ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় মেডিসিন ও সাইকোথেরাপী দুই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। বিষন্নতার মাত্রা অল্প হলে শুধুমাত্র সাইকোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যায়। তবে বিষন্নতার মাত্রা অনেক তীব্র হলে সাইকোথেরাপির পাশাপাশি মেডিসিন প্রয়োজন হয়। সাইকোথেরাপি হলো মনোবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি। সাধারণত বিষন্নতা চিকিৎসায় সিবিটি ও ডিবিটি এসব সাইকোলজিক্যাল থেরাপি অনেক বেশি কার্যকরী । CBT ও DBT চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে পরবর্তী পোষ্টগুলিতে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
বিষন্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা নেয়ার প্রতি আগ্রহ খুব কম থাকে, তাই এক্ষেত্রে প্রিয়জন বা পরিবারের মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন।
পরিবারের লোকেরা নিম্নের কাজগুলো করতে পারেন-
-পরিবারের ডিপ্রেশ সদস্যটিকে মনে করানো,অন্য সব রোগের মত ডিপ্রেশন একটি রোগ, তাই ওনার মন খারাপ লাগছে এবং কিছু সমস্যা হচ্ছে।
- বিষন্ন ব্যক্তিকে পরিবার থেকে আলাদা না করে সবার মধ্যে রেখে তার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে যাতে তিনি কোনভাবেই হীনমন্যতায় না ভোগেন এবং আগ্রহ নিয়ে রোগের মোকাবেলা করতে সাহস পান।
- কোনভাবেই দোষারোপ করা যাবে না কারণ ডিপ্রেশন এর জন্য আক্রান্ত ব্যক্তি কোনভাবেই দায়ী না।
-ডিপ্রেশ ব্যক্তিকে কখনো রাগারাগি বকাবকি বা সমালোচনা করবেন না। এগুলো করলে মানসিক চাপ বেড়ে গিয়ে উনার সমস্যা বাড়বে। বরং মাঝে মাঝে প্রশংসা ও ছোট ছোট ভালো আচরনের জন্য পুরস্কৃত করতে হবে।
-তাকে অলস অকর্মণ্য বলা যাবে না এতে তার মানসিক চাপ বাড়বে , মনে রাখবেন ডিপ্রেশনের জন্যই তিনি কাজকর্মে আগ্রহ পাচ্ছেন না।
-অন্যের সাফল্য হিস্ট্রি তুলে মোটিভেট করার চেষ্টা করবেন না এতে তিনি অন্যের সাথে তুলনা করবেন এবং প্রচন্ড হীনমন্যতায় ভুগবেন। ফলে ডিপ্রেশন বাড়বে।
-অনেকে বলেন যে ডিপ্রেশন কোন ব্যাপার না, নামাজ-বন্দেগি পড়লে, পবিত্র কোরান ও হাদিস পড়লে ডিপ্রেশন ঠিক হয়ে যাবে। এই কথা বললে বিষন্ন ব্যক্তি ভাববেন তিনি আসলেই এমন পাপি এগুলিও ঠিক মতো করতে পারেন না, ফলে তার ডিপ্রেশন বাড়বে। যদিও ইবাদত রিলাক্স করে কিন্তু সম্পন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি না।
-অবশ্যই তাকে কোন উপদেশ দিবেন না কারন উপদেশ টা আপনার চিন্তা থেকে আসে যেটা তার চিন্তার সাথে নাও যেতে পারে।
-বরং তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবেন, তাকে বলবেন আপনার এই সমস্যাটি একটি মানসিক রোগ যাকে ডিপ্রেশন বলে আপনার মত অনেকেই এই সমস্যায় আক্রান্ত, ডিপ্রেশনের কারণে উনার মাথায় অটোমেটিক্যালি কতগুলি নেগেটিভ চিন্তা আসছে যে কারণে ইমোশনগুলো ডিপ্রেসিভ হচ্ছে এবং কতগুলো প্রবলেমেটিক আচরণ করছেন। অবশ্যই এগুলির জন্য তিনি দায়ী না।
-তার বর্তমানের ভালো কি কি গুণাবলী আছে, কি কি পছন্দের কাজ আছে, কি কি ভালো দিক আছে সেগুলো খুজে বের করতে সহায়তা করুন।
-ব্যক্তির অতীতের পজিটিভ ঘটনাগুলো লিখতে উৎসাহিত করুন, কে কে তাকে ভালোবাসে তার তালিকা করতে বলতে পারেন, কি কারনে তাকে তারা ভালোবাসে তা বের করলে কিছু পজিটিভ চিন্তা আসবে।
-ব্যক্তির বর্তমান নেগেটিভ চিন্তা গুলো লিখতে বলতে পারেন এবং এই চিন্তা গুলো কি কারনে ঠিক না তা বলতে পারেন।
-ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে কিছু হাল্কা ব্যায়াম করা যেতে পারে।
-প্রয়োজনে প্রিয়জনকে কোন মনোবিজ্ঞানী বা মনোচিকিৎসকের নিকট সেশন নিতে উৎসাহিত করতে পারেন। এই সময়ে অনলাইনেও সেবা পাবেন।
- তবে আত্মহত্যার চিন্তা বা সংকেত থাকলে তাকে দ্রুত বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসায় আগ্রহী করে তুলুন, এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তিও লাগতে পারে।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/jianur.kabir
লেখকঃ
জিয়ানুর কবির
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিষ্ট
বি-এস.সি (অনার্স), সাইকোলজি
পিজিটি (সাইকোথেরাপি)
এম.এস ও এম.ফিল (ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি)।
কল্যাণ মানসিক হাসপাতাল
দক্ষিণ কল্যানপুর,মিরপুর রোড, ঢাকা
ফোন নম্বর:০১৭৪৮৭৮৭৮২৩
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/jianur.kabir