা কমে যায়।
- বিরক্তি বা হতাশার অনুভূতি হয়।
- অল্পতেই ক্লান্ত লাগে, সারাদিন শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
- এবং আত্মহত্যার চিন্তা আসতে পারে।
মৌসুমি ডিপ্রেশন কমানোর জন্য কি করতে পারেন:
* যথাসম্ভব দিবালোকের এক্সপোজার নিন: গবেষণায় দেখা যায়, সূর্যের এক্সপোজারের অভাব এর কারণে মৌসুমি ডিপ্রেশন সৃষ্টি হতে পারে। তাই সূর্য়ের আলোর এক্সপোজার আপনাকে যতটা সম্ভব সতেজ হতে সহায়তা করে এবং আপনার লক্ষণগুলি হ্রাস করতে পারে। আপনি ছাদে বা বারান্দার রোদে বসে থাকতে পারেন বা দিনের আলোয় কিছুটা সময়ে হাঁটতে পারেন।
* শারীরিক এক্সারসাইজ করুন: যদিও এক্সসারসাইজের সাথে ডিপ্রেশন কমানো নিয়ে গবেষণাগুলোতে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে, তথাপি কতগুলো গবেষণা থেকে প্রমানিত, শারীরিক এক্টিভিটি বাড়ালে ব্রেনে ডোপামিন ও সিরোটনিনের পরিমান বেড়ে যায় এবং অনেকক্ষণ যাবৎ ব্রেনে থাকে। এগুলো বেড়ে গেলে ডিপ্রেশনের পরিমান কমে যায়।
* শারীরিক এক্সারসাইজ করুন: যদিও এক্সসারসাইজের সাথে ডিপ্রেশন কমানো নিয়ে গবেষণাগুলোতে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে, তথাপি কতগুলো গবেষণা থেকে প্রমানিত, শারীরিক এক্টিভিটি বাড়ালে ব্রেনে ডোপামিন ও সিরোটনিনের পরিমান বেড়ে যায় এবং অনেকক্ষণ যাবৎ ব্রেনে থাকে। এগুলো বেড়ে গেলে ডিপ্রেশনের পরিমান কমে যায়।
* পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটান: আপনার আত্মশক্তি বাড়াতে এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এড়াতে, পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে পারেন। বাচ্চাদের সাথে খেলাধূলা করুন কিংবা বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতে দিতে এক কাপ গরম চা পান করুন বা আপনার পরিবারের সাথে বোর্ড গেম খেলতে পারেন। বন্ধু এবং পরিবারের সাথে আপনার ডিপ্রেশনের সমস্যা খুলে বলুন, যাতে তারা আপনার পরিস্থিতি আরও ভালো করে বুঝতে পারেন।
* সক্রিয থাকুন : সমস্ত শীতকালে বাড়িতে একা থাকবেন না। এই মৌসুমে পরিবার বা কমিউনিটির ব্যক্তিদের সাথে সময় কাটান এবং উপভোগ করুন। স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে স্থানীয ক্লাবে যোগ দিতে পারেন, বেড়াতে যেতে পারেন বা আপনার প্রিয়জনের সাথে বিভিন্ন খেলাধুলা করতে পারেন। এছাড়াও, আপনি যদি জানেন যে, আপনি বছরের পর বছর এই সময়ে মৌসুমি ডিপ্রেশনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, তাহলে অবশ্যই অন্যের সাথে সক্রিয এবং নিবিড় থাকার জন্য শীতের আগাম কোনও সমযসূচী পরিকল্পনা করে রাখতে পারেন।
* পেশাদার সহায়তা : আপনার এর পরেও হতাশার অনুভূতি থাকলে, কোনও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের নিকট পেশাদার সহায়তা নিতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শে মেডিসিন নিতে পারেন। সাইকোলজিষ্টের কাছে সাইকোথেরাপিও নিতে পারেন। গবেষণায দেখা যায় যে, সাইকোথেরাপি (যেমন- কগনিটিভ বিহেবিয়ার থেরাপি, ডাইলেক্টিভ বিহেবিয়ার থেরাপী) মৌসুমি ডিপ্রেশনের জন্য একটি কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি । সাইকোথেরাপি মূলত সাইকোলজিক্যাল থিউরি ও প্রিন্সিপালের উপর ভিত্তি করে ব্যবহৃত একধরনের বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি। বর্তমানে অনলাইনেও পেশাদার সাইকোথেরাপি নেয়া যায়।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/ jianur.kabir
লেখকঃ
জিয়ানুর কবির
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিষ্ট
বি-এস.সি (অনার্স), সাইকোলজি
পিজিটি (সাইকোথেরাপি)
এম.এস ও এম.ফিল (ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি)।
কল্যাণ মানসিক হাসপাতাল
দক্ষিণ কল্যানপুর,মিরপুর রোড, ঢাকা
ফোন নম্বর:০১৭৪৮৭৮৭৮২৩
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/ jianur.kabir